রাধারমণ কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি, প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস

বক্তব্য রাখছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদছবি: সংগৃহীত

বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্তের স্মৃতিবিজড়িত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে রাধারমণ দত্ত কমপ্লেক্সের জায়গা নির্ধারণের পর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। কয়েক বছর ধরেই জগন্নাথপুরের সংস্কৃতিকর্মীরা তা নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন, এবার ঢাকার এক আয়োজন থেকেও সেই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

শুক্রবার ঢাকার বাংলা একাডেমিতে ‘রাধারমণ কমপ্লেক্স নির্মাণ সময়ের দাবি’ স্লোগানে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী রাধারমণ লোকসংগীত উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। উৎসবের আয়োজন করেছে রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র। এর আগের বছরগুলোতে আয়োজনটি শিল্পকলা একাডেমিতে হলেও এবারই প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে। মঞ্চের সামনে শামিয়ানা টানিয়ে দর্শকের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘রাধারমণ কমপ্লেক্স নির্মাণের জায়গাটি ভূমিদস্যুদের এক বছরেরর জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের জন্য শঙ্কার বিষয়। ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করে কমপ্লেক্স স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। যাতে রাধারমণের স্মৃতি ও কর্ম রক্ষা করা যায়। আমরা এক লাখ স্বাক্ষর গ্রহণ করেছি, আমাদের একটাই দাবি—রাধারমণের কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হোক।’

মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের প্রবীণ কীর্তনিয়া যশোদা রানী সূত্রধর।
ছবি: দীপু মালাকার

বিশ্বজিৎ রায় তাঁর বক্তব্যে মঞ্চে উপবিষ্ট প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁদের দাবির বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাধারমণ কমপ্লেক্স স্থাপত্য নকশা মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে, সমীক্ষা হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করার জন্য ফাইলটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারব।’
২০১৫ সালে রাধারমণ দত্তের মৃত্যুশতবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জগন্নাথপুরে তিন দিনের কর্মসূচিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য এম এ মান্নান উপস্থিত ছিলেন। তখনই কেশবপুর বাজারসংলগ্ন ভূমিতে রাধারমণ দত্তের কমপ্লেক্সের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়।
বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের প্রবীণ কীর্তনিয়া যশোদা রানী সূত্রধর। সভাপতিত্ব করেন রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সভাপতি মাহমুদ সেলিম।

উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথিদের বক্তব্যের পর লোকসংগীতের আসর শুরু হয়, মঞ্চে আসেন যশোদা রানী সূত্রধর। সুনামগঞ্জের এই শিল্পী কণ্ঠে তোলেন ‘গৌর রূপ হেরিলাম গো’, এরপর দর্শকের অনুরোধে পরিবেশন করেন ‘সুখের নিশি প্রভাত হইয়া যায়’। প্রথমবারের মতো ঢাকার কোনো আয়োজনে গান পরিবেশন করেন এই শিল্পী।

এরপর সুনামগঞ্জের প্রধান দুই লোককবি রাধারমণ ও শাহ আবদুল করিমের গান পরিবেশন করেন খায়রুল ওয়াসী, আবু বকর সিদ্দীক, অণিমা মুক্তি গোমেজ, পংকজ রায়, মণিকা রানী দাশ, শুভ্রা জোয়াদ্দার, এনামুল হক, অনামিকা চন্দ কেয়া, মিতালী রায়, শিমুল নন্দী, সোহাগ বণিক শুভ, কৃষ্টি রায়, সম্পা পাল চৌধুরী, পুষ্পিতা সোম, নন্দিনী রায়, মাধুরী তালুকদার, ঈশিতা বড়ুয়া, অন্বেষা দাস, সঙ্গীতা দাশ, শাহীনা আকতার পাপিয়া।

মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিরা
ছবি: দীপু মালাকার

একক গানের পর দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করা হয়। সুমন মুন্না ও প্রাচ্য প্রত্যয় পরিবেশন করেন ‘মধুর মধুর সুরে’; জয়িতা ঘোষ দোলা ও অম্লান ঘোষ দিব্য পরিবেশন করেন ‘আমি কেন আইলাম, কেন আইলাম গো’। এরপর দলীয় গান পরিবেশন করে রাধারমণ চর্চাকারী দল ও আন্তর্জাতিক রাধারমণ একাডেমি (সুনামগঞ্জ)। প্রথম দিনের আয়োজনের শেষ ভাগে ছিল নৃত্য। ‘জলের ঘাটে দেইখা আইলাম’ গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন এবং ‘গৌর রূপে নিল নয়ন’ গানে নাচ পরিবেশন করে নিপা ও তাঁর ধামাইল দল (সুনামগঞ্জ)।
উদ্বোধনী আয়োজনে সম্মানিক অতিথি হিসেবে রামেন্দু মজুমদার ও আলোচক হিসেবে লোকসংগীত–গবেষক সুমনকুমার দাশ উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের আয়োজনে প্রতিদিন বিকেলে থাকছে গানের আসর। উৎসবটি শেষ হবে কাল রোববার।