‘সেরাকণ্ঠ জয়পুরহাট’–এর ফাইনালে জয়ী হলেন যারা
জয়পুরহাটের তৃণমূল পর্যায়ে কণ্ঠশিল্পী অন্বেষণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আট মাস আগে শুরু হওয়া ‘সেরাকণ্ঠ জয়পুরহাট’ গ্র্যান্ড ফিনালে হয়ে গেল। গতকাল সোমবার বিকেলে সার্কিট হাউস মাঠে শুরু হওয়া গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। যখন নির্বাচিত সেরাকণ্ঠ ঘোষণা করা হয়, তখন সার্কিট হাউসের মাঠ দর্শকে কানায়-কানায় পূর্ণ ছিল।
গ্র্যান্ড ফিনালের বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম, ফাহমিদা নবী ও সুরকার-গীতিকার মিঠু হাসান। যখন ‘ক’ গ্রুপের খুদে শিল্পী কালাই উপজেলার আকাশ মন্ডলের ডাক পড়ল, সে মঞ্চে এসেই খুরশিদ আলমের গাওয়া ‘সোহাগ’ ছায়াছবির ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে, এ বাতাসকে সাক্ষী রেখে’ গানটি গাইতে শুরু করল। দর্শকও উচ্ছ্বাসিত হয়ে তার তালে তারে গানটি গাইতে থাকেন। মঞ্চে বিচারকের দায়িত্বে থাকা একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী শিল্পী খুরশিদ আলমও অবাক দৃষ্টিতে এই খুদে শিল্পীর পরিবেশনা দেখছিলেন। আকাশ মন্ডলের গান শেষে মঞ্চে থাকা আরেক বিচারক কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, ‘আমরা তো ছোট্ট চাচার কণ্ঠে গানটি শুনলাম। আমরা এখন বড় চাচার কণ্ঠে গানটি শুনতে চাই। জয়পুরহাটে জন্ম নেওয়া গুণী কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম বিচারকমণ্ডলীর আসন থেকে উঠে মঞ্চে এসে গানটি গাইলেন।
৮১ বছরের খুরশিদ আলমের কণ্ঠে সেই গান শুনে তাঁর জন্মভূমির দর্শকেরা মুগ্ধ হয়ে কড়তালি দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। পরে খুরশিদ আলম আরও দুটি গান পরিবেশন করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছ, জয়পুরহাটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীন গাজীর উদ্যোগে‘গানে গানে সুরে সুরে, আওয়াজ তোলো প্রাণে প্রাণে’ স্লোগান নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে কণ্ঠশিল্পী বাছাইয়ে ‘সেরাকণ্ঠ জয়পুরহাট’ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। জেলার ৩২টি ইউনিয়নে সেরাকণ্ঠের অডিশন শুরু হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে বাছাইয়ের পর পাঁচটি উপজেলা পর্যায়ে সেরাকণ্ঠের অডিশন শুরু হয়। দুটি ক্যাটাগরিতে তৃণমূল পর্যায়ে প্রায় সাত হাজার প্রতিযোগী অংশ নেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়। বর্তমান জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী সেরাকণ্ঠ জয়পুরহাট গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজনের উদ্যোগ নেন।
গতকাল বিকেলে সার্কিট হাউসে তারুণ্যের উৎসব মেলায় ‘সেরাকণ্ঠ জয়পুরহাট’ গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন লড়াই শেষে ক বিভাগে মোহন, আকাশ মন্ডল, অনুপ কুমার মালী, শামীম রেজা রিফাত, সুদিপ্ত সরকার অংকিত গ্র্যান্ড ফিনালেতে উঠে আসে। এ বিভাগে ক্ষেতলাল অঞ্চলের মোহন সেরা হয়। খ বিভাগে হাফিজুর রহমান, কনিকা দেবনাথ, মাহমুদুন নবী সনি, রেজাউল ইসলাম, মোমিনুর রহমান উঠে আসেন। আক্কেলপুর উপজেলার হাফিজুর রহমান সেরা হন। জেলা প্রশাসক আফরোজা আক্তার চৌধুরী ও অতিথি দুই বিভাগের সেরা শিল্পীদের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট, সনদসহ বিভিন্ন পুরস্কার তুলে দেন। প্রথম রানার্সআপদের ৩০ হাজার, দ্বিতীয় শিল্পীদের ২০ হাজার এবং তৃতীয় রানার্সআপদের ১০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট, সনদ ও পুরস্কার দেওয়া হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) সবুর আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তৃপ্তি কণা মন্ডল, আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল ইসলাম, কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম, পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান, ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আল জিনাত, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম, মিজানুর রহমান, উজ্জ্বল বাইনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম বলেন, ‘জয়পুরহাট জেলা আমার জন্মভূমি। আমিও তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। তৃণমূল পর্যায়ে কণ্ঠশিল্পী বাছাইয়ে সেরাকণ্ঠের আয়োজন করায় জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আক্তার চৌধুরী বলেন, জয়পুরহাট জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক প্রতিভাবান কণ্ঠশিল্পী রয়েছেন। সুযোগের অভাবে তাঁরা প্রতিভা প্রকাশ করতে পারেননি। প্রায় আট মাস আগে জেলার ৩২টি ইউনিয়নের সেরাকণ্ঠের অডিশন শুরু হয়েছিল। গ্র্যান্ড ফিনালের মাধ্যমে সেরাকণ্ঠ জয়পুরহাট কণ্ঠশিল্পী বাছাই অনুষ্ঠান শেষ হলো।