মাহতিমের একটা স্বপ্ন আছে

মাহতিম শাকিবছবি : প্রথম আলো

মিষ্টি একটা গান। আদরমাখা গায়কি। ‘তুমি বৃষ্টি চেয়েছ বলে, কত মেঘের ভেঙেছি মন, আমি নিজের বলতে তোমায় চেয়েছি...।’ কথা, সুরের সঙ্গে শিল্পীর গায়কি আর পর্দার দৃশ্য মিলেমিশে একাকার। কলকাতার আলোচিত একটি সিনেমায় স্থান পাওয়া গানটি ইউটিউবে শোনার পর অনেকে ভাবেন, গায়ক কলকাতার কেউ। আসলে তা নয়। গানটি গেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ গায়ক মাহতিম শাকিব। ২৩ বছর বয়সী এই তরুণের গানটি শুনে কেউ বলেছেন, গানটা মনের মধ্যে একেবারে গেঁথে গেছে!

‘তুমি জানতেই পারো না’ কলকাতার চিনি ২ ছবির। চার মাস যেতে না যেতে ইউটিউবে গানটির কোটি ভিউ হয়েছে। কয়েক হাজার মন্তব্য। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, টিকটক এবং ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম রিলসেও গানটি জনপ্রিয়। দারুণ উপভোগ করছেন গায়ক মাহতিম। নীলাঞ্জন চক্রবর্তীর লেখা গানটির সংগীত পরিচালক মৈনাক মজুমদার। গানটির জন্য প্রতিদিনই প্রশংসা পাচ্ছেন। মাহতিমের মা–বাবার কাছে পরিচিতজনেরা গানটি নিয়ে ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন। মাহতিম যারপরনাই খুশি, একই সঙ্গে গর্বিত। এর আগে কলকাতার চলচ্চিত্রে মাহতিমের গাওয়া ‘তাকে অল্প কাছে ডাকছি’ গানটিও শ্রোতাপ্রিয় হয়।

মাহতিম শাকিব
সংগৃহীত

‘তুমি জানতেই পারো না’ গানটি মাহতিমের কণ্ঠে নতুন মাত্রা পেয়েছে। অনেক শ্রোতার মতে, এ গানের জন্য এই কণ্ঠ সবচেয়ে মানানসই। যে গান নিয়ে এত ভালো লাগা শ্রোতাদের, সেই গান প্রসঙ্গে মাহতিম বললেন, ‘এই গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার তিন বছরের চুক্তি ছিল। চুক্তিতে কয়েকটি গান করার কথা, তার মধ্যে এই গানটাও ছিল। হঠাৎ করেই এই গানটা গাওয়ার প্রস্তাব আসে। বলে দেওয়া হয়, দুই দিনের মধ্যে কণ্ঠ দিতে হবে। জীবনে অনেক গান শুনেছি, কিন্তু এই গান শোনার পর সংগীত পরিচালককে বলেছিলাম, ‘দাদা, এই গানটা যেন আর কারও কাছে না যায়। কারণ,এত ভালো লেগেছিল, চেয়েছি গানটা যেন আমারই থাকে। মানুষের কেমন ভালো লাগবে, তা নিয়ে ভাবিনি। আমার পোর্টফোলিওতে একটা ভালো গান রাখতে চেয়েছি। আমার ছোট্ট সংগীতজীবনে এমনটা কমই ঘটেছে।’

হতাশার পর আনন্দ

তিন দফায় গানটিতে কণ্ঠ দেন মাহতিম শাকিব। প্রথমবার পছন্দও হয়নি। কারণ, ওই সময়ে কণ্ঠটা ঠিকঠাক ছিল না। পরে তা পছন্দ করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যে গান নিয়ে এত বেশি স্বপ্ন ছিল, সে গানটি প্রকাশের পর হতাশ হয়ে পড়েন মাহতিম। কারণ, পুরো গানটি ইউটিউবে ছাড়া হয়নি। মাহতিমের মতে, কেটেছেঁটে ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড ব্যাপ্তির সেই গানটি মনে ধরেনি। মন খারাপ হয়ে যায়। যোগাযোগ করেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তাদের কাছে জানতে পারেন, ভিন্ন পরিকল্পনা আছে। এরপর আশ্বস্ত হন মাহতিম। বললেন, ‘শুরুতে যে গানটি আপলোড হয়, ওটার ভিউ ইউটিউবে কম দেখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাকে জানানো হয়, লিরিক্যাল ভিডিওতে পুরো গানটা আপলোড করা হবে। এটা তাঁদের স্ট্র্যাটেজি ছিল, যা আমার জানা ছিল না। থাকার কথাও না। এরপর বেটার ভার্সন আপলোড হওয়ার পর ভালো সাড়া পেতে থাকি। মনটাও ভালো হয়ে যায়।’

মাহতিম শাকিব
ছবি: সংগৃহীত

এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা

মাহতিম শাকিবকে সবাই কভার গান দিয়ে চিনেছে। মানসী ছবিতে সাবিনা ইয়াসমীনের গাওয়া ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ এবং রবীন্দ্রসংগীত ‘ফাগুন হাওয়ায়’ গেয়ে পাঁচ বছর আগে নজর কাড়েন তরুণ এই গায়ক। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁর গান পছন্দ করলেন। অনেকেই শেয়ার করে প্রশংসা করেন, ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। বাংলা গানের পাশাপাশি মাহতিম ইংরেজি কভার গানও করেছেন। একটা সময় মাহতিম নাটক এবং সিনেমার গানেও কণ্ঠ দেন। এ বছর কলকাতার চলচ্চিত্রে গাওয়ার পাশাপাশি চরকি প্রযোজিত উনিশ ২০ চলচ্চিত্রে ‘পাখি পাখি মন’ গান গেয়েও আলোচনায় আসেন তিনি।  

মাহতিম বললেন, ‘ব্যাপার হলো আমি যে পেশায় আছি, দিন শেষে এখানে কেউ কোটি টাকা দিলেও সেটার আবেদন থাকবে না, মানুষের ভালোবাসাটা মুখ্য। এটা সব সময় সুখের অনুভূতি। মানুষ যখন কোনো একটা গানে ঠোঁট মেলায়। স্টেজে যখন আমার গানের অনুরোধ করেন—এ অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমি কাভার সং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছি। এরপর অন্যান্য গান গেয়েছি। আমার গাওয়া কয়েকটি বাংলাদেশি ও ইন্ডিয়ান গান আছে, যেগুলো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। গাওয়ার সময় এসবের অনুরোধ আসে। ভালো লাগে। দিন শেষে এই ভালোবাসা কোথাও পাব না।’

মাহতিম শাকিব
ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের সমর্থন

২০১৮ সালে মাহতিম শাকিব যখন গানে পরিচিতি পেতে শুরু করেন, তখন সবে ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। ব্যবসায়ী বাবা ও গৃহিণী মা সব সময় মাহতিমের গানের স্বপ্ন পূরণে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। মাহতিম বললেন, ‘আমরা দুই ভাই। ছোট ভাই ১৪ বছরের ছোট। গানের সাফল্যে মায়ের চেয়ে বাবা বেশি এক্সাইটেড। তবে এই পথচলায় যুদ্ধ যতটা আমার, তার চেয়ে বেশি আমার পরিবারের মানুষের। মা সেই স্কুল থেকে শুরু করে এখনো করে যাচ্ছেন। দুজনের আবেগ দুই রকম। বাবা তো আমাকে আপডেট দিতে থাকেন। বলেন, আজকে তোর গানের এত ভিউ হয়ে গেল। তাই বলব, আমি খুবই ভাগ্যবান। কারণ, পরিবার আমার প্যাশনটাকে উপভোগ করে।’

স্বপ্ন তাঁর

তরুণ মাহতিম শাকিব গান নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন। এর মধ্যে একটা স্বপ্ন, একদিন সংগীতের মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড’ জয় করবেন তিনি। সেই স্বপ্নের প্রসঙ্গ উঠতেই মাহতিম বললেন, ‘জার্নিটা অনেক দূরের। অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে, যা আপাতত খুব অসম্ভব। কারণ, কিছু তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ না করলে তারা মনোনয়ন পর্যন্ত দেয় না। আমন্ত্রিত হওয়াও সম্ভব না। লেটস সি।’