হাবিব-কায়া ২১ বছর পর ফিরছেন
২০০৩ সালে পপগানে নতুন স্বাদ নিয়ে আসে ‘কৃষ্ণ’। লোকগানের ফিউশন অ্যালবামটিতে হাবিব ওয়াহিদ আর কায়ার যুগলবন্দী তরুণদের মন জয় করে। ২১ বছরের বিরতির পর ফিরছে সেই জুটি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন নাজমুল হক
কৃষ্ণ অ্যালবামে বাংলা লোকগানের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সংগীতের মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন হাবিব ওয়াহিদ। পরের বছর কায়া ও হেলালকে নিয়ে হাবিব প্রকাশ করেন ‘মায়া’ নামের আরেকটি অ্যালবাম। মিক্সড এ অ্যালবামের গানগুলোও শ্রোতৃপ্রিয় হয়। এরপর দুই দশক পার হয়েছে, ‘কৃষ্ণ’, ‘আমি কূলহারা কলঙ্কিনী’, ‘কেমনে ভুলিব আমি’, ‘কালা’ গানগুলোর আবেদন এখনো ফুরায়নি।
যারা আমার কথা বলেন, তারা প্রত্যেকেই অনেক ভালো মিউজিশিয়ান। দেখুন মানুষের জীবনে কিছু সময় থাকে, যখন নিজের মাঝে সে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায় না। হয়তোবা তখন আমি কিছু মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি। আমার সমর্থন তাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। এ ছাড়া আর কিছুই না, আমি কাউকে তৈরি করিনি। আমার মাধ্যমে নিজেদের খুঁজে পেয়েছে তারা
তিন দিন আগে হাবিবের একটি ফেসবুক পোস্টে সেটা আবারও প্রমাণ হলো। একটি ছবি দিয়েছিলেন হাবিব। মঞ্চে গাইছেন একজন, দূর থেকে আবছামতো দেখা যায়। ছবির ওপর বড় করে লেখা কৃষ্ণ। ব্যস, ভক্তরা ধরেই নিলেন সুপারহিট কৃষ্ণ অ্যালবামের দ্বিতীয় কিস্তি আসছে। পোস্টটি ঘিরে একের পর এক মন্তব্য।
অবশেষে ঘটনা খোলাসা করলেন হাবিব। মন্তব্যের ঘরে লিখলেন, ‘এটা কৃষ্ণ ২-এর পোস্টার না! এটি একটি স্টেজ শোর ছবি, যেখানে কৃষ্ণ লেখাটি আমার পেছনে একটা বিশাল বড় এলইডি স্ক্রিনে লেখা ছিল, ফটোগ্রাফার ঠিক সেই মুহূর্তেই ক্লিক করাতে বিষয়টা হয়তো একটা থাম্বনেইলের মতো মনে হচ্ছে। যা–ই হোক, সাময়িক বিভ্রান্তির জন্য দুঃখিত! আমার কাছে ছবিটি দারুণ লেগেছে, তাই শেয়ার করেছি। তবে কায়ার সঙ্গে আর একটা কাজ তো করাই যায়! দেখি কী হয়...।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল হাবিব-কায়ার নতুন কাজ সত্যিই আসছে! তবে অ্যালবাম না, গান। প্রচলিত একটি লোকগানকে নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আসছেন হাবিব।
তাতেই কণ্ঠ দিয়েছেন কায়া। ইতিমধ্যে গান রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম আলোকে হাবিব ওয়াহিদ বলেন, ‘অনেক বছর পর কায়া ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের আগের গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আশা করি, এবারও ভালো একটা কাজ হতে যাচ্ছে। ভাই ভয়েস দিয়েছেন। আশা করি, খুব শিগগির গানটি শ্রোতাদের সামনে আনতে পারব।’ কায়ার সঙ্গে গান আসছে নিশ্চিত করলেও গানটি সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু এখনই জানাতে চান না হাবিব, ‘এ গানের মূল কারিগর এখনো বেঁচে আছেন। আশা করি, তাঁর থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাব। সব ঠিক থাকলে ঈদের পর প্রকাশ পাবে।’
হাবিব যখন প্রেরণা
বরাবরই নতুনদের সুযোগ দেন হাবিব। শুধু কণ্ঠশিল্পীরাই নন, অনেক সংগীত আয়োজকও ক্যারিয়ারে তাঁর পরামর্শ ও সহযোগিতার কথা বারবার সামনে এনেছেন। আড়ালে থাকা অনেক গীতিকারকেও তিনি সুযোগ দিয়েছেন। আরফিন রুমি, ইমরান মাহমুদুল ও প্রীতম হাসানেরা নিজেদের ক্যারিয়ারে হাবিবের প্রভাব নিয়ে বহুবার বলেছেন। বিষয়টি হাবিব কীভাবে দেখেন?
‘যারা আমার কথা বলেন, তারা প্রত্যেকেই অনেক ভালো মিউজিশিয়ান। দেখুন মানুষের জীবনে কিছু সময় থাকে, যখন নিজের মাঝে সে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায় না। হয়তোবা তখন আমি কিছু মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি। আমার সমর্থন তাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। এ ছাড়া আর কিছুই না, আমি কাউকে তৈরি করিনি। আমার মাধ্যমে নিজেদের খুঁজে পেয়েছে তারা,’ বললেন হাবিব।
তবে তিনি মনে করেন, যার যার জায়গা থেকে নতুনদের সমর্থন দেওয়া দরকার। নিজের উদাহরণ দিয়ে হাবিব বললেন, ‘আমিও তো একসময় নতুন ছিলাম। তখন কারও না কারও সমর্থন পেয়েই তো আজকের জায়গায়। যখন একদম নতুন, তখন মাইলস থেকে কি-বোর্ড বাজানোর প্রস্তাব পাই। এটা কিন্তু আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। প্রতিভাবানদের কেউ আটকে রাখতে পারে না। একটু সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করে।’
উত্তরসূরি তৈরি হচ্ছে
দাদা ফেরদৌস ওয়াহিদ ও বাবা হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে এক মঞ্চে ড্রাম বাজিয়ে কদিন আগেই খবরের শিরোনাম হয়েছেন আলিম ওয়াহিদ। শৈশবেই সংগীতের সঙ্গে ছেলের এই সখ্য হাবিবকেও আপ্লুত করেছে। বাবা-দাদাকেও ছাড়িয়ে যাবে আলিম, এমনটাই বিশ্বাস করেন গায়ক। হাবিবের কথায়, ‘আলিম এখন পর্যন্ত যা যা শিখেছে, সব নিজের চেষ্টায়। আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন পড়েনি। ড্রাম ছাড়াও ইদানীং গিটারের বিভিন্ন কর্ডও চেষ্টা করতে দেখি। সময়টা তো অনলাইনের, সবকিছুই হাতের মুঠোয়। আলিম বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে, অনেকের ক্লাস দেখে। আর তুলতে পারলে আমাকে দেখাতে আসে। ওর এই চেষ্টা আমি উপভোগ করি।’