কবে আমি বাহির হলেম...

রবীন্দ্রনাথের পূজা-প্রেম পর্যায়ের গানের পাশাপাশি বৈচিত্র্য পর্যায়ের গান দিয়ে সাজানো ছিল সকালের আয়োজন

‘এই জীবনে ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন অমিয় বাণী ধারণ করে তিন বছর পর মঞ্চে ফিরল ৩৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ছুটির সকালে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর রবীন্দ্রনাথের পূজা-প্রেম পর্যায়ের গানের পাশাপাশি বৈচিত্র্য পর্যায়ের গান দিয়ে সাজানো ছিল সকালের আয়োজন। এই পর্বের শুরুতেই মঞ্চে আসেন সঙ্গীতভবনের শিল্পীরা। তাঁরা পরপর গেয়ে শোনান, ‘লহো লহো তুলে লহো নীরব বীণাখানি’ এবং ‘হেমন্তে কোন্ বসন্তেরই বাণী/পূর্ণশশী ওই-যে দিল আনি’। তাদের পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন উত্তরায়ণের শিল্পীরা। তাঁরাও গেয়ে শোনান দুটি গান—‘সত্য মঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’ এবং  ‘প্রাণে খুশির তুফান উঠেছে/ভয়-ভাবনার বাধা টুটেছে’।

এরপর সুরতীর্থের শিল্পীরা গাইলেন, ‘কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে’ এবং  ‘কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা’। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির (বাফা) শিল্পীরা শোনান, ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে’ এবং ‘এখন আর দেরি নয়, ধর্ গো তোরা হাতে হাতে ধর্ গো’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি হয় বিশ্ববীণা শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত গানের মধ্য দিয়ে। তাঁরা শোনান, ‘হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা’ এবং  ‘একি মায়া,/লুকাও কায়া/জীর্ণ শীতের সাজে’।
উদ্বোধনী অধিবেশনে (সকালে) দ্বিতীয় পর্বে ছিল আমন্ত্রিত পাঁচ দলের সমবেত পরিবেশনা। এতে অংশ নেয় সঙ্গীতভবন, উত্তরায়ণ, সুরতীর্থ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা) ও বিশ্ববীণা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ

অনুষ্ঠানে কে এম খালিদ বলেন, ‘৩৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব আয়োজন করেছে। তাদের এ অসাধারণ আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের মতো আয়োজনগুলো আমাদের সংগীতজগতকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এতে নতুন মাত্রা যোগ করে।’

উৎসবে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাচিক শিল্পী আশরাফুল আলম ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সংগীতশিল্পী রফিকুল আলমকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থাকে দুই লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।

উৎসবে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাচিক শিল্পী আশরাফুল আলম ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সংগীতশিল্পী রফিকুল আলমকে সম্মাননা প্রদান করা হয়

সম্মাননাপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে বাচিক শিল্পী আশরাফুল আলম বলেন, ‘জগতের বিপুল কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। আমি আজ তাঁর নামাঙ্কিত সম্মাননা পেলাম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা থেকে। সম্মাননাটি আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের।’
রফিকুল আলম তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত এ সম্মাননা আমার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যেন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।’ সংবর্ধিত দুই গুণীর শংসাবচন পাঠ করেন সাগরিকা জামালী ও সীমা সরকার।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম পরপর গেয়ে শোনান, ‘উত্তর বায় জানায় শাসন/পাতলো তপের শুষ্ক আসন’ এবং ‘ওই জানালার কাছে বসে আছে /করতলে রাখি মাথা—’ শিরোনামে দুটি গান। তাঁর আগে সংবর্ধিত বাচিক শিল্পী আশরাফুল আলম ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’- এর কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করেন।
উৎসবের শেষ দিন আগামীকাল শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। এবারের উৎসবে সারা দেশ থেকে প্রায় ২০০ শিল্পী একক ও দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, রোকাইয়া হাসিনা, অদিতি মহসিন, অরূপ রতন চৌধুরী, চঞ্চল খান, লিলি ইসলাম প্রমুখ।

সমবেত সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়

২০১৯ সালে শেষবারের মতো মঞ্চে রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে; এরপর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনলাইনে আয়োজন করা হয়েছে এ উৎসব। তিন বছর পর এবার মঞ্চে ফিরেছে এ উৎসব।