ওপারেও শান্তিতে থাকবেন ‘পাথরে ফুল ফোটানোর মালি’

১৬ আগস্ট ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামে জন্ম আইয়ুব বাচ্চুর। তাঁর বাবা ইশহাক চৌধুরী এবং মা নুরজাহান বেগম। পরিবারের নিষেধ সত্ত্বেও গানের প্রতি ভালোবাসা থেকে দেশ জয় করেছেন। রক ব্যান্ড ‘এলআরবি’র গায়ক ও গিটারবাদক হিসেবে পুরো বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। ‘ফেরারি মন’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘হকার’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘রুপালি গিটার’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা আইয়ুব বাচ্চু। তারকা খ্যাতির তুঙ্গে অবস্থান করলেও ছিলেন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে। তারকা নয়, ‘ভালো মানুষ’ হয়েই বাঁচতে চেয়েছেন জীবনভর। চার বছর আগের এই দিনে রুপালি গিটার ফেলে বহুদূরে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর চিরতরুণ সেই ব্যান্ড তারকার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল চিরকালের জন্য। গিটার হাতে আর মঞ্চ মাতাবেন না তিনি। আজ এই তারকার প্রয়াণ দিনে ফেসবুকে তাঁর সহযাত্রী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তরা নানা স্মৃতিকথা লিখেছেন।
১ / ৭
আইয়ুব বাচ্চু ও কুমার বিশ্বজিৎ দুজনেরই জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। গানের টানে ঢাকায়ও এসেছিলেন কাছাকাছি সময়ে। দুজনের সম্পর্ক ছিল দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে কুমার বিশ্বজিৎ লিখেছেন, ‘হৃদয়ে আছিস, থাকবি আজীবন। ভালো থাকিস বন্ধু।’
ছবি : ফেসবুক
২ / ৭
আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ডের গান গাইলেও হাতেগোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রের জন্য গেয়েছেন তিনি। এসব গানে সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন আরেক গুণী শিল্পী কনকচাঁপা। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর চ্যানেল আই শোকবই চালু করে। সেই শোকবইয়ে সহশিল্পীকে নিয়ে লিখেছিলেন নানা কথা। সেদিনের স্মৃতি মনে করে কনকচাঁপা আজ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শোকবইয়ে লিখতে গিয়ে আমি শোক লিখতেই পারছিলাম না। শোকের বদলে উঠে এল গর্ব! এই সুরের এবং গিটারের জাদুকর যা সৃষ্টি করেছেন, তার একটি গানও মাটিতে পড়েনি, সোজা চলে গিয়েছে মানুষের হৃদয়ের ভেতর। সেসব গান এ দেশের যুবসমাজ নামতার মতো মুখস্থ গাইতে পারেন। তাঁর গান খাতায় লিখতে হয় না! এর চেয়ে বড় সফলতা আর আছে একজন শিল্পীর? আমার কাছে খুব বিস্ময় মনে হয় যে রক গানে তিনি কীভাবে রেশম কোমল মেলোডি ঢোকাতেন? তাঁর গান ফাইনালি কবিতা হয়ে যেত, কাজটি পাথরে ফুল ফোটানোর মতো কঠিন। কিন্তু সেই কঠিন কাজ যে সহজে করে ফেলেন, তাঁকে আমি শিল্পী বলি না, বলি সাধক। আর সাধকদের জন্য বুকের ভেতরে শোক আসে না, আসে গর্ব। আমাদের আইয়ুব বাচ্চু এ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ গিটারবাদক, আইয়ুব বাচ্চু আমাদের, গর্ব তো করবই। ওপারেও শান্তিতে থাকবেন পাথরে ফুল ফোটানোর মালি।’
ছবি : ফেসবুক
৩ / ৭
গীতিকবি, সুরকার প্রিন্স মাহমুদ একটি স্থিরচিত্র পোস্ট করে লিখেছেন, ‘হারায়ে বুঝেছি তুমি কী ছিলে আমার, কী ছিলে আমার তুমি বোঝানো না যায়। অক্টোবরের ১৮–কে দুঃস্বপ্ন মনে হয়। বুকে চাপ অনুভূত হয়। এই ছবির সবাই আছি, একজন নাই। সত্যিই চলে গেলেন ভাই? এত দূরে চলে গেলেন? এতই দূরে...’
