মুস্তাফা জামান আব্বাসীকে নিয়ে এই ৭ তথ্য জানতেন কি
আজ শনিবার মারা গেছেন সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী। গান, লেখালেখি ও গবেষণা নিয়ে বর্ণিল এক জীবন কাটিয়েছেন তিনি। প্রথম আলোর ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’র প্রচ্ছদে উঠে এসেছিল বরেণ্য এই সংগীতব্যক্তিত্বের জীবনের নানা জানা–অজানা তথ্য। সেখান থেকে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো এমন সাত তথ্য—
সংগীত সংগ্রহ
দুই হাজার লোকসংগীতের এক বিশাল ভান্ডার আছে সংগ্রহে। গানের সংগ্রহ অনেকেরই কাছে থাকে, বিভিন্ন বইপত্র কিংবা রেকর্ড থেকে সংগৃহীত। কিন্তু এ সংগ্রহ তেমন মামুলি নয়। লোকসংগীত বলতে আমরা যা বুঝি, ঠিক তেমন গান তিনি তুলে এনেছেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। গানগুলোর গীতিকার–সুরকার কে, তা আজ আর সঠিকভাবে জানা যায় না। কিন্তু লোকমুখে যুগের পর যুগ ধরে টিকে আছে এসব গান। এ দেশে লালনের গানের মূল সুরও সংগ্রহ করেছিলেন তিনিই এবং টেলিভিশনে সে গান সম্প্রচারেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। এর আগে মারফতি ও মুর্শিদির সুরে গাওয়া হতো লালনের গান। বাউল বিয়াল শাহ, বাউল খোদা বক্স বিশ্বাস, বাউল জোনাব আলী মল্লিকসহ আরও ১০ বাউলকে তিনি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় নিজের বাসায় এনে রেখেছিলেন। বাউলদের কয়েক শ গানের সংগ্রহ আছে তাঁর কাছে।
চিঠি জমান
মুস্তাফা জামান আব্বাসী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষের চিঠি পেতেন। কিন্তু এর একটিও নষ্ট করেন না। প্রতিটি চিঠিই তাঁর কাছে ভীষণ মূল্যবান। কত রকমের হাতের লেখা। ছোট ছোট অনুভূতির প্রকাশ থাকে এসব চিঠিতে। তাঁর জীবনের অনেক বড় সঞ্চয় এ চিঠি।
প্লেব্যাকে
১৯৬০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে অন্তত এক ডজন ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। তিনি হিন্দি ও উর্দু গান গেয়েছেন। পাশাপাশি গজলও গেয়েছেন।
নানা পেশায়
গানকে কখনো পেশা হিসেবে নেননি মুস্তাফা জামান আব্বাসী। দেশের অনেকেই হয়তো জানেন না আব্বাসী আসলে একজন সফল ব্যবসায়ী। অবশ্য প্রথম জীবনে তিনি পাকিস্তানের একটি বড় কোম্পানির বড় কর্তার চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদটি দেওয়া হয়। তিনি তা গ্রহণও করেন। কিন্তু মাত্র ৯ মাস পর আবার তাঁকে সরে আসতে হয় পদটি থেকে। বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের দায়িত্বও তিনি পালন করেছিলেন একটা সময়। বাংলাদেশ টেলিভিশনের লোকসংগীতের অনুষ্ঠান ‘বাঁশরী’ ও ‘হিজলতমাল’–এর ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে গান করেছেন।
সংগীত পরিবার
মুস্তাফা জামান আব্বাসীরা দুই ভাই ও এক বোন। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দারুণভাবে সফল। বড় ভাই সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল। বোন সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। মুস্তাফা জামান বিয়ে করেন ১৯৬৩ সালের ২০ জানুয়ারি সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাগনি আসমা চৌধুরীকে (পরে আসমা আব্বাসী)। তাঁদের দুই মেয়ে সামীরা আব্বাসী ও শারমিনী আব্বাসী।
দেশের গান নিয়ে বিদেশে
মুস্তাফা জামান আব্বাসী যেখানেই গেছেন, সেখানেই তিনি বাংলাদেশের মাটির গান শুনিয়েছেন মানুষকে। ৪০টির বেশি দেশ ঘুরেছেন তিনি। গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন সেখানকার মানুষকে।
নায়ক হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন
আব্বাসউদ্দীনের নিজেরই ইচ্ছা ছিল অভিনয় করার। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর এক ছেলে হবে ব্যারিস্টার, অন্য ছেলে অভিনেতা। প্রথমটিতে সফল হলেও পরেরটি হননি। ঢাকায় পড়াশোনা শেষে মুস্তাফা জামানের কথা ছিল আমেরিকায় গিয়ে সিনেমাটোগ্রাফির ওপর পড়াশোনা করবেন। কিন্তু হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় সেটা আর করা হয়নি। সেসব পুরোনো কথা। অনেক দিন পর একবার পরিচালক এহতেশাম তাঁকে দেখে সিনেমায় নায়ক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাজি হননি মুস্তাফা।