ব্যান্ডের তারকাদের পদচারণে জমজমাট পেন্টাগন ব্যান্ডের ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান
পেন্টাগন ব্যান্ডের তিন দশক পূর্তির আয়োজন শুধু তাদের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশের তিন দশক পার করা ব্যান্ডকে শুভকামনা জানাতে এসেছিল জনপ্রিয় অনেক ব্যান্ড। এ তালিকায় মাইলস ব্যান্ডের হামিন আহমেদ, ফিডব্যাক ব্যান্ডের ফোয়াদ নাসের বাবু, রেনেসাঁ ব্যান্ডের নকীব খান, দলছুট ব্যান্ডের বাপ্পা মজুমদারসহ আরও অনেক ব্যান্ড সদস্যরাই ছিলেন। সহযাত্রী ব্যান্ডের দশক পূর্তির এ আয়োজন সবার পদচারণে জমে ওঠে।
গিটার, পারকাসান, কি-বোর্ড আর ড্রামসের সংমিশ্রণে সুরের মূর্ছনা আর কণ্ঠজাদুতে তখন আয়োজনস্থল পূর্ণ। আমন্ত্রিত অতিথিরাও একের এক গানে মুগ্ধ হতে থাকলেন। কাটিয়ে দিলেন দারুণ এক সন্ধ্যা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হার এমনকি রাজনৈতিক উত্তাপের লেশমাত্র ছিল না। সবাই মিলে পেন্টাগন ব্যান্ডের তিন দশক পূর্তিতে মেতে থাকলেন, যেখানে শুধু গান আর গান এবং ব্যান্ডের এতটা পথ পেরিয়ে আসার দারুণ সব গল্প শোনা। এ চলার পথটা চড়াই–উতরাইয়ের যেমন ছিল, তেমনি ছিল ভালোবাসা কানায় কানায় পূর্ণ।
ঢাকার গুলশান ক্লাবে মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত এ আয়োজন পরিণত হয় দেশের ব্যান্ড সংগীতের তারকাদের এক মিলনমেলায়। রেনেসাঁ ব্যান্ডের নকীব খান, পিলু খান, এমরান রহমান, মাইলসের হামিন আহমেদ, মানাম আহমেদ, ইকবাল আসিফ জুয়েল, তুর্য।
ফিডব্যাক ব্যান্ডের ফোয়াদ নাসের বাবু, লাবু রহমান, মাকসুদ ও ঢাকার মাকসুদুল হক, সোলস ব্যান্ডের পার্থ বড়ুয়া, রকস্ট্রাটা ব্যান্ডের আরশাদ আমিন, ওয়ারফেজ ব্যান্ডের শেখ মনিরুল আহমেদ টিপু, শামস, রজার, পলাশ, সোমেন, দলছুট ব্যান্ডের বাপ্পা মজুমদার, ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের শাকিব, পার্থিব ব্যান্ডের রুমন, পাওয়ার সার্জের ব্যান্ডের জামশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের বরেণ্য শিল্পী দম্পতি রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা।
পেন্টাগন ব্যান্ডের তিন দশক পূর্তির আয়োজনে আরও শিল্পী কানিজ সুবর্ণা এবং বিভিন্ন সময়ে পেন্টাগন ব্যান্ড ছেড়ে যাওয়া সদস্যরা।
পেন্টাগন ব্যান্ডের সদস্য সুমন, টিপু, মোরশেদ, আলিফ, ফায়সাল, ইয়ানি মৃদুল, জয় এ আয়োজনের নানা সময়ে তাঁদের জনপ্রিয় সব গান গেয়ে শোনান। বাদ যায়নি জনপ্রিয় ইংরেজি গানও।
আয়োজনের শুরুতে ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুমনের মেয়ে লুবাইয়না দুটো গান গেয়ে শোনান। পরবর্তীকালে পার্থিব ব্যান্ডের রুমন গেয়ে শোনান—‘তুমি আমার জীবনের সাধনা’।
এরপর স্টেজে আসে পেন্টাগন ব্যান্ড। তারা একে একে গেয়ে শোনান—‘বৃষ্টি’, ‘সংশয়’, ‘সূর্য না ওঠা সকালে’, ‘জোনাকিরা জ্বলে নেভে’। তারা আরও পরিবেশন করেন এলান পারসন প্রজেক্টের ‘আই ইন দ্য স্কাই’সহ বব মার্লে, কার্লোস সান্টানার গান।
পেন্টাগন ব্যান্ডের পরিবেশনার পরপরই মঞ্চে আসে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেজ। তারা একে একে গেয়ে শোনায়—‘অবাক ভালোবাসা’, ‘বসে আছি’; গানস অ্যান্ড রোজেসের ‘সুইট চাইল্ড ওমাইন’, স্করপিয়ন্সের ‘রক ইউ লাইক এ হেরিকেন’, মাইকেল জ্যাকসনের ‘বিট ইট’।
এরপর ব্যান্ডের সদস্যরা একসঙ্গে ৩০ বছর পূর্তির কেক কাটেন। এরপর পেন্টাগন ব্যান্ডের সঙ্গে মঞ্চে আসেন মাইলসের হামিন আহমেদ। তিনি পেন্টাগনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গানে গিটার বাজান। মঞ্চে আসেন মাকসুদুল হক। তিনি পেন্টাগনের সঙ্গে বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড ঈগলসের ‘টেকিলা সানরাইজ’ গানটি পরিবেশন করেন। পেন্টাগন ব্যান্ডের সঙ্গে সবশেষে গান পরিবেশন করেন পার্থ বড়ুয়া ও বাপ্পা মজুমদার।
পাঁচ বন্ধু নিয়ে পেন্টাগন ব্যান্ডের পথচলা শুরু। তিন দশকে যাওয়া-আসায় ছিলেন সদস্যদের কেউ কেউ। কেউ আলাদাভাবে সফলও হয়েছেন। আবার একটা সময় ফিরেছেনও। শুরুর দিকে ইংরেজি, লাতিন, আরবি, জ্যামাইকান কাভার সং করত এই ব্যান্ড। এরপর মনোযোগী হয় নিজেদের লেখা, সুরের গান তৈরিতে। প্রতিষ্ঠার ৯ বছরে ২০০২ সালে প্রথম অ্যালবাম ‘সেই আমি’ প্রকাশ করে।
মোহাম্মদ আলী সুমন ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজে, শামসুন নূর রঞ্জন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে, মশিউর রহমান শেলী সিলেট চা-বাগানে, জাবেদ আহমেদ বাবু ব্যবসা নিয়ে ঢাকায় আর শওকত আলী ইমন পুরোপুরি গান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। চাকরি আর ব্যবসা করলেও তাঁরা সবাই বিভিন্ন ব্যান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই পাঁচজনকে একত্র করে সুমন উদ্যোগ নেন ব্যান্ড গঠনের। ১৯৯৩ সালের ১৩ অক্টোবর পথচলা শুরু করে নতুন ব্যান্ড—পেন্টাগন।
আয়োজন প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুমন জানান, এটা তাঁদের মিউজিক্যাল জার্নির গল্প জানানোর আয়োজন। দীর্ঘ এই সংগীতসফরে জড়িয়ে আছে অনেক আবেগ, রাগ-অনুরাগ। অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। এ সময়ে তাঁদের সঙ্গে দেশের অনেক গুণী মিউজিশিয়ান যোগ দিয়েছেন। আবার অনেকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যান্ড ছেড়েছেন। দল ছেড়ে দেওয়া সবাই কিন্তু মানসিকভাবে এখনো তাঁদের সঙ্গেই আছেন। এ আয়োজনে সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁরা।