আজিজ বোর্ডিং থেকে বলিউড, জীবনের নানা বাঁকে জেমস

দেশের ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় তারকা জেমসের আজ জন্মদিন। নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করা এই জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা আজ ৫৮ বছরে পদার্পণ করেছেন। এই দিনে একনজরে দেখে নেওয়া যাক তাঁর জীবনের নানা বাঁকবদলের গল্প।
১ / ১৬
পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। জন্ম ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর, নওগাঁয়। জেমস নামটি রেখেছিলেন তাঁর বাবা মোজাম্মেল হক, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। মা জাহানারা খাতুন ছিলেন গৃহিণী
ছবি : সংগৃহীত
২ / ১৬
বাবার চাকরিসূত্রে জেমসের প্রথম স্কুল ছিল সিলেটের ব্লু-বার্ড স্কুল। তারপর রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল। আর নীলফামারী ও সিরাজগঞ্জের কলেজজীবনে কেটেছে দারুণ কিছু সময়। কলেজজীবনের পর জেমসের মাথায় ঢোকে গানের পোকা। পরিবারের কেউ কখনো গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ফলে বড় ছেলে জেমসের গায়কজীবন চাননি বাবা মোজাম্মেল হক ও মা জাহানারা খাতুন
ছবি : সংগৃহীত
৩ / ১৬
জেমসের গায়কজীবন চাননি বাবা–মা; আর তাই অভিমানী জেমসকে ঘর ছেড়ে পথে নামতে হয়। সেই পথ চলতে চলতে তাঁর ঠিকানা হয়ে যায় চট্টগ্রামের কদমতলীর পাঠানটুলী রোডে মতিয়ার পুলের সেই আজিজ বোর্ডিংয়ের ৩৬ নম্বর কক্ষটি। জেমস বলছিলেন, ‘আড্ডা আর গান যা-ই হোক না কেন, সব ওখানেই। আজিজ বোর্ডিংয়ের দিনগুলো কখনো ভুলব না।’ আজিজ বোর্ডিংয়ে গানের কথা আর সুরের নেশায় ঘুমহীন অনেক রাত কেটেছে জেমসের। তারকা হয়ে ওঠার পর অবশ্য আর কখনোই সেখানে যাওয়া হয়নি তাঁর। তবে যে কক্ষে থাকতেন, সেখানে এখনকার বাসিন্দারা জেমসের জন্মদিনে কেক কাটেন প্রতিবছর। কখনো সময়-সুযোগ হলে ঢুঁ মারলেও মারতে পারেন, কথায় কথায় এমনটাও জানান জেমস
ছবি : সংগৃহীত
৪ / ১৬
তারকা জেমসকে আজিজ বোর্ডিং কখনো পায়নি। পাননি তাঁর মা-বাবাও। গানের জগতে জেমসের সাফল্যের পারদ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আগেই দুজনই চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। প্রিন্স মাহমুদের কথা–সুরে জেমস তাঁর ‘মা’ গানে বলেছেন, ‘সবাই বলে ওই আকাশে লুকিয়ে আছে, খুঁজে দেখো, পাবে দূর নক্ষত্র মাঝে...’
ছবি : প্রথম আলো
৫ / ১৬
জেমস আমাদের নগরবাউল এবং ভক্তদের ‘গুরু’। বাংলাদেশের ব্যান্ডের এই মহাতারকার ভাষায়, ‘আমি তোমাদেরই লোক’। মঞ্চে উঠলে তিনি যতটা কাছের, মঞ্চ ছাড়তেই ততটা দূরের তারা। সংগীতশিল্পী জেমস আমাদের যতটা চেনা, ব্যক্তি জেমস অনেকটাই অজানা। গানের সুরে জীবনটা বাঁধতে আশির দশকের শুরুর দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন জেমস। আজও ছুটছেন। তাঁর একটা গানের কথা এ রকম, ‘চোরা সুরের টানে রে বন্ধু,/ মনে যদি ওঠে গান,/ গানে গানে রেখো মনে/ ভুলে যেয়ো অভিমান...’
ছবি : সংগৃহীত
৬ / ১৬
ছোটবেলায় জেমস দুরন্ত ছিলেন। সেই সময়ের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে সাঁতারে ভীষণ ঝোঁক ছিল। বেশ ভালো সাঁতরাতেও পারতাম। দুরন্ত আমি বন্ধুদের নিয়ে আশপাশের পুকুরে সাঁতার কাটতাম। নওগাঁয় থাকতে ১০-১২ বছর বয়সে সাঁতার কাটতে চলে যেতাম নদীতে। বেশ কয়েকবার তো সাঁতরে মাঝনদীতেও চলে গিয়েছিলাম
ছবি : সংগৃহীত
৭ / ১৬
দুই মেয়ে জান্নাত ও জাহানের সঙ্গে বাবা জেমস। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে জেমসের কাছে প্রশ্ন ছিল, আপনার সন্তানদের সম্পর্কে আমরা জানিই না বলা চলে। জেমস এ কথা শুনে স্বভাবসুলভ মাপা হাসি হেসে বললেন, ‘আমার গানের জীবনের বাইরে ব্যক্তিজীবনটা প্রকাশিত হোক, সেটা কখনো চাইনি। এ কারণেই হয়তো আমার পারিবারিক জীবনটা সেভাবে খুব কাছের কেউ ছাড়া সবার জানার সুযোগ হয়নি। এটা আমি শুরু থেকেই করে এসেছি। আমার তিন সন্তান—সবার বড় ছেলে দানেশ, তারপর মেয়ে জান্নাত ও জাহান
ছবি : সংগৃহীত
৮ / ১৬
সবারই একটা মত, জেমস নিজেকে আড়াল করে রাখেন। কেন নিজেকে আড়ালে রাখেন—এমন প্রশ্নে জেমসের ব্যাখ্যা এ রকম, ‘একা থাকতে পছন্দ করি। তখন হয়তো নিজের মতো ভাবি, ভাবতে ভালো লাগে। চুপচাপ থাকলে কোনো একটা বিষয় নিয়ে ফোকাসড থাকা যায়। তবে, আমি তো গানের জন্য সব সময়ই অ্যাভেইলেবল। দেশে ও দেশের বাইরে স্টেজ শো করছি নিয়মিত। আমি নিজের মতো করে কাজ করতে পছন্দ করি। বাড়তি আড্ডা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না
ছবি : সংগৃহীত
৯ / ১৬
জেমসের অবসর কাটে কীভাবে? জেমস জানান, ‘সবাই যে রকম করে, আমারও তেমন। টেলিভিশন দেখি। বই পড়ি। ছবি তোলার একটা নেশা আছে, যখন সময় পাই ছবি তুলি। এভাবেই কেটে যাচ্ছে।’ সিনেমার মধ্যে ক্ল্যাসিকগুলো বেশি দেখেন জেমস। জেমসের প্রিয় লেখক অনেকেই। তাঁদের মধ্যে সবার আগে আছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের নাম। এ ছাড়া নাগিব মাহফুজও প্রিয়
ছবি: প্রথম আলো
১০ / ১৬
বাংলাদেশের আনাচ-কানাচে যেমন চষে বেড়িয়েছেন, তেমনি গানের জন্য পৃথিবীর বহু দেশ, বহু শহর ঘুরেছেন জেমস। সবচেয়ে প্রিয় শহরের তালিকায় আছে ভারতের কলকাতা, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও সুইজারল্যান্ডের জুরিখ। বলা বাহুল্য, সবচেয়ে প্রিয় বাংলাদেশ
১১ / ১৬
নির্জনতা জেমসকে খুব টানে। এ জন্য ঢাকা থেকে গাড়িপথে দুই-তিন ঘণ্টার দূরত্বের কোনো নির্জন জায়গায় ভবিষ্যতে বসত গড়লেও গড়তে পারেন। কাজের জন্য ঢাকায় আসবেন, কাজ সেরে আবার চলে যাবেন
ছবি: প্রথম আলো
১২ / ১৬
১৯৮০ সালের দিকে চট্টগ্রামে গড়েন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। প্রথমে সদস্য ছিলেন ফান্টি (ড্রামস), স্বপন (বেজ গিটার), প্যাবলো (ভোকাল ও পিয়ানোবাদক)। তখন জিম মরিসন, মার্ক নাফলার, এরিক ক্ল্যাপটনের গাওয়া গান কাভার করতেন। চট্টগ্রামে সংগীতজীবন শুরু করলেও ভালো কিছু করার তাড়নায় একসময় ছাড়েন প্রিয় চট্টগ্রাম। আশির দশকের মাঝামাঝি চলে আসেন ঢাকায়। নতুনভাবে ফিলিংসে যুক্ত হন বেজ গিটারে আওরঙ্গজেব বাবু ও কিবোর্ডে তানভীর। তাদের নিয়ে শুরু হয় নতুন পথচলা। ফিলিংসে পরে যুক্ত হন অর্থহীন ব্যান্ডের বেজবাবা সুমন। নতুন ব্যান্ড, নতুন ধারার গান নিয়ে ১৯৮৭ সালে ফিলিংস প্রকাশ করে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। এই অ্যালবামের ‘ঝরনা থেকে নদী’, ‘স্টেশন রোড’, ‘আমায় যেতে দাও’, ‘রূপ সাগরে ঝলক’ শ্রোতার মনে দাগ কাটে। পরের বছর ‘অনন্যা’ অ্যালবাম সুপারহিট হয়। এরপর ‘জেল থেকে বলছি’, ‘নগরবাউল’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘কালেকশন অফ ফিলিংস’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘বিজলি’ প্রকাশিত হয়। