জুবিনের মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক, পানিতে নামতে জোরাজুরি?

জুবিন গার্গপিটিআই

জনপ্রিয় ভারতীয় গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ময়নাতদন্তে স্পষ্ট হয়েছে, পানিতে ডুবেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে কি জোর করে পানিতে নামতে বাধ্য করা হয়েছিল? এমন প্রশ্ন তুলছেন অনুরাগীরা।

ঘটনার আগে একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। যদিও ভিডিওটির সত্যতা এখনো যাচাই হয়নি।

পার্টি থেকে সমুদ্রে

ঘটনার আগের রাতে একটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন সন্দীপন গার্গ, শেখর গোস্বামী ও গায়কের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিদ্ধার্থ শর্মা। সেখানে মদ্যপানের ব্যবস্থাও ছিল বলে জানা গেছে। পরদিন সকালে তাঁরা সমুদ্রের উদ্দেশে রওনা হন। জুবিনও ছিলেন সঙ্গে।

গায়কের কাছের মানুষেরা বলছেন, পানিতে নামতে ভয় পেতেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁকে স্কুবা ডাইভিং করতে বলা হলো কেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সঙ্গে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল না বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন
জুবিন গার্গ
ইনস্টাগ্রাম থেকে

ভিডিওতে কী দেখা গেল

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, শেখর গোস্বামী বারবার গায়ককে পানিতে নামতে বলছেন। একপর্যায়ে জুবিন বলেন, শেখরই একসময় তাঁকে সাঁতার শিখিয়েছিলেন। উত্তরে শেখর বলেন, ‘আরে, চলো চলো।’ জুবিন তখন প্রশ্ন করেন, ‘তুমিও আমার সঙ্গে যাবে তো?’ শেখর আশ্বাস দেন, ‘জলে নামলে কিছু হবে না।’

উপস্থিত অন্য একজন বলেন, ‘তুমি যাও, কিন্তু তোমায় ফিরে আসতে হবে।’ আরেকজন তখন হেসে বলেন, ‘এটা খুবই সহজ। তুমি ফিরে আসবেই।’
যদিও শেখর গোস্বামী এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

লাইফ জ্যাকেট নিয়েও ধোঁয়াশা
ভিডিওতে দেখা গেছে, জুবিনকে লাইফ জ্যাকেট পরানোর চেষ্টা করছেন একজন। তবে তিনি রাজি হননি। কেন যথেষ্ট সতর্কতা নেওয়া হলো না, কেন তাঁকে পানিতে নামতে চাপ দেওয়া হলো, এসব প্রশ্ন তুলছেন অনুরাগীরা।

আরও পড়ুন
গায়ক জুবিন গার্গ
শিল্পীর ফেসবুক পেজ
৫২ বছর বয়সে জুবিনের বিদায়
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর জন্ম নেওয়া জুবিন ছিলেন একাধারে গায়ক, সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার, সংগীত প্রযোজক, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক। ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত যুব মহোৎসব পাশ্চাত্য একক পরিবেশনায় স্বর্ণপদক লাভ করার পর জুবিনের জীবনের মোড় পাল্টে যায়।আবেগ, সুর, বিদ্রোহ, প্রেম—সবকিছুর মিশেল ছিলেন আসামের সমকালীন জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গ। তাঁর কণ্ঠে যেমন ছিল আঞ্চলিকতার মাটির গন্ধ, তেমনি ছিল আধুনিকতাও। ভক্তদের কাছে তিনি শুধু গায়ক ছিলেন না, ছিলেন আবেগ, ছিলেন এক যুগের প্রতীক। অসংখ্য বিতর্ক সত্ত্বেও তাঁর কণ্ঠের মায়া, সৃষ্টিশীলতা আর মানবিকতার জন্য তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের গানের জগতে জনপ্রিয় নাম। মাত্র ৫২ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারালেন এই জনপ্রিয় গায়ক। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত গোটা আসাম, বিস্মিত ভারতের সংগীতপ্রেমীরা। গতকাল রোববার, গুয়াহাটির লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলই বিমানবন্দর থেকে কাহিলিপাড়া পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথজুড়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেন শিল্পীকে শেষবার দেখতে। আগের রাতেই সিঙ্গাপুর থেকে পৌঁছায় তাঁর মরদেহ।

গায়কের মৃত্যুর পর পরিবার, সহকর্মী আর ভক্তরা শোকাহত। কিন্তু পাশাপাশি বাড়ছে ধোঁয়াশা—এই মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, নাকি গাফিলতির ফল?

তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা