গজল আর কাওয়ালি আমার আত্মার খোরাক

ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা দেয়ালের দেশ সিনেমায় মাহতিম শাকিবের গান ‘বেঁচে যাওয়া ভালোবাসা’ প্রশংসা কুড়িয়েছে। ঈদে আসবে আটটি নতুন গান। সম্প্রতি ভারতের ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলায় মনোনয়ন পেয়েছিলেন এই তরুণ গায়ক। সাম্প্রতিক নানা প্রসঙ্গে গত রোববার মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে ‘বিনোদন’
মাহতিম শাকিব। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো :

কাভার গান করতেন। সেখান থেকে সিনেমার গানে আপনার কীভাবে আসা?

আমি সব ধরনের গানই করতে চাই। এমনকি একাধিক ভাষার গান করতেও ভালো লাগে। দু-একটি জায়গায় নিজেকে আটকে রাখতে চাই না। কভারের পর মৌলিক গান করেছি। ক্যানভাস যত বড় হবে, সুযোগ তত বাড়বে। অনেক আগে থেকেই মনে হয়েছিল সিনেমায় গান করব। যখন ডাক পড়ল, তখন রাজি হয়েছি।

প্রথম আলো :

সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমার গানটি নিয়ে অভিজ্ঞতা কেমন?

বিশেষভাবে গানটির জন্য ইমন দাদার (সুরকার ইমন চৌধুরী) কাছে কৃতজ্ঞতা। তাঁর সঙ্গে কোনো গানে কাজ করার সুযোগটাই আমার জন্য বিশেষ কিছু। গানটি করে ভালো লেগেছে। সিনেমাটির পরিচালক মিশুক মনির আলাদা একটা কাজের ধরন রয়েছে। তাঁর ভাবনা ভালো লেগেছে। গানটি গাওয়ার ব্যাপারে তিনি আমাকে সব রকম স্বাধীনতা দিয়েছেন। প্রকাশের পর শ্রোতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি।

মাহতিম শাকিব। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো :

সিনেমার গানের ক্ষেত্রে কি আলাদা প্রস্তুতি থাকে?

আমি গানটি কোন প্রেক্ষাপটে গাইছি, সেটা মাথায় থাকে। গল্পে তখন নায়কের সিচুয়েশন কী ছিল, তাঁর টোন কেমন ছিল—এগুলো অনুভব করার চেষ্টা করি। যে কারণে ডাব করার সময় পরিচালক সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমাকে সহায়তা করেছেন। সিনেমার ভিজ্যুয়ালটা অনেক বেশি সহায়তা করে। এসব প্রস্তুতি নিয়ে গান করার চেষ্টা করি।

প্রথম আলো :

কলকাতায় আপনার গানের আলাদা একটা শ্রোতা তৈরি হচ্ছে, তাঁদের কাছ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পান?

এখন সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে পরিসংখ্যান জানা যায়, কত মানুষ গান শুনছেন। বুঝতে পারি, একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তাঁরা আমার গানের জন্য অপেক্ষা করেন। ভারতের এই শ্রোতাদের পাওয়া সৌভাগ্যের। অনেক সময় তাঁদের কাছ থেকে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকে। বাংলাদেশ ও ভারত থেকে ভক্তদের ভালোবাসা পাওয়াটা আমার কাছে আশীর্বাদ।

প্রথম আলো :

সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার হয়ে গেল, পরপর দুবার মনোনয়ন পাওয়ার পর খালি হাতে ফেরাটা কি কষ্ট দিয়েছে?

মোটেও না। তালিকায় মনোনয়ন পাওয়া যে নামগুলোর পাশে আমার নাম আছে, এটাও তো অনেক বড় প্রাপ্তি। অরিজিৎ সিং, অনুপম রায়ের মতো গায়কদের সঙ্গে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। তাঁদের সঙ্গে মনোনয়ন পাওয়াই আমার প্রাপ্তি। গর্ব অনুভব করেছি। পুরস্কার পেলে ভালো লাগত কিন্তু পুরস্কার বড় ব্যাপার নয়। আমি মনোনয়ন পেয়েই রোমাঞ্চিত।

মাহতিম শাকিব। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো :

বাংলাদেশ বা ভারতের কোন সংগীতশিল্পীদের গান বেশি শোনেন?

