শান্তিনিকেতনে কেমন ছিল সাদি মহম্মদের প্রথম দিন

শান্তিনিকেতনে প্রথম দিনটির কথা কখনো ভোলেননি সাদি মহম্মদকোলাজ

সময়টা ১৯৭৫, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে গিয়েছিলেন তরুণ সাদি মহম্মদ। তবে দুই বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে মাঝপথে ছেলের সংগীত নিয়ে পড়ার ইচ্ছা একেবারেই পছন্দ করেননি মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সাদি মহম্মদের ভাষায়, ‘মা বিছানায় পড়ে গেল। ভাইবোনরা মুখ ঘুরিয়ে রাখল।’ তবে তাঁর জেদের কাছে হার মানতে হয় সবাইকে।
শান্তিনিকেতনে প্রথম দিনটির কথা কখনো ভোলেননি সাদি মহম্মদ। বিশেষ করে গুরু কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। একবার বাংলা ভিশনের ‘আমার আমি’ অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে এসেছিলেন। সেখানেই রোমন্থন করেন দিনটির স্মৃতি।
ঢাকা থেকে প্রথমে আকাশপথে কলকাতা, এরপর ট্রেনে ১১০ কিলোমিটার দূরের বোলপুর এবং শেষে রিকশায় চড়ে সংগীতভবনে হাজির হয়েছিলেন সাদি মহম্মদ। আর ওই সময় সেখানে চলছিল বর্ষামঙ্গল উৎসব।

সাদি মহম্মদের ভাষায়, ‘তল্পিতল্পা নিয়ে নামলাম। বর্ষার সময়, বর্ষামঙ্গল উৎসব হচ্ছে। গুরুরা ছেলেমেয়েদের গান দেখিয়ে দিচ্ছেন। মোহর দি (কণিকা বন্দোপাধ্যায়), শান্তিদেব ঘোষ ছিলেন। মোহর দি বললেন, “তুমি বাংলাদেশ থেকে এসেছো?” মাত্র স্বাধীন দেশ তো। সেখান থেকে একটা ছেলে এসেছে। সবার খুব দুর্বলতা ছিল বাংলাদেশের প্রতি।’
সাদি মহম্মদ বলেন, ‘তখন মাত্র তিনটা ছেলে সংগীতভবনে। মোহর দি বললেন, ‘তুমি এক্ষুণি মঞ্চে উঠে পড়। গান গাইতে বসো। পরে বুঝলাম, মোহর দি আমাকে কেন স্টেজে ওঠালেন।’

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
রবীন্দ্রসংগীত অনুরাগীদের কাছে বিশেষ একটি নাম কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাছের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা তাঁকে ডাকতেন মোহর বা মোহর দি। তবে তাঁর নাম কিন্তু কণিকা ছিল না। পিতৃপ্রদত্ত নাম অনিমা পাল্টে এই নাম রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শৈশবে, এক ঝড়ের দিনে আম কুড়াতে গিয়ে বিশ্বকবির চোখে পড়েন তিনি। তাঁর কাছে গানও শিখেছেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বভারতীর ইমেরিটাস অধ্যাপক হন। অনেকের মতো সাদি মহম্মদও তাঁকে আদর্শ মানতেন। পছন্দ করতেন তাঁর গান।
সাদি মহম্মদ
ছবি: খালেদ সরকার

মজার ব্যাপার হলো, প্রথম দিন সাদি মহম্মদ যখন মঞ্চে সবার সঙ্গে গান করছেন, তখনো তিনি থাকার জায়গা বুঝে পাননি। বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ পাননি। তল্পিতল্পাও ছিল সঙ্গেই। তবে তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, সেদিন দিদিদের সঙ্গে যে গানটি করেছিলেন সেটি ছিল ‘বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা, আষাঢ় তোমার মালা।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতি পর্বের এই গানটি লিখেছিলেন ১৯২৫ সালে।