‘আপনার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইছি’, মেজবাহর এই বক্তব্যের নেপথ্যে কী

পার্থ মজুমদার ও মেজবাহ আহমেদকোলাজ

গজলশিল্পী মেজবাহ আহমেদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ এনে গত শুক্রবার বিকেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক পার্থ মজুমদার। সেই পোস্টে অনেকে মেজবাহ আহমেদের এমন আচরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। কেউবা এটাকে জঘন্য ঘটনা বলেও অভিহিত করেছেন। পার্থ মজুমদারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন সংগীতাঙ্গনের অনেকে। এরপর মেজবাহ আহমেদের কাছের কয়েকজন উদ্যোগ নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুরাহা করতে চেয়েছিলেন। মেজবাহ আহমেদকে মগবাজার দিলু রোডের একটি স্টুডিওতে ডেকেছিলেনও শুক্রবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি। তবে সেদিন না এলেও গতকাল শনিবার পার্থ মজুমদারের কাছে অডিও বার্তা পাঠিয়ে বিষয়টির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন মেজবাহ। একই সঙ্গে এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন মেজবাহ আহমেদ।

বাপ্পা মজুমদার ও পার্থ মজুমদার।
ছবি : প্রথম আলো

পার্থ মজুমদারের কাছে মেজবাহ আহমেদের পাঠানো সেই অডিও বার্তা এমন, ‘দাদা, যেকোনোভাবেই হোক একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। একটা অন্যায় হয়ে গেছে। আপনি আমাদের শ্রদ্ধেয় বড় ভাই। আমি মনে করি, আপনি আমাদের সংগীতাঙ্গনের অসাধারণ শিল্পী, অসাধারণ মানুষও। আমি নিজেও খুব দুঃখিত, খুব আত্মগ্লানিতে ভুগছি। পল্লবদা, ছোট ভাই রাজীব, আমার বন্ধু সুমন (আসিফ)—ওরা সবাই আমাকে জানিয়েছে। আমি আপনার ফেসবুক পোস্ট দেখেছি। ওরা স্ক্রিনশট পাঠিয়েছে। আপনি মনে কিছু রাইখেন না, এটা সত্যিই আমার অন্যায় হয়ে গেছে।’

কথা প্রসঙ্গে মেজবাহ আহমেদ জানালেন পার্থ মজুমদারকে তিনি কতটা সম্মান করেন, ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন। মেজবাহ তাঁর অডিও বার্তায় পার্থ মজুমদারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনার মনে থাকার কথা, যখনই আমাদের সঙ্গে দেখা হতো, আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করতাম বড় ভাই হিসেবে। অনুরোধ রইল, মনে কোনো কষ্ট রাইখেন না। কীভাবে, কেন এই ঘটনা ঘটেছে, তার আর বিস্তারিতে না যাই। আমি অন্তরের অন্তস্তল থেকে আপনার কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইছি। আপনার সঙ্গে এত বছর যোগাযোগ, কখনো তো এ রকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে মনে করবেন, মনে কোনো কষ্ট নিবেন না। আমাকে বদদোয়া দিয়েন না। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি সত্যি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার সেই ভরসা আছে, আপনি আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন।’

ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে, তা জেনে নেওয়া যাক। গত শুক্রবার বিকেলে ফেসবুকে পার্থ মজুমদার জানান, মেসেঞ্জারে ফোন করে মেজবাহ আহমেদ তাঁর সঙ্গে আপত্তিকর ব্যবহার করেছেন, এমনকি গায়ে হাত তোলার হুমকিও দেন। ফেসবুকে পার্থ মজুমদার লেখেন, ‘আজ (শুক্রবার) সকালে মেজবাহ আহমেদ নামে একজন শিল্পী, যিনি গজল গান করেন, আমাকে ফোন করেন মেসেঞ্জারে, এরপর তিনি আমাকে ও বাপ্পাকে (পার্থ মজুমদারের ছোট ভাই সুরকার ও সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার) নিয়ে অশালীন কথা বলতে থাকেন। আমি ও বাপ্পা (মজুমদার) নাকি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির কলঙ্ক, যেহেতু আমরা লাইট মিউজিক করি। উনি অনেক জ্ঞানী মানুষ বলে নিজেকে দাবি করেন, তা তিনি হতেই পারেন; কিন্তু ব্যান্ড মিউজিক করি বলে আমার সঙ্গে উনি এমন আচরণ কি করতে পারেন? এই ব্যবহার কি আমার প্রাপ্য? এই কি আমার পুরস্কার?... অসভ্যতারও একটা সীমা আছে।’

এ বিষয়ে কথা হয় পার্থ মজুমদারের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘হুট করে সকালের দিকে তিনি আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন করেন। ভাবলাম জরুরি কিছু, তাই ফোনটা রিসিভ করি। ফোন করেই অকথ্য ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। আমি কেন ক্ল্যাসিক্যাল গান করছি না, কেন ব্যান্ড মিউজিক বা হালকা ধরনের মিউজিক করছি। আমি নাকি সংগীতজগতের কলঙ্ক। আমার কথা হলো, একজন শিল্পী হিসেবে আমি কী ধরনের মিউজিক করব, এটা তো আমার স্বাধীনতা। আমার বাবা শ্রদ্ধেয় বারীণ মজুমদারও তো আমাকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেননি। তাহলে তিনি বলার কে? শুধু তা-ই নয়, একপর্যায়ে তিনি আরও অনেক কথা বলেন, এসব মুখে আনা যায় না।’