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো ‘অনন্যা’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’ ও ‘কাল যমুনা’। চলচ্চিত্রে গেয়েও সফল জেমস। ২০১৪ সালে ‘দেশা-দ্য লিডার’ ও ২০১৭ সালে ‘সত্তা’ ছবির ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি
কোলাজ: প্রথম আলো
১৩ / ১৬
শুধু বাংলা গান নয়, বলিউডে হিন্দি গান গেয়েও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন জেমস। তাঁর গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’, ‘চাল চালে’, ‘আলবিদা’, ‘রিশতে’ ও ‘বেবাসি’—এই গানগুলো শ্রোতাদের মুখে মুখে। তবে ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্নিং’ সিনেমার ‘বেবাসি’ গানের পর আর বলিউডে পাওয়া যায়নি জেমসকে। এ বিষয়ে ভক্তদের আগ্রহ থাকলেও গত ৯ বছরে একেবারেই মুখ খোলেননি জেমস। এ বছরের ৩০ এপ্রিল নিজের গাওয়া নতুন গান ‘আই লাভ ইউ’ প্রকাশের দিন বলেছিলেন, ‘বলিউডে তখন ক্যারিয়ার গড়তে পারতাম। খুব সহজ ছিল। কিন্তু সেখানে স্থায়ী হলে আমাকে বাংলাদেশটা ছাড়তে হতো। যেটা আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়। আরও বড় প্রলোভন দিলেও দেশ আমি ছাড়তে প্রস্তুত নই। তাই আর বলিউডে কন্টিনিউ করা হয়নি
ছবি : সংগৃহীত
১৪ / ১৬
২০১৮ সালের আগস্টে কথা প্রসঙ্গে গানের জগতে বেশ কজন ভালো বন্ধুর কথা জেমস বলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আইয়ুব বাচ্চু, হামিন আহমেদ, মাকসুদ ও পার্থ বড়ুয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁরা কেন ভালো বন্ধু—এমন প্রশ্নে জেমস উত্তর ছিল এ রকম, ‘আলাদাভাবে বলাটা মুশকিল। এটা বলতে পারি, আমাদের সবার শুরুটা হয়েছিল একসঙ্গেই। অনেক চড়াই-উতরাই ও ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষী আমরা। সংগীতজীবনের শুরুতে অনেক দিন-রাত আমরা একসঙ্গে থেকেছি। প্রতিকূলতার মোকাবিলা করেছি। আবার একসঙ্গে সব পরিকল্পনা করেছি। এখনো বামবা নিয়ে যখন কোনো আলোচনা হয়, আমরা এক হই। আড্ডা দিই
কোলাজ : প্রথম আলো
১৫ / ১৬
জেমসের প্রিয় খাবার ভাত, ডাল, গরুর মাংস, আইড় মাছ, পাবদাসহ দেশি সব মাছ। দেশের বাইরের মধ্যে কোরিয়ান ও জাপানিজ খাবার খুব ভালো লাগে। তবে রান্না করতে একেবারেই পারেন না। নিয়মিত জিমে যান জেমস। ফিটনেস ধরে রাখতে সাধারণ ব্যায়ামগুলো নিয়ম মেনেই করেন
ছবি : সংগৃহীত
১৬ / ১৬
গান আর জীবন নিয়ে জেমসের কাছে প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটা দিনই আমি আমার মতো করে উপভোগ করি। কোনো লক্ষ্য ঠিক করে সামনে চলি না। আমি যে কাজটা করে আনন্দ পাই, সে কাজটা করি। আমার যদি আগ্রহ না থাকে, সে কাজ আমি কখনোই করি না। আমার জীবনের খুব সোজাসাপটা হিসাব। জীবনে অনেক ওঠানামা ছিল। গান গাইতে এসে কোনো লক্ষ্য স্থির করিনি। গান করছি, এটাই আমার আনন্দ, এটাই আমার প্যাশন। তারপর কী হয়েছে, না হয়েছে, এটা নিয়ে ভাবিনি। কিছু না হলেও গানই করতাম
ছবি : সংগৃহীত