১০ হাজার ডলার পেল শাহ আবদুল করিমের পরিবার
এক বছরের গানের রয়্যালটি হিসেবে ১০ হাজার ডলার পেল বাউল শাহ আবদুল করিমের পরিবার। আজ শনিবার সকালে জাতীয় আর্কাইভস ভবনের সম্মেলনকক্ষে আবদুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালালের হাতে রয়্যালটির চেক হস্তান্তর করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে মরমি কবি হাসন রাজা, বাউল শাহ আবদুল করিম ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সংগীতকর্ম সংরক্ষণের জন্য তাঁদের তিনটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে নূর জালালের হাতে রয়্যালটির চেক বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
নূর জালাল বলেন, ‘বাবা জানতেন না যে তাঁর গান থেকে কখনো টাকা পাওয়া যাবে। কপিরাইট অফিসের এই উদ্যোগ বাবা দেখে যেতে পারলে অনেক খুশি হতেন। বাবা অর্থকষ্টে দিন যাপন করেছেন। বাবার চোখের সামনে আমার মা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।’ বাবার গানগুলো সঠিক সুরে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাবেন জানিয়ে নূর জালাল বলেন, ‘বাবা আমার জন্য দোয়া করে গেছেন। তিনি বলতেন, আমার কবরের পাশে বসে থাকলেও তোমার ভাতের কষ্ট থাকবে না।’
কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার মো. দাউদ মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন কপিরাইট অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার প্রিয়াংকা দেবী পাল। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিল্পী খুরশীদ আলম, রফিকুল আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সুজিত মুস্তাফা, মনির খান, মানাম আহমেদ, ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মুনিরুল আলম টিপু, শিল্পী ও সুরকার জুয়েল মোর্শেদ, গীতিকবি আসিফ ইকবাল, দেলোয়ার আরজুদা শরফ, কবি মারুফুল ইসলাম, প্রয়াত ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার চন্দনা প্রমুখ।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘আমি আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে এখনো অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি। এ জন্য নিজেকে ব্যাকডেটেড মনে হয়। বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে। আমাদের সময়ে গান রেকর্ড করা এখনকার মতো এত সহজ ছিল না। এ কাজে অনেক বাছাইয়ের ব্যাপার ছিল। এখন খুব সহজে গান রেকর্ড করে ফেলা যায়। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে গান সংরক্ষণ করা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। এমন সুন্দর একটি কাজ করার জন্য কপিরাইট অফিসের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
হাসন রাজার প্রপৌত্র সামারীন দেওয়ান বলেন, গত ১০০ বছরে হাসন রাজা কোনো স্বীকৃতি পাননি। এ ওয়েবসাইটের মধ্য দিয়ে সরকারিভাবে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। হাসন রাজাকে বাউলশিল্পী সম্বোধনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হাসন রাজা কখনোই বাউল ছিলেন না। তিনি বাউলা বলতেন। ‘বাউলা মন’ আর ‘বাউল’ এক নয়। এ দুইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, শিল্পীরা অনলাইন থেকে যদিও টাকা তুলছেন, কিন্তু এখানে জমা হচ্ছে ডলার, সরকার পাচ্ছে রেমিট্যান্স। শিল্পীরা উপকৃত হলে সেটা কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত উপকার নয়, দেশও উপকৃত হচ্ছে। মো. দাউদ মিয়া বলেন, শিল্পীদের মেধাসত্ব ও আর্থিক সুরক্ষার জন্য এ ওয়েবসাইটগুলো করা হয়েছে। সিনেমার গানের মেধাসত্ব বিষয়ে নতুন আইন করা হচ্ছে, যাতে এ থেকে গানের সঙ্গে জড়িত সব শিল্পী তাঁদের অধিকার বুঝে নিতে পারেন।
কে এম খালিদ বলেন, ‘শিল্পীদের এখন থেকে আর দুস্থ শিল্পী বলা যাবে না। আমরা বলতে পারি, অসচ্ছল শিল্পী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পীদের সহযোগিতার জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি তহবিল করে দিয়েছেন। সেখান থেকে আমরা শিল্পীদের জন্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করব।’