শাহীন সামাদের কথা–গানে অনন্য সন্ধ্যা

গাইছেন শাহীন সামাদ। ছবি: ছায়ানটের সৌজন্যে

ছয় দশকের বেশি তাঁর সংগীতজীবন। নিজে গান গাওয়ার পাশাপাশি দীক্ষা দিয়েছেন অনুজদের। কণ্ঠকে অস্ত্র করে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ছিলেন। একাত্তরে গান শুনিয়ে উদ্দীপ্ত করেছেন মুক্তিসেনাদের, শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মনে ছড়িয়েছেন আশার আলো। তিনি একুশে পদকজয়ী প্রখ্যাত সেই কণ্ঠশিল্পী শাহীন সামাদ। শুক্রবার  কার্তিক-সন্ধ্যায় কথা-গানে এক অনন্য সন্ধ্যা উপহার দিলেন এই নজরুলসংগীতশিল্পী। গান ও কথার এই ব্যতিক্রম অনুষ্ঠান সাজিয়েছে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ‘শাহীন সামাদের কথা ও গান’ শীর্ষক আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে।

শুরুতে ছায়ানটের শিক্ষাগুরুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শাহীন সামাদ বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানে যাঁদের কাছে শিখেছি, তাঁদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা জানাই।’ শুরুতে তিনি শোনান ‘শোনো শোনো সুরলোকবাসী অমৃতের যে আছো সন্তান...’। পরিবেশনার মধ্যে আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণায় উঠে আসে ১৯৬৬ সালে শিক্ষার্থী হিসেবে ছায়ানটে যুক্ত হওয়ার কথা।

আরও পড়ুন

এরপর পুনরায় কণ্ঠে তুলে নেন গান। সুরের ভুবনে শ্রোতাকে আচ্ছন্ন করে পিলু রাগ আশ্রয়ে গেয়ে শোনান ‘প্রিয়া স্বপনে এসো নিরজনে/আধো রাতে চাঁদের সনে...’। পরের পরিবেশনায় গেয়ে শোনান, ‘ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি হায় সন্ধ্যায়...’। মোহময় সে সুরের আবেশ থামতেই কণ্ঠে তুলে নেন কবি নিধি বাবুর টপ্পা। এরপর শোনালেন ‘ওগো যমুনায় জল আনতে যাচ্ছ/সঙ্গে নেই তো কেউ/তুমি কাদের কুলের বউ...’। এরপর কণ্ঠে তোলেন গজল, সিন্ধু-কাফি রাগে গেয়ে শোনান, ‘গুল বাগিচার বুলবুলি আমি রঙিন প্রেমের গাই গজল...’।  

গানের ফাঁকে আলাপচারিতার উঠে আসে ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রাহমানের নজরুলের গানের বিকৃতির প্রসঙ্গটিও। ক্ষোভ প্রকাশ করে শিল্পী বলেন, ‘তাঁর মতো একজন বিখ্যাত সংগীত পরিচালক কীভাবে নজরুলের “কারার ঐ লৌহ কপাট” গানটি বিকৃত করে “পিপ্পা” নামের একটি হিন্দি ছবিতে ব্যবহার করলেন? আমরা দীর্ঘকাল ধরে নজরুলের গানের সাধনা করছি। অথচ বর্তমানে অনেকেই নজরুলসংগীতের সুরের বিকৃতি ঘটিয়ে নিজের মতো গাইছেন। এটা অনেক বড় অপরাধ!’

অনুষ্ঠানে শিল্পী আরও শুনিয়েছেন, ‘কেন আজ মধুকর গুঞ্জরণে চোখ মেলিলে...’, ‘আমায় বলো না ভুলিতে বলো না...’, ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল...’ ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী...’, ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি...’সহ বেশ কিছু গান।