ছবি : ফেসবুক
৪ / ৭
ব্যান্ড তারকা মাকসুদ তাঁর সঙ্গে একটি স্থিরচিত্র পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ফটোগ্রাফস অ্যান্ড মেমোরিজ আর অল দ্যাট উই হ্যাভ। টিল উই মেট এবি।’
ছবি : ফেসবুক
৫ / ৭
আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে একাধিক স্থিরচিত্র পোস্ট করে সুরকার ও সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন লিখেছেন, ‘আমরা যাদের ভালোবাসি তারা চলে যায় না, তারা প্রতিদিন আমাদের পাশে হাঁটছে। অদেখা, অশ্রুত, কিন্তু সব সময় কাছাকাছি। এখনো ভালোবাসি, এখনো মিস করি এবং খুব প্রিয়। আল্লাহ আপনাকে স্বর্গবাসী করুন। প্রিয় বাচ্চু ভাই, ছিলেন, আছেন, থাকবেন।’
ছবি : ফেসবুক
৬ / ৭
রেনেসাঁ ব্যান্ডের সদস্য সুরকার, সংগীত পরিচালক ও গায়ক নকিব খান তাঁর ফেসবুকে আইয়ুব বাচ্চুকে মনে করে লিখেছেন, ‘সময় কীভাবে চলে যায়! আমাদের প্রিয় বাচ্চু, তুমি সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবে। আল্লাহ তোমাকে জান্নাতবাসী করুক, আমিন।’
ছবি : ফেসবুক
৭ / ৭
গিটার জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিনে স্মৃতিকাতর হলেন সংগীতের আরেক জনপ্রিয় শিল্পী আসিফ আকবর। তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চুর একটি স্থিরচিত্র পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমার ছেলে রণ তাঁর বিয়ের দু–তিন দিন আগে হঠাৎ করে বাচ্চু ভাইয়ের কথা মনে করিয়ে দিল। শেষ কয়েকটা বছরে আমরা হারিয়েছি অনেক লিজেন্ড। প্রথমবারের মতো মেরিল-প্রথম আলো অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর হোটেল রাজমণি ঈশা খাঁতে একটা পার্টি থ্রো করেছিলাম। সেদিন বাচ্চু ভাই অন্তত দুই ঘণ্টা গিটার বাজিয়ে আমাকে স্নেহের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন। একটা সময় তাঁর সঙ্গে খুব পারিবারিক সখ্য হয়ে যায়। আম্মাকে খুব ভালোবাসতেন বাচ্চু ভাই, আমি না জানলেও তিনি কুমিল্লার বাসায় গিয়ে আম্মার সঙ্গে দেখা করতেন। বাচ্চু ভাইকে রণ স্মরণ করে বলেছে, বাচ্চু আংকেল বেঁচে থাকলে আজকে তাঁর বিয়ের রং হতো আরও রঙিন। বাবা-ছেলের মনোজগতে একই সময়ে বাচ্চু ভাইয়ের এন্ট্রি কাকতালীয় নয়, এটাই আসল সত্য। আর এভাবেই আমাদের আইয়ুব বাচ্চু বেঁচে থাকবেন নানান মোড়ে ঘুরতে থাকা যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। চারটি বছর হয়ে গেল মানুষটি নেই। সব রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ, অভিমান, ভালোবাসা ও বলা না–বলা হিসাব ছাড়িয়ে আল্লাহর প্রিয় হয়ে গেছেন তিনি। কত সংগ্রাম আর আনন্দে ওনার সান্নিধ্য পেয়েছি, এসবের ইয়ত্তা নেই। আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি বাচ্চু ভাই। আপনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন আমাদের ভাবজগতে। সালাম জানাই। ভালোবাসা অবিরাম।’
ছবি : ফেসবুক