নজরুলের গানের বিকৃতি: পশ্চিমবঙ্গে তীব্র নিন্দা এ আর রহমানের
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একটি হিন্দি ছবির একটি গান নিয়ে প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। গানটি নিয়ে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশের শিল্পীসমাজও। কারণ, গানটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় গানগুলোর অন্যতম। এটির রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম। গানটি হলো ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট, ভেঙে ফেল কর্রে লোপাট’। গানটিকে সম্পূর্ণ ভেঙেচুরে, ভিন্ন সুরে ছবিতে ব্যবহার করেছেন অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রাহমান। ১০ নভেম্বর ছবিটি ইন্টারনেটে মুক্তি পাওয়ার পর এবং তার কিছু আগে গানটি ইউটিউবে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। সামাজিক মাধ্যমে গানটির পক্ষে ও বিপক্ষে মানুষ মতামত দিচ্ছেন, তবে ৯০ শতাংশ মতই এ আর রাহমানের সুরারোপিত গানটির সমালোচনা করে।
এ আর রাহমানের সুরারোপিত ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হলে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী মৌসুমী ভৌমিক, যিনি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে কাজ করেছেন, তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গানটি নিয়ে যা করা হয়েছে, তা দুঃখজনক। “কারার ঐ লৌহ–কবাট”–এর মতো প্রতিষ্ঠিত একটি ‘ক্ল্যাসিক’ নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা যেতেই পারে, তবে সেটাই যদি এ আর রাহমান করে থাকেন, তবে আমি বলব, এ ক্ষেত্রে তার এক করুণ ও দুঃখজনক পরিণতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটি গান থাকেনি, এটি ‘বলিউডায়িত’ হয়েছে। গানটির একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল। সামরিক গানের সঙ্গে গাজনের গানের অন্তরাত্মাকে মিশিয়ে ফেলা হয়েছিল “কারার ঐ লৌহ–কবাট’–এ। এ ক্ষেত্রে এই যে একটা ছাঁচে ফেলে একটা বিখ্যাত গানের দফারফা করা হলো, এটার একটা বাণিজ্যিক দিক অবশ্যই আছে, বাণিজ্যের নামেই এটা করা হলো। কিন্তু শিল্পের প্রশ্নে এটা একটা বিরাট পরীক্ষা হলো, এমনটা আমি বলব না। একটা সহজ পথ নেওয়া হয়েছে শুধু। “এশিয়ান ডাব ফাউন্ডেশন” নামে একটি ব্রিটিশ এশিয়ান ব্যান্ডের “রেবেল ওয়ারিয়ার” (বিদ্রোহী যোদ্ধা) নামে একটি গান রয়েছে, যেখানে তারা নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ব্যবহার করেছে। খুবই প্রাসঙ্গিক। তারা তাদের রাজনীতি বজায় রেখেই কাজটা করতে পেরেছিল। এ ক্ষেত্রে বাজার ছাড়া আর কিছুর কথাই ভাবা হয়নি, আর এঁদের ক্ষমতা আছে, পয়সাকড়ি আছে, ফলে ব্যস…ভেঙে সব কররে লোপাট।’
যে ছবিতে এই গান ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির নাম ‘পিপ্পা’। ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি নির্দিষ্ট লড়াইয়ের ভিত্তিতে নির্মিত। এটিকে সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ছবি বলে চিহ্নিত করেছেন নির্মাতারা। নির্মাতারা জানাচ্ছেন, ভারতের ৪৫ অশ্বারোহী রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন বলরাম সিং মেহতার জীবনের ওপর ভিত্তি করে ছবিটি বানানো হয়েছে।
ছবিটির সংগীত পরিচালনা করেছেন এ আর রাহমান এবং সেখানেই বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, পশ্চিমবঙ্গে নজরুল এক অবিশ্বাস্য জনপ্রিয় শিল্পী, যাঁর মৃত্যুর ৪৭ বছর পরও তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু অক্ষুণ্ন নয়, সম্ভবত উত্তরোত্তর বাড়ছে।
ইউটিউবে গানটি মুক্তি পাওয়ার পরে সব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এ আর রাহমানের সমালোচনা। প্রধানত তাঁকে আক্রমণ করেই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে কেউ কেউ তাঁকে সমর্থনও করছেন। যাঁরা এ আর রাহমানকে সমর্থন করছেন, তাঁদের অনেকে বলছেন শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতার কথা।