‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’–এর আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন সুজেয় শ্যাম
‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’–এর ১৮তম আসর বসছে ১৮ অক্টোবর। ঢাকার একটি পাঁচ তরকা হোটেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ২২ বিভাগে পুরস্কৃত হবেন সংগীতের বিভিন্ন শাখার শিল্পী ও কলাকুশলীরা। এবারের আসরে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম।
‘সুস্থ সংগীতের উৎকর্ষ সাধন’ লক্ষ্য সামনে রেখে ২০০৪ সালে শুরু হয়েছিল ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’। এবারের আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে আজ মঙ্গলবার সকালে চ্যানেল আই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আয়োজন প্রসঙ্গে সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের সম্মাননা জানানোর বিষয়টি দীর্ঘ সময় ধরে চ্যানেল আই করেছে, করছে এবং ভবিষ্যতেও সম্ভবত করবে। আমরা সেদিন হয়তো থাকব না, চ্যানেল আই তা করতে থাকবে। চ্যানেল আইয়ের এই যে সামর্থ্য বা এটি যে তারা চালিয়ে যাচ্ছে, এর প্রধান চালিকা শক্তি—আমার মনে হয়—বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি তাদের আন্তরিক দায়বদ্ধতা। আমি শুরু থেকেই এই আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। সংগীতের এই পুরস্কার তারা অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে করে আসছে। সংগীতের শিল্পী ও কলাকুশলীকে সম্মানিত করার এই আয়োজনের জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’
এবারে আয়োজনে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হবে সুজেয় শ্যামকে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে থাকতে পারেননি। শেষে মুঠোফোনে কথা হয় প্রথম আলোর সঙ্গে। জানালেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে খুব একটা বাসার বাইরে যান না তিনি। ক্যানসার ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তিনি।
আজীবন সম্মাননা প্রসঙ্গ উঠতেই সুজেয় শ্যাম বললেন, ‘এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার। শেষ বয়সে এসে সংগীতের এই অসাধারণ আয়োজনে চ্যানেল আই আমাকে আজীবন সম্মাননা উপহার দিচ্ছে, এটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ, এখন আমার জীবনের শেষ সময়। একে তো ক্যানসার, তার ওপর উচ্চ রক্তচাপ। এর মধ্যে যে তারা আমাকে নির্বাচিত করেছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সংগীত নিয়ে কিন্তু বাংলাদেশে সেই অর্থে কোনো পুরস্কার নেই। তা ছাড়া এখন সংগীতের যে অবস্থা, সেই পরিপ্রেক্ষিতেও চ্যানেল আই শুদ্ধ সংগীতের প্রচার, প্রসার ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে। প্রতিদিন সকালে গানের অনুষ্ঠান করছে, প্রতিবছর তরুণ মেধাবী শিল্পীদের ধারাবাহিকভাবে তুলে আনছে, আবার শুধু সংগীতের জন্য আলাদা একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানও করছে। ব্যান্ড সংগীতের জন্য আইয়ুব বাচ্চুকে দিয়ে আলাদা একটা উৎসব করিয়েছে। বাংলা খেয়াল নিয়েও কাজ করে তারা। সবকিছু মিলিয়ে তাদের কাছ থেকে পাওয়া এই সম্মান আমার জন্য অনেক গৌরবের।’
কথায় কথায় সুজেয় শ্যাম এ-ও বললেন, ‘চ্যানেল আই তাদের যেকোনো আয়োজনে সব সময় আমাদের আন্তরিকভাবে নিমন্ত্রণ করে। কয়েক বছর ধরে তাদের ক্যানটিনে আমাদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের জন্য একটি টেবিল রাখা আছে, যেখানে বিনা পয়সায় খাবার দেয়। এটা শুধু বিনা পয়সার খাবার হিসেবে দেখছি না আমি, এটা শিল্পীদের অন্য রকম একটা সম্মান জানানো। এটা কেন বললাম, সত্যিকার অর্থে, এখন আর আমাদের কেউ ডাকে না। না ডাকতে পারলেই যেন বেঁচে যায় সবাই। সেখানে ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, পয়লা বৈশাখ, তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানে সম্মানের সঙ্গে আমাদের ডাকে। আমি নিজে চোখে দেখেছি, ফেরদৌসি আপা, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, আবদুল জব্বার—এমন কেউ নেই, যাঁদের তারা সম্মান করেনি। নাটক, সিনেমার শিল্পী এবং কলাকুশলীদেরও তারা সম্মান করে।’
চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রকল্প পরিকল্পক শহীদুল আলম সাচ্চু। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সানসিল্কের সিনিয়র ক্যাটাগরি হেড সাবিত শফিউল্লাহ।
আয়োজন নিয়ে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, ‘সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আমাদের এই “চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস”-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য। সংগীতকে ভালোবাসে না, এমন বাঙালি পাওয়া খুব কঠিন। আর চ্যানেল আইয়ের সকালটিও শুরু হয় এই সংগীতকে ঘিরেই অনুষ্ঠান ‘গান দিয়ে শুরু’র মাধ্যমে। যেখানে এক ঘণ্টা শিল্পীদের নানা গান আমরা প্রচার করে থাকি। চ্যানেল আই বরাবরই সংগীত নিয়ে কাজ করে আসছে, সামনেও এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ফরিদা পারভীন, সালাউদ্দিন আহমেদ, খুরশীদ আলম, তপন চৌধুরী, মানাম আহমেদ, শুভ্র দেব, মেহরীন, কোনাল প্রমুখ।