‘প্রিটি লিটল বেবি’ গায়িকা কোনি ফ্রান্সিস আর নেই
‘প্রিটি লিটল বেবি’ গায়িকা কোনি ফ্রান্সিস মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রন রবার্টস এক ফেসবুক পোস্টে এই দুঃসংবাদ জানান।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কোনি ফ্রান্সিস বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। ২ জুলাই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও হাসপাতালে আছি। আমার শরীরে চরম যন্ত্রণার কারণ খুঁজে বের করতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’ ৪ জুলাই তিনি জানান, ‘একটা ভালো রাত কাটানোর পর আমি অনেকটাই সুস্থ বোধ করছি।’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন কোনি। তাঁর মৃত্যুর খবর শেয়ার করে বন্ধু রন রবার্টস লিখেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি, আমার প্রিয় বন্ধু কনি ফ্রান্সিস গত রাতে মারা গেছেন। আমি জানি, কোনি চাইতেন তাঁর ভক্তরাই এই দুঃসংবাদ সবার আগে জানুক।’
কোনি ফ্রান্সিসের পুরো নাম কনসেটা রোজা মারিয়া ফ্র্যাঙ্কোনেরো। তিনি ১৯৩৭ সালের ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে কোনি ফ্রান্সিস সংগীতজগতে প্রবেশ করেন। ১৯৫৮ সালে ‘হুজ সরি নাউ’ গানটি দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। সে সময় টেলিভিশন অনুষ্ঠান আমেরিকান ব্যান্ডস্ট্যান্ডে ‘ডিক ক্লার্ক’ গানটি প্রচার করেন, যা তাঁকে রাতারাতি তারকায় পরিণত করে। এর পর থেকেই কোনি ফ্রান্সিস হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পপ তারকা যিনি রক অ্যান্ড রোল যুগে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর কণ্ঠে ‘স্টুপিড কিউপিড’, ‘লিপস্টিক অন ইয়োর কলার’, ‘মাই হার্ট হ্যাজ আ মাইন্ড অব ইটস ওউন’ এবং ‘হয়্যার দ্য বয়েজ আর’–এর মতো বহু জনপ্রিয় গান রয়েছে। তাঁর রেকর্ড বিক্রি ছাড়িয়েছে ২০০ মিলিয়নের বেশি। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৯ সালের মধ্যে তাঁর ৫০টির বেশি গান যুক্তরাষ্ট্রের চার্টে স্থান পায়।
কোনি ফ্রান্সিস ইতালিয়ান, জার্মান, স্প্যানিশ, ফরাসি, হিব্রু, এমনকি জাপানি ভাষায়ও গান রেকর্ড করেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই ব্যাপক ছিল যে জার্মানি, ইতালি ও জাপানের মতো দেশে তাঁর গান অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায়। ২০০৯ সালে তাঁকে ইতালিয়ান হল অব ফেমে সম্মানসূচক ‘সেলিব্রিটি ইনডাক্টি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পুরুষপ্রধান সংগীতজগতে নারীদের জন্য বিদ্যমান স্টেরিওটাইপ চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন এ শিল্পী। তিনি যেভাবে তাঁর গান দিয়ে সে বাধা অতিক্রম করেছিলেন, তা অনুপ্রেরণাদায়ক। সংগীতজগতে নারীদের জন্য পথ তৈরি করে দেওয়া কোনি ফ্রান্সিস আজও পপ সংস্কৃতির এক অনন্য আইকন।
সম্প্রতি তাঁর গান ‘প্রিটি লিটল বেবি’ ইনস্টাগ্রাম রিলসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বহু কনটেন্ট ক্রিয়েটর এই ক্ল্যাসিক গান ব্যবহার করছেন। গানটি মুক্তির ৬৩ বছর পরও মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে সংগীতজগতে কোনির প্রভাব এখনো বিদ্যমান। কোনি ফ্রান্সিস তাঁর অসাধারণ ও কালজয়ী গানগুলোর মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে একত্র করেছেন। গানগুলো কঠিন সময়ে সান্ত্বনা জুগিয়েছে শ্রোতাদের।
তথ্যসূত্র: পিপল ডটকম, ভ্যারাইটি