‘হারানোর কিছু নেই, ফরিদা আপা হারাননি’
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংগীতাঙ্গনে। গতকাল শনিবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভরে উঠেছে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণায়। ফরিদা পারভীনের সঙ্গে অপ্রকাশিত এক স্মৃতি ভাগ করেছেন লালন ব্যান্ডের ভোকাল নিগার সুলতানা সুমি। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি জানান, শৈশবে ফরিদা পারভীনের সঙ্গে একই মঞ্চে গান গাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর। সেখানেই প্রথমবারের মতো লালনগীতি পরিবেশন করেছিলেন সুমি।
সুমি বলেন, ‘শৈশবে রেডিও ও টেলিভিশনে পল্লিগীতি গাইতাম। এরপর বাবার এক বন্ধুর মাধ্যমে লালনগীতির সঙ্গে পরিচিত হই। প্রথমে “তিন পাগলের হলো মেলা” গানটি শিখি। গান শেখার পরের বছরই লালন মেলা দেখতে কুষ্টিয়ায় যাই। তো কুষ্টিয়া শহরে একটা আয়োজন ছিল, যেখানে ফরিদা (পারভীন) আপা প্রধান অতিথি ছিলেন। এ আয়োজনে ছোট শিশুদের নাম লিখছিলেন একজন, আমি নিজে গিয়ে আমার নামটি লেখাই। জানতে চাওয়া হয়, কোন গান গাইব। বললাম, “তিন পাগল”। এ কথা শুনে তিনি বললেন, “মামনি, এটা ফরিদা পারভীন গাইবেন, তুমি অন্য একটা গাও।” ছোট বাচ্চা আমি; বললাম, না, এটাই গাইব। এরপর এ গানইগাই।’
সুমি আরও বলেন, ‘গানটি শেষ করার সময় ফরিদা (পারভীন) অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। যিনি আমার নাম লিখেছিলেন, তিনি গান শেষে আমায় বললেন, “ফরিদা পারভীন বলেছেন, তুমি অনেক ভালো গেয়েছ।” তখন তো এর ওজন বুঝতে পারিনি। এখন বুঝি।’
লালনের গান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব ফরিদা পারভীনকে দিয়েছেন সুমি। তাঁর কথায়, ‘লোকগীতি নিয়ে অনেকেই কাজ করেছেন, কিন্তু লালনগীতিকে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছেন ফরিদা (পারভীন) আপা। শুধু বাংলা ভাষাভাষী মানুষ নয়, অন্য ভাষার মানুষের ঘরেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বব্যাপী লালন সাঁইজির বাণী তিনিই পৌঁছে দিয়েছিলেন। শৈশবে পল্লিগীতি আর ক্ল্যাসিক্যাল গাইতাম, তাঁর গান শুনেই লালনগীতির প্রতি আকৃষ্ট হই।’
সবশেষে সুমি বলেন, ‘হারানোর কিছু নেই, ফরিদা (পারভীন) আপা হারাননি। তিনি আমাদের ভেতর ছিলেন, আছেন, থাকবেন। যত দিন বাংলা গান তথা লালনগীতি পৃথিবীতে থাকবে, ফরিদা আপাও এর সঙ্গে সব সময় থাকবেন।’