গানের রয়্যালটি আদায় নিয়ে পরামর্শ সভা

এতে ঢাকার শিল্পী, বিভিন্ন টিভি ও রেডিও স্টেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেনছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

গানে রয়্যালটি সংগ্রহে বিশ্বজুড়ে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (ওয়াইপো), সিসাক, ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি (আইপিআরসি) কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে পরামর্শ পেলেন ঢাকার শিল্পী, বিভিন্ন টিভি ও রেডিও স্টেশনের প্রতিনিধিরা।

ওয়াইপো ও জাপান কপিরাইট অফিসের সহযোগিতায় আজ মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে দিনভর ‘কপিরাইট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সংস্থাসমূহের পরিচালনার নিমিত্তে ওয়াইপো মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস ও বাংলাদেশ লিরিসিস্ট, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মারস সোসাইটি।

আরও পড়ুন

২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশে সংগীতপ্রণেতাদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, মেধাস্বত্বের বিপরীতে রয়্যালটি আদায় ও বিতরণ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশের একমাত্র সিএমও হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ লিরিসিস্ট, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মারস সোসাইটি (বিএলসিপিএস)।

ওয়াইপো মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন (ওয়াইপো), সিসাক, ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটির (আইপিআরসি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা কয়েকটি সেশনে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন।
সকালে অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএলসিপিএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হামিন আহমেদ, ওয়াইপোর কপিরাইট ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা মিয়ুকি মোনরোইং ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাফরিজা শ্যামা। প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার দাউদ মিয়া।

উদ্বোধনের পর পাঁচটি সেশন ছিল। প্রথম সেশনে স্থানীয় সিএমও প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের জন্য কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট ও নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ওয়াইপোর কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন মিয়ুকি মোনরোইং।

আরও পড়ুন
উদ্বোধনের পর পাঁচটি সেশন ছিল

দ্বিতীয় সেশনে বিশ্বজুড়ে সংগীতপ্রণেতাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতিনিধিত্ব করা এবং কার্যকরভাবে সংগীতপ্রণেতাদের কাছে রয়্যালটি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সিসাকের ভূমিকা ও উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন সিসাকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক বেঞ্জামিন এনজি।

মধ্যাহ্নবিরতির পর তৃতীয় সেশনে ‘সংগীতপ্রণেতা এবং সংগীতের শ্রোতা/ভোক্তাদের জন্য একটি সৃজনশীল ইকোসিস্টেম তৈরিতে স্থানীয় সিএমওগুলির ভূমিকা: সিএমওগুলি আপনার প্রতি কী অবদান রাখতে পারে?’ শীর্ষক আয়োজন করেছেন সিসাকের প্রতিনিধি সাতোশি ওয়াতানাবে, আইপিআরএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকেশ নিগাম ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরহিত ভট্টাচার্য।  

বাংলাদেশে কপিরাইট এবং রিলেটেড রাইটসের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে সংগীতপ্রণেতা এবং সৃজনশীল শিল্পকে সমর্থন করার জন্য বিএলসিপিএস যেসব সহযোগিতা দিতে পারে, তা নিয়ে চতুর্থ সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার দাউদ মিয়া।

বক্তব্য রাখছেন বিএলসিপিএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হামিন আহমেদ
আরও পড়ুন

দিনের পঞ্চম ও শেষ সেশনে বিএলসিপিএসের বর্তমান কার্যক্রমের অবস্থা এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন বিএলসিপিএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হামিন আহমেদ।

প্রতিটি সেশনের শেষে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব, যেখানে সম্মানিত উপস্থিত ব্যক্তিরা প্রাণবন্তভাবে অংশ নেন। এতে উপস্থিত ছিলেন নকীব খান, শহীদ মাহমুদ জঙ্গি, হামিন আহমেদ, ফোয়াদ নাসের বাবু, মাকসুদুল হক, সুজিত মোস্তফা, মানাম আহমেদ, প্রিন্স মাহমুদ, শেখ মনিরুল ইসলাম টিপু, বালাম, অর্ণব, লাবিক কামাল গৌরব, আলিফ আলাউদ্দীন, হৃদয় খান, শওকত আলী ইমন, জুয়েল মোর্শেদ, ফাহিম ফয়সাল প্রমুখ।

এ ছাড়া বাংলাদেশের সংগীতপ্রণেতাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিনিধিরা; রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেট-সিডি, বিভিন্ন প্রকার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, টেলকো, কনসার্ট ও মিউজিক্যাল ইভেন্ট আয়োজক সংস্থাসহ সংগীতের প্রকাশ, প্রচার ও বিপণন কার্যক্রমে জড়িত বিভিন্ন মাধ্যমের প্রতিনিধিরা, গীতিকবি, সুরকার ও শিল্পীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আসা বিশিষ্ট সাংবাদিকেরা দিনব্যাপী এই মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন।

সিসাক

১৯২৬ সালে গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব সোসাইটিজ অব অথোরিটিজ অ্যান্ড কম্পোজার্স সংক্ষেপে সিসাক নামে পরিচিত। এই আন্তর্জাতিক কনফেডারেশনটি লেখক-সুরকারদের জন্য কাজ করা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কনফেডারেশন। পৃথিবীজুড়ে ১১৬টি দেশে, ২২৫টি সিএমও এবং ৫০ লাখের বেশি নির্মাতাদের সঙ্গে নিয়ে সিসাক বর্তমানে সংগীত, অডিও ভিজ্যুয়াল, নাটক, সাহিত্য এবং ভিজ্যুয়াল আর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। সময়ের পরিক্রমায় সারা পৃথিবীতেই এখন কপিরাইট একটি বহুল আলোচিত বিষয়।

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ২৭-এ দেওয়া হয়েছে এর স্বীকৃতি। এ বিষয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে; প্রণয়ন করেছে আইন ও বিধি; প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের দেখভাল এবং সুরক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করা সময়বান্ধব উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিগুলো সংরক্ষণ এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে আসছে।

সিএমও

সিএমও হলো সরকার অনুমোদিত সেই কর্তৃপক্ষ, যারা এর নিবন্ধিত সদস্যদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে এবং মেধাস্বত্বের বিপরীতে প্রাপ্য রয়্যালটি আদায় করে। এই সংস্থা মেধাস্বত্বের অপব্যবহার প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রথম সিএমও হিসেবে বিএলসিপিএসকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশের সংগীতপ্রণেতাদের যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং প্রাপ্য সম্মানী আদায় ও বিতরণে বিএলসিপিএসের সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস সর্বদা কার্যকর ও দিকনির্দেশনাধর্মী ভূমিকা পালন করে আসছে।


বিএলসিপিএস

বিএলসিপিএস বাংলাদেশের সংগীত শিল্পের জন্য প্রথম সিএমও, তথা যৌথ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি বাংলাদেশের গীতিকার, সুরকার, গায়ক এবং পরিবেশকদের অধিকার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়। বিএলসিপিএসের মাধ্যমে গীতিকার, সুরকার ও পারফর্মাররা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রাপ্য রয়্যালটি বুঝে পাবেন। বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিএলসিপিএস বাংলাদেশের সংগীতস্রষ্টাদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে দৃঢ় ভূমিকা পালন করে যেতে বদ্ধপরিকর।

একটি অলাভজনক ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে বিএলসিপিএসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যার নেতৃত্বে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন, ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন শেখ সাদী খান।