কনসার্টের মৌসুম এসে গেছে

মঞ্চে গান পরিবেশন করেছেন জেমস।ছবি: সংগৃহীত

‘কোনোভাবেই মেঘদলের কনসার্ট মিস করতে চাইনি। বাসে চেপে বিরুলিয়ায় গিয়ে গান শুনেছি, দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রকৃতির মাঝে মেঘদলের গানের সুরে যেন ভেসে যাচ্ছিলাম!’ ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়ার দ্য মার্কেটপ্লেসে আয়োজিত মেঘদলের একক কনসার্ট থেকে ফিরে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারসা সাইয়ারা।

ঢাকার অদূরে বিরুলিয়ার দ্য মার্কেটপ্লেসে গাইছে ‘মেঘদল’।
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় তিন বছর পর গত সপ্তাহে একক কনসার্টে মঞ্চে উঠেছিলেন শিবু কুমার শীলরা, মাঝে করোনার কারণে এককভাবে তাঁদের মঞ্চে পাওয়া যায়নি। শুধু মেঘদল নয়; ইতিমধ্যে নগরবাউল, অর্থহীন, শিরোনামহীন, আর্বোভাইরাস, চিরকুটের মতো জনপ্রিয় ব্যান্ড কনসার্টে ফিরেছে।

কী কারণে দর্শকেরা কনসার্টে ফিরছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শিরোনামহীনের দলনেতা জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কনসার্টে গান শোনা আর বাসায় বসে গান শোনার মধ্যে পার্থক্য আছে। কনসার্টে গিয়ে লাউড ভলিউমে গান শুনছি; সঙ্গে পরিবার, বন্ধুরা আছে। ফলে সেই পরিবেশ দর্শকেরা উপভোগ করছেন। আমরা মঞ্চ থেকে টের পাই, কনসার্টে আসার জন্য মানুষ কতটা উন্মুখ হয়ে থাকেন।’

মঞ্চে আরবোভাইরাস।
ছবি: ফেসবুক থেকে।

দোজা এলান বলেন, কোভিডের দুই বছর মানুষ ঘরবন্দী ছিলেন। কোনো কনসার্টও হয়নি। ফলে গত বছর থেকে মানুষ কনসার্টে ফিরতে শুরু করেছেন। যেকোনো ধরনের আয়োজন করলেই দর্শক আসছেন। আগামী দিনে দর্শক আরও বাড়বে।
স্কাই ট্র্যাকার লিমিটেড ও দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স ছাড়াও ব্যান্ডমিথ এক্সপেরিয়েন্টাল, সিক্সবেজ কমিউনিকেশন, ঝিড়ঝিড় প্রাইভেট লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কনসার্ট আয়োজন করছে। শহরের বাইরে বিরুলিয়ায় নিয়মিত কনসার্টের আয়োজন করেছে ঝিড়ঝিড় প্রাইভেট লিমিটেড। আগে সোনার বাংলা সার্কাস সেখানে গিয়ে গান করে এসেছে, সেপ্টেম্বরে করেছে মেঘদল। কনসার্টের প্রচলিত ধারণার বাইরে ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন মেঘদলের ভক্তরা।

শিরোনামহীনের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান।
ছবি: ফেসবুক থেকে।

জিয়ার ভাষ্যে, ‘ব্যান্ড মিউজিকের জনপ্রিয়তার জায়গাটা অনেক দিন ধরে হিডেন ছিল। সেটা দ্রুত বেরিয়ে এসেছে। কয়েকটা কনসার্টে গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা দেখলে বোঝা যাবে, অত্যন্ত পপুলার একটা ক্ষেত্রকে আমরা অনেকটা সময় অবহেলা করেছি। আমাদের পৃষ্ঠপোষকেরা অবহেলা করেছে। এই ক্ষেত্রের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’

স্কাই ট্র্যাকার লিমিটেড, দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্সসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নিয়মিত কনসার্টের আয়োজন করে থাকে। স্কাই ট্র্যাকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দোজা এলান প্রথম আলোকে জানান, অক্টোবরেও ঢাকায় প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনটির মতো কনসার্টের আয়োজন চলছে।

অর্থহীনের সুমন।
ছবি: সংগৃহীত

ঝিড়ঝিড়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাফরী আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, দারুণ সাড়া পেয়েছেন তাঁরা। মেঘদলের শো হাউসফুল ছিল। আগামী মাসে আরেকটি শোর আয়োজন করা হবে। তাঁর ভাষ্যে, অনেক দিন ধরে ঘরে বন্দী ছিলেন মানুষ। ফলে কনসার্টে দর্শক আসছেন।
মেঘদলের মূল গায়ক শিবু কুমার শীল বলেন, মানুষ গান শুনতে একটু দূরে হলেও যেতে চান। শহরের ভেতরে নির্দিষ্ট একটি জায়গার মধ্যে সব সময় অনুষ্ঠান হয়। তার বাইরে আয়োজন হলেও শ্রোতারা যেতে চান, বিশেষ করে তরুণেরা।
সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরেও শো থাকছে, এর মধ্যে ১৪ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘এই সময়’ শিরোনামে কনসার্টের আয়োজন করা হবে। এতে মঞ্চে থাকবে মেঘদল, আভাস, সোনার বাংলা সার্কাস, সহজিয়া, শহরতলী, বাংলা ফাইভ ও আপেক্ষিক।

মঞ্চে আর্টসেল।
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছরের মতো এবার ডিসেম্বরেও ফুয়াদ লাইভ ইন ঢাকা ও ঢাকা রকফেস্ট করবে স্কাই ট্র্যাকার। আগের বছর এ আয়োজনে ওয়ারফেজ, অর্থহীন, অ্যাভয়েডরাফা, ক্রিপটিক ফেইট, ইনদালোর মতো ব্যান্ড গান করেছে। এবারের তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ৭ অক্টোবর ঢাকায় রক অ্যান্ড রিদম কনসার্টে গাইবে অ্যাশেজ, সোনার বাংলা সার্কাস, কার্নিভ্যাল, আফটারম্যাথ, ওন্ড, স্যাভেজরি, অনকোর, লেভেল ফাইভ, ক্যালিপ্সো ও চিত্রপট। আগামী ২৪ ডিসেম্বর বগুড়ার শান্তাহারে গাইবে শিরোনামহীন।