‘সুইফট–ঝড়’ সামাল দিতে সাড়ে পাঁচ শ ট্রেন, সাত শ বাস সিডনিতে

মেলবোর্নে টেলর সুইফট। গায়িকার এক্স থেকে

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত অলিম্পিক পার্কের পাশে হঠাৎ হাজারো মানুষের লাইন। স্টেডিয়ামে তখন বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান চলছে না। বিশাল জনস্রোত লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ১০-১৫ হাজার টাকায় জামাকাপড় কেনার জন্য। কদিন আগে খবরে এল, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বাচ্চা জন্মদানের ব্যথা সহ্য করেও গানের অনুষ্ঠানে ছিলেন এক নবজাতকের মা। আবার এমন কয়েকজনকে পাওয়া গেল, যাঁরা ৮-১০ লাখ টাকা খরচা করে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একই গান বারবার শোনার জন্য।

আরও পড়ুন

আপাতদৃষ্টে ঘটনাগুলো ঠিক ‘স্বাভাবিক’ নয়। তবে ‘শখের তোলা আশি টাকা’ হয়ে যাবে, যখন এই পাগলামির সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে একটি নাম, টেইলর সুইফট। বর্তমান বিশ্বের ১ নম্বর পপগায়িকা সুইফটের ভক্তদের বলা ‘সুইফটিজ’। আর এই সুইফট–জ্বরেই ভুগছে এখন গোটা অস্ট্রেলিয়া। সুইফটের ইরাস ট্যুর এখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আসন্ন।

২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ দিনব্যাপী কনসার্ট হবে সিডনির অ্যাকর স্টেডিয়ামে। সঙ্গে অতিথিশিল্পী হিসেবে থাকবেন আরেক জনপ্রিয় গায়িকা সাবরিনা কারপেন্টার। ইতিমধ্যেই কনসার্টের সব দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিটের আনুষ্ঠানিক দাম ছিল সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে সুইফটের কনসার্ট নিয়ে সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে ব্যাপক।

মেলবোর্নে টেলর সুইফট। গায়িকার এক্স থেকে

সুইফটের গানের আয়োজনে টিকিটের পাশাপাশি টি-শার্ট, হুডি, ব্রেসলেট, টুপি, পানির বোতল—এসবও বিক্রি হয় প্রচুর। সিডনিতে সুইফট মার্চ প্রথম দিনে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকার বেশি বিক্রি করা হয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীর এখন আলোচনার একটা অংশ সুইফটের কনসার্টের টিকিট পেল কি না, এ নিয়ে। সিডনির সুইফট–ভক্তদের মধ্যে রয়েছেন সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশিরাও। দেশটির শীর্ষ সব পত্রপত্রিকায়ও কথা হচ্ছে ইরাস ট্যুর নিয়ে। কনসার্টে কী পরে যেতে হবে, ভিড় সামলানোর কৌশল—এমন লেখালেখিতে ভরপুর সংবাদমাধ্যম।

সিডনির আয়োজনকে সামনে রেখে গত সোমবার সিডনিতে এসে পৌঁছেছেন সুইফট। আর সিডনিতে চেষ্টা করছেন গোপনে চলাফেরা করার। তবে বিশ্বের শীর্ষ জনপ্রিয় এই গায়িকার সব আনাগোনাই চোখে চোখে রাখেন ভক্তেরা। সিডনিতে রাতের খাবার খেতে একটি রেস্তোরাঁয় যাওয়ার পরপরই সেখানে ঢল নামে সুইফটিজদের। এর আগে তিন দিন কাঁপিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক অন্যতম শহর মেলবোর্নকে।

টেলর সুইফট। ছবি: এএফপি

বলা হচ্ছে, সুইফটের বিশ্যব্যাপী করা ইরাস ট্যুর শুধু নয়, সুইফটের এ যাবৎ সবচেয়ে বড় কনসার্ট ছিল মেলবোর্নে। প্রায় ৯৬ হাজার সুইফট–ভক্ত উপস্থিত হয়েছিলেন অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে। এমন কিছুই হতে যাচ্ছে সিডনিতেও বলে আশা সুইফটিজদের। ধারণা করা হচ্ছে, চার দিনের আয়োজনে সিডনিতে প্রায় তিন লাখ মানুষের আনাগোনা হবে। এ ছাড়া টিকিট ছাড়াও হাজারো ভক্ত স্টেডিয়ামের বাইরে থেকেই গান শোনার আশায় ভিড় জমাবেন অলিম্পিক পার্কে। আর বাড়তি ভিড় সামাল দিতে ৫৫০টি অতিরিক্ত ট্রেন এবং ৭০০টি বাস ছেড়েছে সিডনি সরকার।

তবে সিডনির কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় শঙ্কিত সুইফটপ্রেমীরা। দেশটির আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, প্রথম কনসার্টের দিন শুক্রবার প্রায় সবকিছুই দেখতে পাওয়া যেতে পারে, প্রচণ্ড গরম, ঝুম বৃষ্টি, বাজখাঁই বজ্রপাত। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে কনসার্ট স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে। কনসার্টের শুরুর দিকে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে, যা কনসার্ট চলাকালীন সময়ে আবার হুট করে ২৩ ডিগ্রিতে নেমে যাওয়ার কথাও বলছেন আবহাওয়াবিদেরা।

সব মিলিয়ে টেইলর সুইফট–উন্মাদনায় ভুগছেন সিডনিবাসী। সুইফটের কনসার্ট নিয়ে বাংলাদেশিদের উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশি বোরহান লিমন বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে মনে হয় আমি সুইফটের ভক্ত, নিয়মিত তাঁর গান শুনি। অনেক অনেক চেষ্টা করেছি টিকিট সংগ্রহের, কিন্তু পাইনি, এখনো চেষ্টা চলছে।’ অল্পের জন্য কনসার্টের টিকিট হাতছাড়া হওয়ার আফসোসের কথা বললেন আরেক সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সুইফটের ইরাস ট্যুর শুরু হওয়ার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম সিডনির জন্য। টিকিট পেয়েও গিয়েছিলাম প্রায়, অল্পের জন্য টিকিট কাটতে পারিনি। আর সব টিকিট শেষ হয়ে যায় মুহূর্তেই। খুবই খারাপ লেগেছে।’