হৃদি শেখকে কতটা জানেন?
আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস আজ। দিনটি উপলক্ষে নাচ নিয়ে কথা বলেছেন নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হৃদি শেখ।
‘আমি নানা ধরনের ক্রিটিসিজমের (সমালোচনা) মুখোমুখি হয়েছি। তবু থামিনি। আমাকে কেউ সুযোগ তৈরি করে দেয়নি, নিজে তৈরি করে নিয়েছি, ’ গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন হৃদি শেখ। প্রায় দুই দশক ধরে নাচের সঙ্গে আছেন, নাচকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন এই তরুণ।
পড়াশোনা করতে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন হৃদির মা–বাবা, সেখানেই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পাঁচ বছর বয়স থেকে নাচেন হৃদি। ২০১৬ সালে ‘সেরা নাচিয়ে’তে চ্যাম্পিয়ন হন, এরপর ঢাকায় আসা-যাওয়া বাড়ে। ২০২০ সালের পর থেকে ঢাকায় থিতু হয়েছেন। পুরোদস্তুর নৃত্যশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়েছেন।
পেশা হিসেবে নাচকে বেছে নিলেন কেন? হৃদি বলেন, ‘নাচের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি, আবেগকে তুলে ধরতে পারি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছি।’ হৃদির ভাষ্য, ‘নাচের মাধ্যমে নারীদের অনুপ্রাণিত করতে পারছি। নারীদের একটা আশা দিতে পারছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারছি।’
‘আমি নানা ধরনের ক্রিটিসিজমের (সমালোচনা) মুখোমুখি হয়েছি। তবু থামিনি। আমাকে কেউ সুযোগ তৈরি করে দেয়নি, নিজে তৈরি করে নিয়েছি।
পশ্চিমা নাচের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী নাচের ফিউশন করে পরিচিতি পেয়েছেন হৃদি। কোরিওগ্রাফার হিসেবেও পরিচিত হৃদি। ‘বেণি খুলে’, ‘ঝুমকা’, ‘চেনা চেনা’র মতো আলোচিত গানের ভিডিও চিত্রের তিনি কোরিওগ্রাফার
শৈশবে মস্কোয় কত্থক শিখেছেন; কৈশোরে হিপহপ, ওয়েস্টার্ন ও আরবান ড্যান্সের সঙ্গে পরিচয়। পশ্চিমা নাচের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী নাচের ফিউশন করে পরিচিতি পেয়েছেন হৃদি। কোরিওগ্রাফার হিসেবেও পরিচিত হৃদি। ‘বেণি খুলে’, ‘ঝুমকা’, ‘চেনা চেনা’র মতো আলোচিত গানের ভিডিও চিত্রের তিনি কোরিওগ্রাফার।
কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজের পটভূমি জানতে চাইলে হৃদি জানান, ২০১২ সালে একবার হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েছিলেন। তখন নাচতে পারছিলেন না। তবে তিনি তো সব সময় নাচের সঙ্গেই থাকতে চান। ফলে কোরিওগ্রাফি শুরু করেন। হৃদির ভাষ্য, ‘কোরিওগ্রাফি করতে গেলে আরও বেশি দক্ষতা লাগে। আমি নাচ ভালোবাসি। নাচ আমার জন্য অনেক দরজা খুলে দিয়েছে। নাচ আমার ফাউন্ডেশন (ভিত)। আমি সব সময়ই নৃত্যশিল্পী থাকব।’
ঢাকার শীর্ষ তরুণ নৃত্যশিল্পীদের একজন হৃদি। ‘হৃদি শেখ স্টারবেজ ড্যান্স স্টুডিও’ নামে নাচের প্রতিষ্ঠান খুলেছেন, শিশু-কিশোর ও তরুণদের নাচ শেখান।
তরুণেরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন
ঢাকার শীর্ষ তরুণ নৃত্যশিল্পীদের একজন হৃদি। ‘হৃদি শেখ স্টারবেজ ড্যান্স স্টুডিও’ নামে নাচের প্রতিষ্ঠান খুলেছেন, শিশু-কিশোর ও তরুণদের নাচ শেখান।
তরুণেরা নাচকে পেশা হিসেবে নিতে কতটা আগ্রহী, জানতে চাইলে হৃদি বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে নাচ নিয়ে অনেক আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি। শিশুরাও নাচে আসছে। অনেক মেধাবী শিশু নাচে এসেছে। সামাজিকভাবেও নাচ নিয়ে ধারণায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। আমিও পরিবর্তনের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি। ইউটিউব, টিকটক ও ড্যান্স রিয়েলিটি শোতে পেশাদার নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা দেখে তরুণেরা আগ্রহী হচ্ছেন। নাচের মাধ্যমে অনেক সুযোগ তৈরি হয়। এমন নয়, নাচ করলে ফিউচার নেই।’
নাচকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। হৃদি বলেন, ‘সামাজিক চাপ ও প্যাশনের মধ্যে ভারসাম্য রাখাটা চ্যালেঞ্জের। আমিও নানা ধরনের ক্রিটিসিজম (সমালোচনা) ফেস (মোকাবিলা) করেছি। তবু থামিনি। আমাকে কেউ সুযোগ তৈরি করে দেয়নি, নিজে তৈরি করে নিয়েছি। আমাদের ফাইট (লড়াই) করতে হয়।’ হৃদির ভাষ্য, ‘আমি দুই দশক ধরে নাচছি। নৃত্যশিল্পের পেশাটা সহজ নয়। লেগে থাকতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’
কাজে দিল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম
ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেই সরব হৃদি শেখ। ২০০৭ সাল থেকে ইউটিউবে সক্রিয় তিনি। ইউটিউবে তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। ফেসবুকে প্রায় ৭ লাখ, ইনস্টাগ্রামে প্রায় ৫ লাখ ফলোয়ার রয়েছেন। কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবেও পরিচিত তিনি।
নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কতটা ভূমিকা রেখেছে? হৃদি বলেন, ‘ইউটিউব আমার ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। চ্যানেলটা খুলেছিল আমার মা, আমার স্টেজের পরিবেশনাগুলো আপলোড করা হতো। অনেক সাড়া পড়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘সময়ের পরিবর্তন ঘটছে, প্রজন্মও বদলাচ্ছে। নৃত্যশিল্পীকে আগে টিভি চ্যানেলে যেতে হতো, স্টেজ খুঁজতে হতো। এখন নিজেই কনটেন্ট বাসায় রেডি করে আপলোড করতে পারব। কেউ ট্যালেন্টেড (মেধাবী) হলে ফেমাস (পরিচিত) হতে পারবে। এটাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জাদু। ড্যান্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর—দুই মাধ্যমেই কাজ চালিয়ে যাব।’
ইউটিউব আমার ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাইরের কনটেন্ট ক্রিয়েটরকেও ঢাকায় হৃদির সঙ্গে কনটেন্ট বানাতে দেখা যায়। মাঝখানে জার্মান টিকটকার ও নৃত্যশিল্পী নোয়েল রবিনসনের সঙ্গেও কনটেন্ট বানিয়েছেন তিনি।
বাইরের কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে হৃদি বলেন, ‘খুবই ভালো অভিজ্ঞতা। ওদের দর্শকের সামনে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করি। নোয়েলের সঙ্গে কাজ করেছি। নোয়েলের সঙ্গে একটা বাংলা গানে ড্যান্স কাভার করেছি। নিজেও যখন বাইরে ট্রাভেল (ঘোরাঘুরি) করি, তখন ড্যান্স কনটেন্ট বানাই। তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে কোলাবরেট করেছি। আমি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করি। নাচ হলো এমন একটা ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা), যেটা সবাই বোঝে। ল্যাঙ্গুয়েজটা (ভাষা) আমি সব জায়গায় প্রকাশ করতে চাই।’
‘বেঙ্গলি বিউটি’ ছেড়েছেন
‘বেঙ্গলি বিউটি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন হৃদি। তবে ভারতের ‘ড্যান্স প্লাস সিজন থ্রি’-তে অংশ নিতে গিয়ে ছবিটি শেষ পর্যন্ত তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। অভিনয়ের বাইরে নবাব এলএলবি সিনেমায় আইটেম গানে নেচেছেন তিনি।
নিয়মিতই আইটেম গানে নাচার প্রস্তাব পান, তবে বুঝেশুনে পা ফেলতে চান তিনি। হৃদি জানান, সামনে অভিনয় করতে চান; ভালো গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালকের অপেক্ষায় আছেন। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘ইনসাফ’ সিনেমার একটা গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন তিনি।