আঞ্চলিক গান, কিচ্ছাপালার সঙ্গে বাড়তি পাওয়া কানন বালার পরিবেশনা

ছায়ানট মিলনায়তনে দেশঘরের গানে কিচ্ছাপালা পরিবেশন করেন জামালপুরের ইদু বয়াতি ও তাঁর দল। ছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে

আয়োজনটা শহুরে দর্শকের জন্য। মাটির গন্ধ সব পরিবেশনায়, যেভাবে মূল গান গাওয়া হয়, সেভাবেই গাওয়া হলো। দেখে মনে হলো, আয়োজনটা যেন জামালপুরের কোনো পাড়াগাঁয়ের জমজমাট আসর। শনিবার আঞ্চলিক গান আর কিচ্ছাপালায় সম্পন্ন হলো ছায়ানটের বিশেষ আয়োজন ‘দেশঘরের গান’।

আরও পড়ুন

সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক দেশের ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীতের পরিচর্যায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর স্মরণেই ছায়ানট বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত নিয়ে নিয়মিত এ আয়োজন করে। গতকাল ছিল ওয়াহিদুল হকের জন্মদিন। এদিন ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে দেশঘরের গানের আসর বসেছিল।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী কানন বালা সরকার। পরে তিনি লোকসংগীত পরিবেশন করেছেন। গান শুনিয়েছেন পটুয়াখালী, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা জেলার লোকসংগীতশিল্পীরা। জামালপুরের ইদু বয়াতি ও তাঁর দলের কিচ্ছাপালা অনুষ্ঠানে যুক্ত করেছে ভিন্নমাত্রা।

শুরুতে স্বাগত কথনে অংশ নেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায়। ধন্যবাদ জ্ঞাপন জানান ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। উদ্বোধনী বক্তব্যে ছায়ানটের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কানন বালা সরকার বলেন, ‘যত দিন বেঁচে থাকব এদিনের কথা স্মরণ থাকবে। ওয়াহিদুল হকের মতো মানুষকে নিবেদিত এই গানের আসর উদ্বোধন করাটা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের।’

লাইসা আহমদ বলেন, ‘দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে ঘুরে দেশজ সংগীতের বিকাশে কাজ করেছেন ওয়াহিদুল হক, তৈরি করেছেন অনেক ছেলেমেয়েকে। তাঁদের কণ্ঠে তুলে দিয়েছেন মাটি ও মানুষের গান। এভাবেই প্রান্তিক পর্যায়ে গানের চর্চা ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন তিনি। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রতিবছর তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে “দেশঘরের গান” শীর্ষক এই সংগীতায়োজন।’

গ্রামীণ নানা অনুষঙ্গে সাজানো হয়েছিল মঞ্চ। শুরুতেই মঞ্চে আসেন খুলনার শিল্পী গুরুপদ দত্ত, শোনান সমকালীন জনপ্রিয় গান—‘বয়স আমার বেশি না’। পটুয়াখালীর গায়েন বাদল রহমানের গাওয়া গানের বাণীটি ছিল এমন—‘কওছেন দেখি মুই এল্লা কী করি/ হাত দিন ধইরা বউ মোর উইঠা রইছেন বাপের বাড়ি...’।

ময়মনসিংহের শিল্পী জয়িতা অর্পা শুনিয়েছেন মরমি গীতিকবি জালার খাঁর গান—‘আঁধারে ঘিরিলো, কোথায় যাই বলো’। উকিল মুন্সীর বাণীকে সংগীত করে পরের পরিবেশনায় গেয়েছেন, ‘আমি বাটাতে সাজাইয়া রাখছি সোনামুখী পান/ আইয়ো আইয়োরে গগনেরই চান...।’ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের বাণীতে হবিগঞ্জের বিমলেন্দু দাশ শুনিয়েছেন—‘হবিগঞ্জের জালালি কইতর, সুনামগঞ্জরে কুঁড়া’।

উদ্বোধক কানন বালা সরকার শোনান—‘আমার সোনার ময়না পাখি’ ও ‘মনাই সওদাগর তোমার কোথায় বাড়িঘর’। সবশেষে কিচ্ছাপালা নিয়ে মঞ্চে আসেন জামালপুরের ইদু বয়াতি তাঁর দল নিয়ে। সুরে সুরে সন্তানপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় উদ্‌গ্রীব এক বাদশাহ ও তাঁর রানিদের গল্প বলে যান এই শিল্পী। নাচের তালে কথা ও গানের পরিবেশনায় আসর জমে উঠতে সময় লাগেনি।