‘মেলায় যাই রে’ গান তৈরির পেছনের গল্পটা

বাংলা নববর্ষে বহুশ্রুত গানের একটি ‘মেলায় যাই রে...’। শিশু–কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ–তরুণী, যুবক–যুবতীসহ বিভিন্ন বয়সীরা এই গানে আনন্দ উদ্‌যাপন করেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা নববর্ষ যেন এই গানটি ছাড়া উদ্‌যাপন পূর্ণ হয় না। গান তৈরির হিসেবে এবার ৩৩ বছর হতে চলছে ‘মেলায় যাই রে...’ গানের বয়স।

মাকসুদ
ছবি : প্রথম আলো

কীভাবে গানটি তৈরি হয়েছিল, সেই গল্প ২০১৫ সালে প্রথম আলোকে শুনিয়েছিলেন গানটির স্রষ্টা মাকসুদ। সেই বছরে নতুন করে আবার গানটি শ্রোতাদের কাছে নিয়ে আসেন তিনি।

কথা প্রসঙ্গে মাকসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, মেধাস্বত্ব অধিকার রক্ষার জন্য ‘মেলায় যাই রে’ গানটি নতুন করে আবার তৈরি করেছিলেন। কারণ হিসেবে বলেছিলেন, ‘আমরা যখন “মেলা” গানটি তৈরি করি, তখন মেধাস্বত্ব আইন ছিল না।

মাকসুদ
ছবি : মাকসুদুল হকের সৌজন্যে

গানটি ২৫ বছর (২০২৩ সালে ৩৩ বছর) ধরে শ্রোতাদের মনে গেঁথে আছে, সামনের আরও ২৫ বছর যদি এভাবেই থাকে, সে কারণেই মেধাস্বত্বের ব্যাপারটি ভেবে নতুন সংগীতায়োজনে “মেলা” তৈরি করা হয়েছে। ব্যবসায়িক দিকটা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।’

২০১৫ সালে নতুন করে তৈরি করা মেলা গানে নতুনত্ব কী জানতে চাইলে মাকসুদ বলেছিলেন, ‘নতুন কিছু করতে গিয়ে আগের গানটি হারিয়ে যাক, এমনটা আমরা চাইনি। আবার একদম কিছুই যে পরিবর্তন হয়নি, তা-ও না। বেজ ও টেম্পোতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। শ্রোতারা পরিবর্তনগুলো বেশ ভালোভাবেই টের পাবেন। আশা করছি, পরিবর্তনটা শ্রোতাদের ভালোই লাগবে।’

মাকসুদ
ছবি : মাকসুদুল হকের সৌজন্যে

গান তৈরি সময়কার ঘটনা মনে করে প্রথম আলোকে মাকসুদ বলেছিলেন, ‘আমরা গানটি করি ১৯৮৭ সালের শেষ দিকে। গানটি তৈরির সময় আমাদের মধ্যে হাতাহাতি বাদে সবই হয়েছে। পুরো গান শেষ করতে ছয় মাস সময় লেগে যায়। ১৯৯০ সালে যখন আমরা গানটি গাওয়া শুরু করি, তখনো টুকটাক কিছু পরিবর্তন করি।’

এদিকে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সমকাল এ গানটি তৈরি নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন মাকসুদ। ২০১৮ সালে প্রকাশিত সে লেখায় মাকসুদ উল্লেখ করেন, ‘১৯৯০ সালে বিটিভির “আনন্দমেলা” অনুষ্ঠানে গানটি প্রথম উপস্থাপন করেন তাঁরা। এই গান প্রচারের কিছুদিন পর গানটি অ্যালবাম আকারে প্রকাশের জন্য অনুরোধ আসতে থকে। অবশেষে “মেলা” অ্যালবামে গানটি রাখা হয়।’

মাকসুদ
ছবি : মাকসুদুল হকের সৌজন্যে

গানের জন্মকথা প্রসঙ্গে মাকসুদ সমকাল পত্রিকায় তাঁর লেখায় এ–ও উল্লেখ করেছিলেন, ‘কত সময় ব্যয় করে এর কথা লিখেছি, তার সঠিক হিসাব-নিকাশ হয়তো এখন দেওয়া সম্ভব নয়। এটুকু মনে আছে, গানে সেই চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছি, যা প্রতি বৈশাখে আমাদের চোখে পড়ে। অনেক শব্দের কাটিকুটি শেষে বেরিয়ে এসেছিল কিছু ছন্দোবদ্ধ কথা। লেখা শেষে নিজেই তাতে সুর বসিয়েছি। এরপর ফিডব্যাকে সদস্যদের সঙ্গে বসেছি কম্পোজিশন নিয়ে। বাদ্য বাদনেও অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। এরপর কণ্ঠে তুলি নিয়েছি গান। গেয়েছি মনপ্রাণ উজাড় করে, লেগেছে বাঙালির ঘরে ঘরে এ কি মাতন দোলা, লেগেছে সুরেরই তালে তালে হৃদয়ে মাতন দোলা; বছর ঘুরে এলো আরেক প্রভাতে, ফিরে এলো সুরেরই মঞ্জরি; পলাশ শিমুলগাছে লেগেছে আগুন, এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি, মেলায় যাইরে, মেলায় যাইরে...। স্টুডিওতে গিয়ে রেকর্ড করা পর্যন্ত একটি গানের পেছনে কত সময় ব্যয় করতে হয়, তার লেখাজোখা থাকে না। কারণ, সংগীত কোনো কাজ নয়, একধরনের সাধনা। যাঁরা গান করেন, তাঁরা ভালো করেই জানেন, প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে কতটা শ্রম-ঘাম ঝরাতে হয়। যা হোক, “মেলা” গানটি রেকর্ড করার পর আমি, ফোয়াদ নাসের বাবু, পিয়ারু খান, লাবু রহমান, সেকেন্দার আহমেদ খোকা—প্রত্যেকেই অন্য রকম এক সৃষ্টির স্বাদ পেয়েছিলাম।’

গান: মেলা
কথা ও সুর: মাকসুদ
অ্যালবাম: মেলা
ব্যান্ড: ফিডব্যাক

লেগেছে বাঙালির ঘরে ঘরে
এ কি মাতন দোলা
লেগেছে সুরেরই তালে তালে
হৃদয়ে মাতন দোলা
বছর ঘুরে এলো আরেক প্রভাতে
ফিরে এলো সুরেরই মঞ্জরি
পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন
এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে
বাসন্তী রং শাড়ি পরে ললনারা হেঁটে যায়—
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে
বখাটে ছেলেদের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই—
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে।
লেগেছে রমণীর খোঁপাতে বেলি ফুলের মালা
লেগেছে সুগন্ধি মেখে আজ প্রেমের কথা বলা
রমনা বটমূলে গান থেমে গেলে
প্রখর রোদে
এ যেন মিছিল চলে
ঢাকার রাজপথে রঙের মেলা
এ বুঝি বৈশাখ এলো বলেই—
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে।
বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে ললনারা হেঁটে যায়—
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে
বখাটে ছেলেদের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই—
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে।
বছর ঘুরে এলো আরেক প্রভাতে
ফিরে এলো সুরেরই মঞ্জরি
পলাশ শিমুল গাছে লেগেছে আগুন
এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে
বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে ললনারা হেঁটে যায়—
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে
বখাটে ছেলেদের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই—
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে,
মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে।