আট মাস ধরে বেঁচে থেকেও বেঁচে না থাকার মতো আছি আমি: কুমার বিশ্বজিৎ

কুমার বিশ্বজিৎ ও নিবিড় কুমারফাইল ছবি

আমার বুকেই কেন বৃষ্টি অঝোরে ঝরে পড়ছে/ তবু সারাক্ষণ আমার হৃদয় মন...।
কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া চারটি লাইনের একটি মিউজিক্যাল টিজার গতকাল বুধবার এই শিল্পীর ফেসবুক পেজে অবমুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা হয় কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে। এ মুহূর্তে তিনি অবস্থান করছেন টরন্টোয়। সেখানে সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাঁর একমাত্র সন্তান কুমার নিবিড়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন নিবিড়। তাঁর সঙ্গে থাকা তিন বন্ধুর সবাই দুর্ঘটনায় মারা যান। আর নিবিড় সেই থেকে হাসপাতালের বেডে। আর তাঁর বাবা ও মা—দুজনেরই ঠিকানা সেই সেন্ট মাইকেল হাসপাতাল। 
দীর্ঘ আট মাস কুমার বিশ্বজিৎ ছিলেন সুরের বাইরে। সপ্তাহখানেকের জন্য গত মাসের শেষ সপ্তাহে এসেছিলেন দেশে। আর সেই সময় তিনি গানটিতে কণ্ঠ দিয়ে যান।

নতুন টিজারটি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘শিল্পীর প্রাণ মরে যায় যখন, তখন গান গাওয়াটাই তাঁর জন্য কঠিন হয়ে যায়। আর আট মাস ধরে একরকম বেঁচে থেকেও বেঁচে না থাকার মতো আছি আমি। এবার ব্যক্তিগত কিছু কাজে যখন দেশে যাই, তখন আমার স্নেহের দুই ছোট ভাই কিশোর ও বাপ্পী এসে ধরল গানটি গাওয়ার জন্য। বলল, “আপনার জন্যই গানটি করা।” গানটির কথা ও সুর ভালো লাগল। তার চেয়ে বড় বিষয় হলো, গানটিতে একটা আর্ত এবং অপেক্ষার বিষয় রয়েছে, যেটা আমাকে খুব স্পর্শ করেছে, তাই গাইলাম।’

নিবিড়ের আদর্শ বাবা কুমার বিশ্বজিৎ
ফাইল ছবি

গানটি আজ তোলার বিশেষ কোনো কারণ ছিল কি? জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ বলেন, ২২ নভেম্বর নিবিড়ের জন্মদিন। কাকতালীয়ভাবে ২২ নভেম্বর ওর ২২তম জন্মদিনও। গানটির শিরোনামও ‘নিবিড় অপেক্ষা করছে’। তাই এই বিশেষ দিনে নিবিড়ের প্রতি এটা আমার আশীর্বাদ।

একমাত্র সন্তানের জন্মদিনের কথা বলতে বলতে বিশ্বজিৎ কেঁদে ফেললেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জন্মদিনটা নিবিড় তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়েই বিশেষভাবে আনন্দ উদ্‌যাপন করত। কিন্তু সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। দুর্ঘটনায় ওর যে তিন বন্ধুকে আমরা হারিয়েছি, তারা প্রত্যেকেই ছিল আমার সন্তানের মতো। ওদের সঙ্গে আমরা বাবা-মা দুজনই ঘুরে বেড়িয়েছি, থেকেছি, ঘুমিয়েছি। সন্তান হারানোর বেদনা, যে কষ্ট ওদের বাবা-মা প্রতিনিয়ত পাচ্ছেন, আমরাও তা তিলে তিলে অনুভব করছি।’  

সন্তানের জন্মদিনের কথা বলতে গিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ আরও বলেন, ‘মনে পড়ছে, ২০২১ সালে আমার জন্মদিনে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কাউকে কিছু না জানিয়ে কানাডা থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিল নিবিড়। আজ ওর জন্মদিন। কিন্তু...। আমার আর ওর মায়ের প্রতিটি দিন এখন কাটে হাসপাতালে। এটাই এখন আমাদের বাড়িঘর। একটু সময়ের জন্যও নিবিড়কে রেখে কোথাও যেতে ইচ্ছা করে না। আমাদের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ কাটে একটা অপেক্ষা, একটা প্রত্যাশা ঘিরে—নিবিড় কথা বলবে, ফিরে আসবে।’
‘নিবিড় অপেক্ষা করছে’ গানের কথা লিখেছেন হাসানুজ্জামান মাসুম। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাস। শিগগিরই পুরো গানটি আসবে ‘প্ল্যাটফর্ম’ ইউটিউব চ্যানেল থেকে।