তিন তরুণ তিন ঘণ্টা শোনালেন বরেণ্য শিল্পীদের গান
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে তহবিল সংগ্রহে সময়ের তরুণ তিন সংগীতশিল্পীকে নিয়ে ‘উৎস সন্ধ্যা ২০২৪’ শিরোনামের গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল উন্নয়ন সংস্থা ‘উৎস বাংলাদেশ’। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে বসে গানের এই আসর। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ঋতুরাজ বৈদ্য, সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা ও মাশা ইসলাম।
বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকেই দর্শকের ভিড় বাড়তে থাকে কেআইবি মিলনায়তন এলাকায়। পরিবারসহ এসেছিলেন প্রায় সবাই। ঘড়ির কাঁটা যখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ছুঁই ছুঁই, মঞ্চে একসঙ্গে হাজির হন তিন সংগীতশিল্পী ঋতুরাজ, নন্দিতা ও মাশা। গানের অনুষ্ঠানগুলোতে পর্যায়ক্রমে পারফরমাররা এলেও একসঙ্গে তিনজনের পারফরম্যান্স দর্শকদের জন্য ছিল বাড়তি পাওনা। মৌলিক গানের পাশাপাশি এদিন শিল্পীরা গেয়েছেন নজরুলগীতি, শচীন দেববর্মন, লতা মুঙ্গেশকর, মেহেদী হাসান, রাহাত ফতেহ আলী খান থেকে শুরু করে জেমসের গান।
‘আগ বাড়িয়ে কেউ ভালোবাসি বলে না’ গান দিয়ে নিজেদের ডুয়েট পারফরম্যান্স শুরু করেন ঋতুরাজ ও নন্দিতা। ‘তুমি সময় করে এসো আমার ঘরে, আমি ঘর বেঁধেছি তেপান্তরের পরে, আমার ঘরে কভু উনুন জ্বলে না’—হাউসফুল মিলনায়তনে যখন এই গান চলছিল, তখন চারদিকে নিস্তব্ধতা।
এরপরই শচীন দেববর্মনের ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে’ গানে পারফর্ম করেন শিল্পী মাশা ইসলাম। এ আয়োজনে একে একে তিনজন মিলে গেয়েছেন ২০টির বেশি গান। টানা তিন ঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শ্রোতারা শুনেছেন তাঁদের পারফরম্যান্স।
এরপর একে একে শিল্পীরা পরিবেশন করেছেন, ‘রপ্ত করা শব্দগুলো’, ‘সাওয়ান বি তো যায়ে’, ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’, ‘দুনিয়া কিসি কি পেয়ার মে’, ‘আমার ময়না গো’, ‘বলোনা রাধিকা তাকে’, ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ থেকে কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’, ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’ ও ‘বুলবুলি’।
এদিন গান শুনতে এসেছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন পর এমন একটা পারফরম্যান্স পেলাম, একটানা শুনে গেছি। এতই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছি, একটুও ক্লান্তি আসেনি, তিন ঘণ্টার বেশি সময় যেন দ্রুতই কেটে গেল। এই তিন তরুণ চমৎকার গেয়েছেন, তাঁদের জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা।’
গান শুনতে ধানমন্ডি থেকে এদিন স্ত্রীসহ এসেছিলেন ৭০ বছর বয়সী ইমামুল হক। এমন পারফরম্যান্স নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘নজরুল, মেহেদী হাসান আবার শচীন দেব থেকে লতা, এসব গানেই তো আমাদের সময় কেটেছে। এক আয়োজনে একসঙ্গে এত প্রিয় গান শুনে, সেই যৌবনে যেন ফিরে গিয়েছিলাম।’
অবহেলিত শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে উন্নয়ন সংস্থা ‘উৎস বাংলাদেশ’। আয়োজকেরা জানান, এ আয়োজন থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করা হবে উৎস বাংলাদেশের পরিচর্যায় থাকা শিশু-কিশোরদের কল্যাণে।