বিটিএসকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস গড়ল স্ট্রে কিডস

বিটিএসকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস গড়ল স্ট্রে কিডস। জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্ট

কে-পপের জগতে নতুন ইতিহাস রচনা করল স্ট্রে কিডস। কোরীয় এই বয় ব্যান্ডের সর্বশেষ অ্যালবাম ‘কার্মা’ জায়গা করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ডের অ্যালবাম চার্ট হট-২০০-এর শীর্ষে। বিলবোর্ডের অ্যালবাম চার্টে সপ্তমবারের মতো তাঁরা শীর্ষস্থান দখল করেছে। এই অর্জনের মধ্য দিয়ে তারা ছাড়িয়ে গেছে আরেক আলোচিত কোরীয় ব্যান্ড বিটিএসকে।

‘কার্মা’ স্ট্রে কিডসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম, যা এসেছে দুই বছর দুই মাস পর। এতে রয়েছে ১১টি গান। শিরোনাম ট্র্যাক ‘সেরোমনি’। অ্যালবামে সদস্যরা তাঁদের বেড়ে ওঠার গল্প বলেছেন। বলেছেন, কীভাবে তাঁরা বাইরের মতামত বা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ভেসে না গিয়ে নিজেদের পথ তৈরি করেছেন।

কী হয়েছে এবার
বিটিএস বিলবোর্ড ২০০-এর চার্টে ৬ বার শীর্ষস্থান দখল করেছিল। স্ট্রে কিডস নিজেদের সপ্তম নম্বর অ্যালবাম ‘কার্মা’ দিয়ে বিটিএসকে অতিক্রম করল। শুধু তাই নয়, এ দলটি ইতিহাসে একমাত্র ব্যান্ড, যাদের সাতটি অ্যালবামই প্রথম সপ্তাহেই চার্টের শীর্ষে থেকে আত্মপ্রকাশ করেছে। গত রোববার মর্গান ওয়ালেনের  ‘আই’ম দ্য প্রবলেম’–কে সরিয়ে শীর্ষে উঠেছে অ্যালবামটি।

স্ট্রে কিডসের সদস্যরা। জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্ট

ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
ইতিহাস গড়ার পরেই গ্রুপটি তাদের সংস্থা জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। ভক্তদের উদ্দেশে তারা বলে, ‘এটা অবিশ্বাস্য, আমরা বিস্মিত। এটি আমাদের জন্য বিশাল সম্মানের মুহূর্ত। আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই স্ট্রে (তাদের বৈশ্বিক ফ্যানডমের নাম) ও আমাদের গানকে ভালোবাসেন এমন সবাইকে।’

বিলবোর্ডে একক রেকর্ড
বিলবোর্ড জানায় স্ট্রে কিডসই এখন একমাত্র দল, যাদের সাতটি অ্যালবামই টানা নাম্বার ওয়ান লিস্টে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২২ সালে ‘অর্ডিনারি’ ও ‘ম্যাক্সিডেন্ট’, ২০২৩ সালে ‘ফাইভ-স্টার’ ও ‘রক-স্টার’ এবং ২০২৪ সালে ‘এইট’ ও ‘হোপ’ দিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। সেই ধারাবাহিকতা এবার এসেছে ‘কার্মা’।
বিলবোর্ড জানায়, গত বছর ‘হোপ’ নাম্বার ওয়ান তালিকায় জায়গা করে নিলে বিলবোর্ড জানায়, স্ট্রে কিডস বিলবোর্ডের ৬৯ বছরের ইতিহাসে প্রথম ব্যান্ড, যাদের প্রথম ছয় অ্যালবাম তালিকার শীর্ষে থেকে যাত্রা শুরু করেছে। ‘কার্মা’ তাদের আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।

স্ট্রে কিডসের সদস্যরা। জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্ট

বিক্রিতে নতুন উচ্চতায়
বিলবোর্ড ২০০ যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যালবামগুলোর তালিকা প্রকাশ করে। এটি নির্ধারণ করা হয় ইকুইভ্যালেন্ট অ্যালবাম ইউনিট দিয়ে, যা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সরাসরি অ্যালবাম বিক্রি, ট্র্যাক ইকুইভ্যালেন্ট অ্যালবাম (টিইএ) ও স্ট্রিমিং ইকুইভ্যালেন্ট অ্যালবামের (এসইএ) মাধ্যমে।