আমি কাওয়ালি ও গজলে বুঁদ হয়ে থাকি। গুলাম আলী, নুসরাত ফতেহ আলী খানসহ অনেকের কাছ থেকে আত্মার খোরাক সংগ্রহ করি। তাঁদের এক্সপ্রেশন, উপস্থাপনায় বুঁদ হয়ে থাকি। আমি অনেক সময় বাইরে বের হলে হয়তো কোনো সহকর্মী হয়তো বলছেন, অমুক গানটা ভাইরাল হয়েছে, শুনেছি কি না? তখন আমি লজ্জায় পড়ে যাই। কারণ, আমি এই গানগুলো কম শুনি। হয়তো পরে ইউটিউবে ঢুকলে মনে হয় শুনি। তখন দেখা যায়, ইউটিউবে ঢোকার পর আমার পছন্দের কোনো একটা গজল বা কাওয়ালি সাজেস্ট করা হয়েছে। সেটা শুনতে গিয়ে কী জন্য ইউটিউবে এসেছিলাম, সেটা ভুলে যাই। যে কারণে অন্যদের কোনো গান শোনা হয় না।

প্রথম আলো :

কাওয়ালি ও গজলের প্রতি এই ভালো লাগাটা কীভাবে তৈরি হলো?

তখন আমার বয়স ৮ কি ৯ বছর হবে। আমাকে গান শেখাতেন ওস্তাদ রফিক মাহমুদ। তিনি বিদেশের ইংরেজি গানও শেখাতেন আবার দেশের সব রকম গানও শেখাতেন। তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিতেন। যেটা শুনতে ভালো লাগে, সেটাই শুনতে থাকি। তিনি সব সময় বলতেন, যত বেশি শুনবে, ভান্ডার তত বড় হবে। আট বছর বয়সে প্রথম গজল শুনি গুলাম আলী স্যারের। তখন হিন্দি ভাষা আর উর্দু ভাষা যে আলাদা, বুঝিনি। তখন গজল শুনে ভালো লাগে। সেই থেকে ভালোবাসা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

মাহতিম শাকিব। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো :

আপনি গান কাভার দিয়েই শুরুটা করেছেন। চাইলে তো মৌলিক গান প্রকাশ করতে পারতেন, সেই পথে হাঁটেননি কেন?

আমার গান কভার করার উদ্দেশ্য ছিল দুটি। এক. আমি মানুষের সামনে আসতে চেয়েছিলাম। কারণ, একই গান আলাদা সংস্করণে দর্শক পছন্দ করেন। সেটা করেছিলেন। পরিচিতিও পেয়েছিলাম। দ্বিতীয়ত, আমি চেয়েছিলাম, কভারের মাধ্যমে দর্শকেরা আমাকে যদি চেনেন, তাহলে আমি যে গানগুলো পছন্দ করি, পরে সেই গানগুলো করব। আমার পরিকল্পনামতোই আমি হেঁটেছি। আর প্রথম দিকে মৌলিক গান করা যেত কিন্তু তখন হয়তো সুর-সংগীতে ততটা পরিণত ছিলাম না।

প্রথম আলো :

গজল, কাওয়ালি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

যেখানে যেটা বিক্রি হয় না, সেখানে সেটা বিক্রি করা কঠিন। যে কারণে গজল আর কাওয়ালিকে আত্মার খোরাকের জন্য বেছে নিয়েছি।

প্রথম আলো :

এবার ঈদের জন্য কয়টি গান করেছেন?

এবার ঈদের জন্য এখন পর্যন্ত আট থেকে নয়টি গান করেছি। আরও কিছু গানে কণ্ঠ দিতে হবে। এ ছাড়া আগে করা গানও রয়েছে। নাটকেও গেয়েছি। কিন্তু কোন গানগুলো ঈদে মুক্তি পাবে, এখনো বলতে পারছি না। কারণ, অনেকেই বলছেন গান ঈদে মুক্তি দেবেন। দেবেন কি না, জানি না। যে কারণে সঠিক সংখ্যাটা বলা কঠিন।