সঞ্জীবকে উৎসর্গ করে দলছুটের ‘সঞ্জীব’

দলছুট ব্যান্ডের সদস্যরাছবি : দলছুট ব্যান্ডের সৌজন্যে

সঞ্জীব চৌধুরী ও বাপ্পা মজুমদারের উদ্যেগে গড়ে ওঠা গানের দল দলছুট পার করেছে ২৮ বছর। সেই সঞ্জীব চৌধুরী আজ ১৭ বছর ধরে ‘দলছুট’। তিনি না থাকলেও বাপ্পা মজুমদারসহ তাঁর বন্ধুরা দলটি আঁকড়ে আছেন। সঞ্জীবের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে যথাবিরতিতে প্রকাশিত হচ্ছে গান, অ্যালবাম আর অনুষ্ঠিত হয় জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে নানা আয়োজন। ২০০৭ সালে সঞ্জীব মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় অ্যালবাম ‘আয় আমন্ত্রণ’। এরপর নতুন গান ও অ্যালবাম প্রকাশের আভাস মিললেও আসেনি। এক যুগ পর সম্প্রতি দলটির নতুন অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। সঞ্জীব চৌধুরীকে উৎসর্গ করে নতুন অ্যালবামের নাম রাখা হয় ‘সঞ্জীব’।

বাপ্পা মজমুদার জীবনের প্রথম স্টেজ শো করেন শহীদ মিনারের পাদদেশে। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার করার পর গানে ব্যস্ততা বাড়ে তাঁর। এর মধ্যে ১৯৯২ বা ’৯৩ সালের দিকে একদিন শাহবাগের আজিজ মার্কেটের সিঁড়িতে পরিচয় হয় সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে, মাধ্যম হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। বাপ্পা জানান, পরিচয়ের পর দুজন একসঙ্গে বেশ কিছু কাজ করেন। কাজ করতে গিয়েই দেখলেন, তাঁদের দুজনেরই চিন্তাভাবনা প্রায় একই, পছন্দও কাছাকাছি। ভাবতে থাকলেন, একসঙ্গে কিছু করা যায় কি না। বাপ্পা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে মিঠু ভাইও ছিলেন। দলবদ্ধ হলাম। গড়ে ওঠে দলছুট, সেটা ১৯৯৬ সালের নভেম্বরের কথা। প্রথম অ্যালবাম ‘আহ্‌’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৭-এ।’ সেই থেকে ২০০৭ সালে সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণের আগপর্যন্ত দুজন একসঙ্গে গান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

দলছুট ব্যান্ডের সদস্যরা
ছবি : দলছুট ব্যান্ডের সৌজন্যে

নতুন অ্যালবাম নিয়ে বাপ্পা মজুমদার জানান, এক যুগ পর নতুন অ্যালবাম এলেও থেমে ছিল না নতুন গান তৈরির কাজ। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় ‘সঞ্জীব’ অ্যালবামের কাজ। বাপ্পা বলেন, ‘সঞ্জীবদার মৃত্যুর পর ২০১০ সালে সর্বশেষ প্রকাশ পেয়েছিল দলছুটের অ্যালবাম ‘আয় আমন্ত্রণ’।’

এক যুগ পর নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করা হলেও তাড়না ছিল। বাপ্পার কথায়ও তা–ই বোঝা গেল। বলেন, ‘অ্যালবাম প্রকাশের তাড়না অনেক দিন ধরেই অনুভব করছিলাম সবাই। শ্রোতারাও অপেক্ষায় ছিলেন। তবে আমরা তাড়াহুড়া করতে চাইছিলাম না। ২০১৬ সালে কাজ শুরু হয় অ্যালবামের গান নিয়ে। শেষ করতে প্রায় আট বছর লেগে গেল। অবশেষে এক যুগ পর নতুন অ্যালবাম নিয়ে হাজির হয়েছে দলছুট।’

‘সঞ্জীব’ অ্যালবামের প্রচ্ছদ এঁকেছেন পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল

অ্যালবাম উৎসর্গ করা হয়েছে সঞ্জীব চৌধুরীকে। বাপ্পা মজুমদার বলেন, ‘সঞ্জীব চৌধুরীকে নিয়ে সব সময় আমাদের একটা ভালোবাসার জায়গা আছে। তাঁর প্রতি সেই ভালোবাসা উদ্‌যাপন করতেই আমাদের এই অ্যালবাম। সঞ্জীব চৌধুরীকে নিয়ে আমাদের ভাবনাগুলো ফুটে উঠবে গানগুলোতে। আমরা ভালোবাসি সঞ্জীবদাকে, এখনো মিস করি; তাই তাঁকে ট্রিবিউট করে আমাদের অ্যালবাম।’

৮ বছর ধরে ‘সঞ্জীব’ অ্যালবামের জন্য ১১টি গান তৈরি করেছেন বাপ্পা মজুমদার ও তাঁর দল। যেখানে সবাই একটি করে গান প্রকাশ করছেন, সেখানে ১১ গানের অ্যালবাম শতভাগ মমতা আর ধৈর্য নিয়ে শেষ করেছেন। স্বাধীন মিউজিক অ্যাপ-এ মুক্তি পেয়েছে পুরো অ্যালবাম। প্রকাশিত হয়েছে স্পটিফাইসহ আন্তর্জাতিক অ্যাপগুলোতে। বাপ্পা মজুমদারের ইউটিউব থেকেও অ্যালবামের গানগুলো শোনার সুযোগ রয়েছে। গান প্রসঙ্গে বাপ্পা বলেন, সব গান মেলোডিনির্ভর। এর মধ্যে রক, ফোকের ধাঁচও পাওয়া যাবে। সর্বোপরি দলছুট যে সাউন্ডে গান করেছে, সেই ধারাই পাওয়া যাবে নতুন অ্যালবামে। দলছুটের সিগনেচার স্টাইলটা খুঁজে পাবেন শ্রোতারা।

বাপ্পা মজুমদার
ছবি : প্রথম আলো

বাপ্পার মা-বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে যেন চাকরির পাশাপাশি সংগীতচর্চা করেন। তাই মা-বাবার কথামতো চাকরি আর সংগীতচর্চা দুটো একসঙ্গে চালিয়ে যান তিনি। কিন্তু যাঁর মা-বাবা আপাদমস্তক শিল্পী, তাঁদের সন্তানও গান আঁকড়ে ধরে এগোবেন, এটাই স্বাভাবিক। একটা সময় চাকরি ছেড়ে ঠিকই সংগীত তাঁর কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। পেশা, নেশা সবই সংগীত ঘিরে। বেঁচে আছেন সংগীত আঁকড়ে ধরে। অসাধারণ সব গান দিয়ে দেশ–বিদেশের শ্রোতার মন জয় করে চলেছেন তিনি। ব্যান্ড ও একক ক্যারিয়ার মিলিয়ে পার করে দিয়েছেন পেশাদার সংগীতজীবনের ৩০ বছর।

দলছুট ব্যান্ডের ‘সঞ্জীব’ অ্যালবামের প্রচ্ছদ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘নিজের কাজ ছাড়া কারও জন্য ডিজাইন করার খুব একটা সময় বা আগ্রহ পাই না। কাছের মানুষদের জন্য নিজের নিয়মের বাইরে যাওয়াই যায়। তাই কাভার ডিজাইনটা করেই ফেললাম। অসাধারণ সব গান নিয়ে তৈরি হয়েছে দলছুটের সপ্তম স্টুডিও অ্যালবাম ‘সঞ্জীব’।’

এদিকে দলছুট স্টেজ শো নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছে। সম্প্রতি বাপ্পার নেতৃত্বে গানের এ দলটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মাতিয়ে এসেছে। দেশেও স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত আছে দলটি।

দলছুট ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ: বাপ্পা মজুমদার (ভোকাল), মাসুম ওয়াহিদুর রহমান (গিটার), জন শার্টন (বেজ গিটার), ডানো শেখ (ড্রামস), সোহেল আজিজ (কি-বোর্ড), শাহান কবন্ধ (ব্যান্ড ম্যানেজার)