বিলবোর্ডের হিসাবে ‘ডমিনেট’ ট্যুর শুধু উত্তর আমেরিকার অংশেই আয় করেছে ৭৬.২ মিলিয়ন ডলার, যা কে-পপ ইতিহাসে উত্তর আমেরিকার মঞ্চে সর্বোচ্চ। ইউরোপ পর্বও গেছে সমান সাফল্যের সঙ্গে।

চলতি সপ্তাহে ‘কার্মা’র ৩ লাখ ১৩ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে (অথবা স্ট্রিমিং হয়েছে বা ডাউনলোড হয়েছে)। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৬ হাজার এসেছে সরাসরি অ্যালবাম বিক্রি থেকে, যেমন সিডি, ভিনাইল, ফটোবুক এডিশন ইত্যাদি থেকে। এটি স্ট্রে কিডসের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ বিক্রি।
স্ট্রিমিং থেকে এসেছে ১৬ হাজার ইউনিট। ১ হাজার ইউনিট এসেছে ট্র্যাক ডাউনলোড থেকে; এটি সিঙ্গেল কেনা বা ডাউনলোডের হিসাব।

দুই বছর পর পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম
‘কার্মা’ স্ট্রে কিডসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম, যা এসেছে দুই বছর দুই মাস পর। এতে রয়েছে ১১টি গান। শিরোনাম ট্র্যাক ‘সেরোমনি’। অ্যালবামে সদস্যরা তাঁদের বেড়ে ওঠার গল্প বলেছেন। বলেছেন, কীভাবে তাঁরা বাইরের মতামত বা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ভেসে না গিয়ে নিজেদের পথ তৈরি করেছেন।

আমরা নিজেরা গান বানাই ও গাই। ভক্তরা আমাদের শুরুর সময় থেকে যে ধাঁচের গান ভালোবাসেন, সেটাই ধরে রেখেছি। এখন লক্ষ্য হলো নতুন কিছু তৈরি করে সেটাকে আরও উন্নত করা। টুকটাক কিছু বদল হলেও আমরা আমাদের মতোই থাকব।
চ্যাংবিন

সিউলে সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাপার চ্যাংবিন বলেন, ‘শুরুর দিকে আমরা প্রায়ই ভাবতাম, আমরা যে ধরনের গান বানাচ্ছি, তা কি সঠিক পথ? কিন্তু আমাদের সদস্যদের বিশ্বাস আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গিয়েছি। আর এভাবেই আমরা বাধা পেরিয়ে এক স্বপ্নময় মুহূর্তে পৌঁছেছি।’

স্ট্রে কিডস মানেই ‘ঝাঁকুনি’
স্ট্রে কিডসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে, জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায়। বড় বড় প্রতিষ্ঠিত গ্রুপের মধ্যে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা ছিল তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আট সদস্যের এই গ্রুপের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে তাদের নিজস্ব সংগীতধারায়।

স্ট্রে কিডসের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সত্যিকার শিল্পীসত্তার প্রকাশ। জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্টের এই আট সদস্যের দল—ব্যাং চ্যান, লি নো, চাংবিন, হিউনজিন, হান, ফেলিক্স, সুংমিন ও আইএন—গত সাত বছর ধরে নিজেদের মতো করে গান বানিয়ে আসছে। দলের তিন সদস্য ব্যাং চ্যান, চাংবিন ও হান মিলে গড়ে তুলেছেন প্রযোজনা ইউনিট থ্রি রাচা, যাঁরা মূলত স্ট্রে কিডসের গান তৈরির দায়িত্বে।

ভক্তদের কাছে স্ট্রে কিডসের সংগীত পরিচিত ‘মালা-ফ্লেভারড মিউজিক’ নামে। চীনা খাবারের জনপ্রিয় ঝাল-ঝাঁজালো মসলা ‘মালা’ থেকে এ ডাকের উৎপত্তি। ‘মালা’ খেলে জিবে যেমন ঝাঁকুনি লাগে, তেমনি স্ট্রে কিডসের গানেও রয়েছে এনার্জি। তাদের সংগীতে তীব্র হিপ-হপ বেস, শক্তিশালী র‍্যাপ, বিট আর সাউন্ডের মিশ্রণ শ্রোতাদের মনে আলাদা অনুভূতি জাগায়। এই অনন্য ধরনই স্ট্রে কিডসকে কে-পপ জগতে আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

