ছন্দে ফিরেছে ব্যান্ড সংগীত
ক্যাসেট ও সিডির যুগে প্রবল উত্থানের পর ডিজিটাল যুগের শুরুতে এসে অনেকটা খেই হারিয়েছিল ব্যান্ড সংগীত। টালমাটাল সময়ে ধুঁকতে থাকা দেশের শীর্ষ ব্যান্ডগুলো আবারও গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে, একের পর এক নতুন গান ও অ্যালবাম আসছে।
আধা যুগের বেশি সময় ধরে ব্যান্ড সংগীত কার্যত নিশ্চল হয়ে ছিল, পুরোনো গান দিয়েই তাদের কনসার্ট চালিয়ে নিতে দেখা গেছে। পুরোনো গান আর কত? নতুন গানের জন্য অনুসারীদের তৃষ্ণাও বাড়ছিল।
ভক্তদের অপেক্ষা ঘুচিয়ে মৌলিক গান ও অ্যালবামে ফিরেছে ওয়ারফেজ, অর্থহীন, আর্টসেল ও শিরোনামহীনের মতো শীর্ষ ব্যান্ড। ১৭ বছর পর এসেছে আর্টসেলের অ্যালবাম অতৃতীয়, ৪ বছর পর অর্থহীনের নতুন গান। আসছে মাইলসের নতুন গান। গানের কক্ষপথেই আছে নগরবাউল, আরবোভাইরাস, চিরকুট, অ্যাশেজ, লালন, ব্ল্যাক, সোনার বাংলা সার্কাসের মতো আলোচিত ব্যান্ড। নতুন গান ও অ্যালবামের পাশাপাশি কনসার্টের সূচি মেলাতে এখন ব্যান্ডগুলোর হিমশিম অবস্থা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সব মিলিয়ে গত দুই বছরে আবার ছন্দ ফিরেছে ব্যান্ড সংগীত।
কেন এই ছন্দপতন
ক্যাসেট প্লেয়ারের রমরমা সময় পেরিয়ে সিডির যুগে থিতু হওয়ার আগেই ডিজিটাল মাধ্যমের উত্থান। ডিজিটাল মাধ্যমে কীভাবে গান প্রকাশ করা যাবে, শ্রোতারা কীভাবে শুনতে পারবেন—এসব নিয়ে ব্যান্ডগুলো যেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। ফলে শূন্য দশকের শেষভাগ থেকে গত দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যান্ড সংগীত অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে।
এই সময়ে ব্যান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘হতাশা’য় ছিলেন মনে করেন মাইলসের সদস্য হামিন আহমেদ। গত বুধবার তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একটি সিস্টেম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আগে অ্যানালগ সিস্টেমে কাজ হতো। এরপর ডিজিটাল সিস্টেম আসার পর কীভাবে গান হবে, সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলাম।’ ছয় থেকে আট বছরের মতো ব্যান্ড সংগীত অনেকটা নিশ্চল ছিল বলে জানান হামিন আহমেদ।হামিনের সঙ্গে একমত ওয়ারফেজের দলনেতা শেখ মনিরুল আলম। বুধবার প্রথম আলোকে বললেন, ‘অ্যানালগ থেকে স্ট্রিমিংয়ে রূপান্তরের সময় আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। কীভাবে গান প্রকাশ করব, এটা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা মিলছিল না।’
ছন্দে ফেরা
বছর দুয়েক হয় ব্যান্ডগুলো কক্ষপথে ফিরতে শুরু করে, জানালেন হামিন আহমেদ। তাঁর ভাষ্যে, স্পটিফাই, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ব্যান্ডগুলো মৌলিক গান প্রকাশে উৎসাহ পাচ্ছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। শুধু বিনা মূল্যেই নয়, অনেক শ্রোতা ডিজিটাল অ্যালবাম কিনেও গান শুনছেন। ‘গান’ অ্যাপসহ একাধিক প্ল্যাটফর্ম থেকে শ্রোতারা আর্টসেলের অতৃতীয়সহ বেশ কয়েকটি অ্যালবাম কিনে শুনছেন।গত বছরের মাঝামাঝি থেকে একের পর এক নতুন গান ও অ্যালবাম প্রকাশের খবর মিলেছে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকেও একাধিক ব্যান্ডের গান এসেছে। এ বছর চারটির মতো ব্যান্ড তাদের অ্যালবামের ঘোষণা দিয়েছে।
পুরোনো ব্যান্ডের পাশাপাশি নতুন ব্যান্ডগুলোও এখন নিয়মিত গান প্রকাশ করছে। ফলে ব্যান্ডের গানের সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়ছে।অ্যানালগ যুগে অ্যালবাম প্রকাশে ব্যান্ডকে গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী থাকতে হতো, একটি অ্যালবাম রেকর্ড করা থেকে ক্যাসেট ও সিডি আকারে বিপণনে হেপা ছিল। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যান্ডের জন্য অনেকটা শাপেবর হয়েছে। মাকসুদ ও ঢাকার দলনেতা মাকসুদুল হক বলছিলেন, ব্যান্ডগুলো নিজেরা গান রেকর্ড করে নিজেরাই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দিচ্ছে। ভালো এক্সপোজার পাচ্ছে।সহজেই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর পাশাপাশি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে মেধাস্বত্ব বাবদ অর্থও মিলছে বলে জানালেন হামিন আহমেদ।
তাঁর ভাষ্যে, ইউটিউব, স্পটিফাইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে গান তুলে ব্যান্ডগুলো প্রাপ্য রয়্যালিটি পাচ্ছে। ২০০, ৩০০ কিংবা ১ হাজার ডলার—যার যা প্রাপ্য, তা-ই পাচ্ছে। এটি ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জন্য আশাজাগানিয়া বিষয়।মাকসুদুল হক বলছেন, গানের সংখ্যা বাড়াটা জরুরি। পাশাপাশি গানের মান নিয়েও ভাবতে হবে। একই কথা বললেন ওয়ারফেজের টিপু, ‘স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মানুষ গান শুনছে। আমাদের ভালো গান দিতে হবে।’