গুরুতর দুই যৌন অপরাধ থেকে রেহাই পেলেন মার্কিন র‍্যাপার

মার্কিন র‍্যাপার ও সংগীত প্রযোজক শন কম্বস। এএফপি

প্রভাবশালী মার্কিন র‍্যাপার ও সংগীত প্রযোজক শন ‘ডিডি’ কম্বস যৌনকর্মী পাচার ও যৌনকর্মীদের চক্র চালানোর মতো ভয়াবহ অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেও আপাতত কারাগার থেকে তাঁর মুক্তি মিলছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসা–সংক্রান্ত দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, যার প্রতিটির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড।
গতকাল বুধবার (স্থানীয় সময়) নিউইয়র্কের ম্যানহাটান ফেডারেল কোর্টে বিচারক অরুণ সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘এ মামলায় সরকারপক্ষ পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে যে অভিযুক্ত সহিংস আচরণে জড়িত ছিলেন। সে কারণে তাঁকে এখনই মুক্ত করা হচ্ছে না।’

সাত সপ্তাহব্যাপী বিচার চলাকালে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল র‍্যাপারের দুই সাবেক প্রেমিকার জবানবন্দি—যাঁরা অভিযোগ করেন, ডিডি তাঁদের হোটেলকক্ষে একাধিকবার মাদকাসক্ত অবস্থায় দিনের পর দিন চলা যৌনাচারে বাধ্য করতেন। সেই সময় সেখানে পুরুষ যৌনকর্মীরাও উপস্থিত থাকতেন, আর ডিডি নিজে তা দেখতেন, কখনো কখনো ভিডিও করতেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

শন কম্বস। এএফপি

জবানবন্দি দেন কাসান্দ্রা ‘ক্যাসি’ ভেনচুরা ও আরেকজন নারী, যিনি আদালতে ‘জেন’ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। তাঁরা বলেন, ডিডি তাঁদের মারধর করেছেন, আর্থিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছেন।
বিচারক যখন জামিন নাকচ করার ঘোষণা দেন, ৫৫ বছর বয়সী এই হিপ-হপ উদ্যোক্তা কম্বস রায়ের সময় আদালতে মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। রায় ঘোষণার পর চুপচাপ কোলের ওপর হাত মুঠো করে রাখেন, এরপর হাতজোড় করে ওপরের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আইনজীবীর সঙ্গে করমর্দন করেন, আর রায়দাতাদের প্রতি মুখে ‘ধন্যবাদ’ জানান। পরে বিচার টেবিলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন, যেখানে দুই মাস ধরে তিনি হয়তো ভাবছিলেন, বাকিটা জীবন তাঁকে কারাগারেই কাটাতে হবে কি না। আর গ্যালারিতে বসা তাঁর পরিবারের এক সদস্য মাথা নিচু করে ফেলেন।
এখন অপেক্ষা, সাজা ঘোষণার। প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

‘সহিংসতা মানেই সহিংসতা’
রায় ঘোষণার পর কম্বসের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেন বিচারক অরুণ সুব্রহ্মণ্যম। তিনি বলেন, ‘এই ব্যক্তি অতীতে নিজেই পারিবারিক সহিংসতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আর সহিংসতা মানেই সহিংসতা।’
কম্বসের আইনজীবীরা দাবি করেন, এই যৌন সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে। তবে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেননি তাঁরা। আদালতে ক্যাসির ওপর নির্যাতনের ভিডিওও উপস্থাপন করা হয়।

আরও পড়ুন

ক্যাসির আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া
ক্যাসির আইনজীবী ডগলাস উইগডর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই মামলা বিনোদন দুনিয়া ও ন্যায়বিচারের লড়াই—দুই ক্ষেত্রেই ক্যাসির ছাপ রেখে গেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, ক্ষমতাবান পুরুষদের অপকর্ম যুগের পর যুগ ধরে অনিয়ন্ত্রিতভাবেই চলে আসছে।’
উইগডর আরও বলেন, ‘আমরা খুশি যে অবশেষে তিনি (কম্বস) অন্তত দুটি ফেডারেল অপরাধের জন্য দায়ী সাব্যস্ত হয়েছেন।’

সাজা হতে পারে অক্টোবরে
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তারের পর থেকে ব্রুকলিনের কারাগারে বন্দী আছেন ডিডি কম্বস। বিচারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখনই মুক্তি মিলছে না।
তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, কম্বস ‘নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করছেন’ এবং কারাগারে এখন পর্যন্ত ‘আদর্শ বন্দী’ হিসেবে আছেন। তিনি একটি পুনর্বাসন কর্মসূচিতেও আবেদন করেছেন।

তবে সরকারপক্ষের আইনজীবী মৌরিন কোমি বলেন, ‘“ডিডি”র একমাত্র ব্যতিক্রমী দিক হলো—তাঁর অর্থ, তাঁর সহিংসতা আর তাঁর ঔদ্ধত্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষটি চরম সহিংস, নিয়ন্ত্রণহীন রাগে ভরা এবং তাঁর অসংখ্য ভুক্তভোগীর প্রতি বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই।’
কম্বসের চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা হবে আগামী অক্টোবর মাসে, তবে বিচারক জানিয়েছেন, চাইলে সেই তারিখ এগিয়েও আনা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এএফপি