আরেকটি দিক হলো পারফরম্যান্স। দুর্দান্ত কোরিওগ্রাফি, মঞ্চে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়া আর ভিন্নধর্মী মঞ্চ প্রযোজনা তাদের কনসার্টকে অন্যদের চেয়ে  আলাদা করেছে। বিদেশি ট্যুর, সংগীত উৎসব—সবখানেই তারা প্রমাণ করেছে, এই গ্রুপ কেবল কোরিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আন্তর্জাতিক সংগীতজগতে তাদের ভক্তদের বলয় বিস্তৃত। তাই বলা যায়, স্ট্রে কিডস কেবল চার্টের শীর্ষে নয়, কে-পপ সংস্কৃতিতে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করছে।

স্ট্রে কিডসের সদস্যরা। জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্ট

‘আমরা আমাদের মতোই থাকব’
স্ট্রে কিডসের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সত্যিকার শিল্পীসত্তার প্রকাশ। জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্টের এই আট সদস্যের দল—ব্যাং চ্যান, লি নো, চাংবিন, হিউনজিন, হান, ফেলিক্স, সুংমিন ও আইএন—গত সাত বছর ধরে নিজেদের মতো করে গান বানিয়ে আসছে। দলের তিন সদস্য ব্যাং চ্যান, চাংবিন ও হান মিলে গড়ে তুলেছেন প্রযোজনা ইউনিট থ্রি রাচা, যাঁরা মূলত স্ট্রে কিডসের গান তৈরির দায়িত্বে। চাংবিন বলেন, ‘আমরা নিজেরা গান বানাই। এতে যেমন দলের নিজস্বতা ফুটে ওঠে, তেমনি আমাদের শক্তিও স্পষ্ট হয়।’ দ্য হলিউড রিপোর্টারকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারের সময় স্ট্রে কিডস তাদের রেকর্ড ভাঙা ‘ডমিনেট’ বিশ্ব সফরে ছিল। বিলবোর্ডের হিসাবে এই ট্যুর শুধু উত্তর আমেরিকার অংশেই আয় করেছে ৭৬.২ মিলিয়ন ডলার, যা কে-পপ ইতিহাসে উত্তর আমেরিকার মঞ্চে সর্বোচ্চ। ইউরোপ পর্বও গেছে সমান সাফল্যের সঙ্গে।

এই সাক্ষাৎকারে সদস্যরা কথা বলেন ‘কার্মা’ অ্যালবাম নিয়েও। নামের অর্থের মতোই অ্যালবামের মূল বার্তা—‘ভালো করলে ভালোই ফিরে আসে’। চাংবিন বলেন, ‘আমরা আসলে বলতে চেয়েছি, ভালো করলে ভালোই ফেরত আসে। সেটাই আমাদের চেষ্টা।’
অ্যালবামে হিউনজিনের পছন্দের গান ‘ব্লিপ’, আর চাংবিনের প্রিয় গান ‘ইন মাই হেড’, যা নাকি শিরোনাম গানের জন্যও বিবেচিত হয়েছিল। সাক্ষাৎকারে তাঁরা কথা বলেন আলোচিত ‘ডমিনেট’ ট্যুর নিয়েও। ফেলিক্স বললেন, ‘স্টেডিয়ামে এত মানুষকে একসঙ্গে পাওয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। অনেক কিছু শিখেছি। এবার ভক্তদের জন্য আরও চমক নিয়ে আসতে চাই।’ সুংমিনের কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ভক্তদের সান্নিধ্য। তাঁর ভাষায়, ‘এ শহর থেকে ও শহরে কত নতুন ভক্তদের দেখা পেয়েছি। তাঁদের মুখের অভিব্যক্তি থেকেই বোঝা যায়, কতটা ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।’

স্ট্রে কিডসের সদস্যরা। জেওয়াইপি এন্টারটেইনমেন্ট

গানের ধরন নিয়মিতও বদলাচ্ছে। তবে স্ট্রে কিডস নিজেদের ধাঁচ থেকে সেরে যেতে চায় না। চাংবিন বলেন, ‘আমরা নিজেরা গান বানাই ও গাই। ভক্তরা আমাদের শুরুর সময় থেকে যে ধাঁচের গান ভালোবাসেন, সেটাই ধরে রেখেছি। এখন লক্ষ্য হলো নতুন কিছু তৈরি করে সেটাকে আরও উন্নত করা। টুকটাক কিছু বদল হলেও আমরা আমাদের মতোই থাকব।’

তথ্যসূত্র: কোরিয়া টাইমস