প্রথম আলো :
আপনি তো শুরুতে রোমান্টিক ঘরানার গান করে প্রশংসিত হয়েছেন। পরে লোকগান করেছেন। এখন কী করছেন?
খায়রুল ওয়াসী: এখন আমি বিশেষ একটি গান করছি। গানের শিরোনাম ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’। গান দিয়ে পরিবেশ নিয়ে কথা বলা। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। পরিবেশ নিয়ে শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধ করতে, সচেতন করতে এমন গান করছি।
প্রথম আলো :
চার বছর আগের গান ‘পারিছা’ কি আপনাকে প্রথম দর্শকদের কাছে পরিচিতি এনে দেয়?
খায়রুল ওয়াসী: আমি তো চ্যানেল আইয়ের রিয়েলিটি শো বাংলার গানে প্রথম রানারআপ ছিলাম। প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে ‘পারিছা’ গানটি করি। এটি আমার প্রথম টার্নিং পয়েন্ট। পরে ‘আমি তো আমার আছি’ শিরোনামে আরেকটি গান করি। এ দুটি গান আমাকে পরিচিতি এনে দেয়। এখনো যেকোনো কনসার্টে গান করতে গেলে গান দুটি গাইতেই হয়। এ গানগুলো প্রকাশের পরে বুঝেছি মৌলিক গানের গুরুত্ব। এগুলো আমাকে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করে। মৌলিক গানের চর্চায় আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
প্রথম আলো :
স্যাড রোমান্টিক থেকে হঠাৎ করে লোকগান দিয়ে ভাইরাল হলেন?
খায়রুল ওয়াসী: ‘চোখ লাল কিসে’ গানটি দিয়ে আমি এতটা ভাইরাল হব ভাবিনি। আমি যে ফোক গান করতে পারব, এটা তো অনেকেই ভাবেনি। কারণ, এই ধারার গান আমি আগে তেমন করিনি। আরও মজার ব্যাপার, অনেকেই জানেই না, গানটি আমার সুর করা ও লেখা। গানটি আমাকে ভালো একটি জায়গা করে দিল। এখন দেখি, অনেক কনসার্টে অনেকেই এই গান গায়।
প্রথম আলো :
আপনার গান আপনার সামনে অন্যকে গাইতে শুনেছেন?
খায়রুল ওয়াসী: এমন তো হয়েছেই। একবার এক কনসার্টে গিয়ে বসে আছি। পাশে একজন গায়ক বসে আছেন। তিনি বলছেন, ‘কী মুশকিল ভাই বলেন, কে একজন “চোখ লাল কিসে” নামে গান করছে, সেই গান দর্শক শুনবেই। এই গান গাইতে হবে। আরেকজনের গান গাওয়াটা কেমন না।’ তিনি বুঝতে পারেননি গানটি আমার। প্রথম দিকে সেই গানের গায়ক, মানে আমাকে ভালোবেসেই গালি দিচ্ছিলেন, পরে বুঝতে পেরে সরি বলেছেন।
প্রথম আলো :
অন্য কিছু তো হওয়ার সুযোগ ছিল, গায়ক কেন হলেন?
খায়রুল ওয়াসী: শৈশবে আমার মা বেতারে গান শুনতেন। সেই গান আমাকে মুখস্থ করাতেন। নজরুলসংগীত, লোকগীতি ঘরানার গান। আমি স্কুলে সেই গানগুলো গাইতাম। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় একবার গান গেয়ে প্রশংসিত হয়েছিলাম। সেদিন আমার গান শুনে কেউ কেউ কেঁদেছিলেন। আমাকে কোলে নিয়ে আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই মা-বাবার স্বপ্ন ছিল, আমাকে দিয়ে গান করাবেন। মা-বাবাই আমার অনুপ্রেরণা। প্রথমে মায়ের কাছে গান শিখেছি, পরে পেশাগতভাবে গানের তালিম নিয়েছি।
প্রথম আলো :
আপনি সম্প্রতি রুনা লায়লার সঙ্গে গান করেছেন, অভিজ্ঞতা কেমন?
খায়রুল ওয়াসী: সৌভাগ্যবশত এত বড় একটা সুযোগ পেয়েছি। এমন একজন লিভিং লিজেন্ডের সঙ্গে গান করতে পারা আমার জীবনের অন্যতম অর্জন। এটা আমার স্বপ্ন ছিল। এই গান করার দুই মাস আগেই পুতুল আপা একটি অনুষ্ঠানে জানতে চেয়েছিলেন, দ্বৈতকণ্ঠে গান করতে চাইলে কার সঙ্গে গান করতে চাই? তখন আমি রুনা লায়লা ম্যাডামের কথা বলেছিলাম। এটা শুনে হয়তো অনেকেই হেসেছেন। কারণ, তিনি তো এ প্রজন্মের কারও সঙ্গে গান করেন না। সেখানে আমি তো ক্ষুদ্র। পরে আমাকে যখন গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হলো, বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে গান করতে হবে, সঙ্গে রুনা লায়লা ম্যাডাম, তখন তো বিশ্বাসই করতে পারিনি। গানটির সুর করা ছিল আমার। আমার সুরে একজন লিভিং লিজেন্ড গান করবেন। আমিও গাইব। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
প্রথম আলো :
গানটির রেকর্ডিংয়ের সময় রুনা লায়লার সঙ্গে কী কথাবার্তা হয়েছিল?
খায়রুল ওয়াসী: আমাদের অনেক কথা হয়েছে। আমি বাক্রুদ্ধ ছিলাম, রুনা লায়লা ম্যাডামকে দেখে কান্না করছিলাম। আমি ম্যাডামের পায়ের কাছে বসে ছিলাম। এটা স্বপ্ন, নাকি বাস্তব বুঝতে পারছিলাম না। ফুয়াদ নাসের বাবু স্যার সব বুঝিয়ে দিলেন। গানের সুর করা আমার। ম্যাডাম যখন ভয়েস দিতে গিয়ে বললেন, ‘ওয়াসী আমাকে বলে দিয়ো ঠিক হচ্ছে কি না; না হলেও বোলো কিন্তু।’ তখন আমি ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। এত বড় গুণী একজন মানুষ, সামান্য এক তরুণকে এতটা সম্মান দিচ্ছেন। এটা আমাকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু শেখাল, যা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। আর গানটির তিনি প্রশংসা করেছিলেন। বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে মানবিক একটা গান। এর মধ্যে সামাজিক বার্তা দেওয়া ম্যাডামের পছন্দ হয়েছিল বলেই গাইতে রাজি হয়েছেন। ম্যাডাম পরে শুটিং করতে গিয়ে নিজেও কেঁদেছিলেন।
প্রথম আলো :
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
খায়রুল ওয়াসী: আমি গান গেয়ে যাব। আমার ইচ্ছা রয়েছে দেশের লোকগানকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে। আমার ‘চোখ লাল কিসে’ গানটি হিন্দিতে এবার তৈরি হচ্ছে। ভারতের হাঙ্গামায় মুক্তি পাবে। সেখানেও গাইব আমি। এভাবে আমি গান দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। দেশকে তুলে ধরতে চাই। দর্শকদের ভালোবাসা পেতে চাই।