জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত গীতিকবি ও লেখক মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান তাঁর ৮০ বছরের কর্মযজ্ঞ ও নিজের লেখা বিখ্যাত বিভিন্ন গান সৃষ্টির গল্প শোনালেন যশোরের শিক্ষার্থীদের। গত মঙ্গলবার রাতে যশোরে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার ব্যতিক্রমী ‘সফল যাঁরা, কেমন তাঁরা’ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি তাঁর শৈশব, শিক্ষা ও কর্মজীবন নিয়ে জীবনের গল্প শোনান তিন ঘণ্টাব্যাপী। সেই আলোচনায় উঠে এসেছে পুরোনো দিনের চলচ্চিত্রের কাহিনি, গানের সুর ও কথা লেখার প্রেক্ষাপট, বর্তমান চলচ্চিত্রের সংকট ইত্যাদি বিষয়।
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘ছুটির ঘণ্টা’ সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রফিকউজ্জামান বলেন, ‘সেই সময় স্কুলের “বাথরুমে শিশু মৃত্যুর” খবর শুনে ঘটনাস্থল খুঁজতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বহু স্থানে ছুটেছি। এরপর একপর্যায়ে কাপ্তাইয়ে একটি স্কুল লোকেশন হিসেবে পছন্দ হলে সেখানে বাংলোয় অবস্থান নিয়ে চিত্রনাট্য লেখা হয়। বারবার স্কুলটি দেখে দেখে চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়।’
রফিকউজ্জামান জানান, ‘সেই রেললাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে, এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে...’ গানটির মধ্যবয়সী নারী হলেন তাঁর (রফিকউজ্জামান) মা সাজেদা খাতুন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে রেললাইনের পাশের যে পথ ধরে তাঁর ভাই আসাদুজ্জামান মায়ের কাছ থেকে শেষবিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন, সেই পথের দিকে তাকিয়ে সন্তানের ফিরে আসার প্রতীক্ষারত মায়ের হাহাকার, আর্তনাদ আর রক্তক্ষরণ তুলে এনেছেন ওই গানে। রেডিওতে সুবীর নন্দীর জন্য লেখা ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’ গানের কথাও শোনালেন তিনি।
গানের ভাবগত বিষয়ে রফিকউজ্জামান বলেন, ‘দুঃখ আমার বাসররাতের পালঙ্ক’ গানে অবস্তুগত আবেগ, রূপ, নিয়মকে বস্তুগত বিষয়ে তুলে আনা হয়েছে। বৈচিত্র্যময় উপমা ব্যবহারের গল্পও তিনি শোনান। নতুন লেখকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শ্রোতার রুচির কাছে বিক্রি হওয়া যাবে না; লেখকের কাজ শ্রোতার রুচিকে উন্নত করা।’ ভালো সিনেমা বানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভালো সিনেমা তৈরির ইচ্ছা থাকলেও সিডিউলের জন্য নায়ক-নায়িকাদের বাড়ি গিয়ে বসে থাকতে হয়। এ কাজ পারব না বলেই সিনেমা করা হয় না।’ মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেন, ‘এখন সুর সৃষ্টি খুব কম হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে কমে যাচ্ছে পুরোনো আবেগ, স্মৃতির টান। যে জীবনে মানুষের জন্য প্রেম, ভালোবাসা, মমত্ব, মানবতা, মিলন নেই, সে জীবন কোনো জীবনই নয়। মানুষকে দূরে ঠেলে তীর্থস্থান ঘুরে খুব বেশি ফল আশা করা যায় না। তারপরও এমন আয়োজনে মুগ্ধ হলাম। বহুদিন পর গল্প করার সুযোগ হলো।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক প্রধান অতিথির হাতে শুভেচ্ছা স্মারক ও উপহার তুলে দিয়ে বরণ করে নেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রফিকউজ্জামানের সহধর্মিণী পান্না জামান ও ছোট ভাই হাবিবউজ্জামান।