মৃত্যু নিয়ে জুবিনের ভবিষ্যদ্বাণীই যেন সত্যি হলো
ভারতীয় গায়ক জুবিন গার্গ মারা গেছেন ১৯ সেপ্টেম্বর। তাঁর চলে যাওয়ায় স্তব্ধ হয়ে গেছে সংগীতজগৎ। প্রিয় শিল্পীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তাঁর ভক্তরা। জুবিন গার্গের মৃত্যুতে আসাম সরকার ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। এই শোক ছুঁয়ে গেছে সব শ্রেণি–ধর্ম–পেশার মানুষকে। মৃত্যুর পরই লেখক-ঔপন্যাসিক রীতা চৌধুরীর সঙ্গে করা জুবিনের শেষ পডকাস্ট ভাইরাল হয়। সেখানেই নিজের মৃত্যুতে আসামের মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা আগেই বলেছিলেন তিনি। ভবিষ্যদ্বাণী করে জুবিন বলেছিলেন, ‘আমি যদি আসামে মারা যাই, আসাম ৭ দিন থমকে যাবে।’ শেষযাত্রায় আসাম থেকে সে ভালোবাসাই যেন পেয়েছিলেন জুবিন। তাঁর মৃত্যুতে যেন সবকিছুই থেমে গিয়েছিল।
মুম্বাইয়ের আরামের জীবন টানত না জুবিনকে। তাঁর হৃদয়ে ছিল আসাম। এখানেই জীবনের শান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন জুবিন। মুম্বাইয়ে কাটানো বছরগুলোর স্মৃতি টেনে পডকাস্টে জুবিন বলেন, ‘আমি ১২ বছর মুম্বাইয়ে ছিলাম, শহুরে জীবন আমাকে বিরক্ত করে তুলেছিল। অনেকে জিজ্ঞাসা করে, কেন মুম্বাইয়ে থাকি না? আমি বলেছি, রাজা কখনো নিজের রাজ্য ছেড়ে যায় না। ওখানে কোনো রাজা নেই। লতা মঙ্গেশকর মারা গেলেন, কিছু হলো? না। রাজেশ খান্না মারা গেলেন, শুধু খবর হলো রাজেশ খান্না মারা গেছেন। কিন্তু আমি যদি আসামে মারা যাই, আসাম ৭ দিন থমকে যাবে।’
নিজেকে নিয়ে মানুষের ধারণা প্রসঙ্গেও এদিন কথা বলেন জুবিন। বলেছিলেন, ‘আমি যেভাবে থাকি, তাতে ওরা ভয় পায়। ফোন করে না, কারণ, ভাবে বকাঝকা করব। রোহিত শেঠি আমাকে ডেকেছিল তাঁর ছবিতে গান গাওয়ার জন্য, কিন্তু আমি বলেছিলাম, গানটা ভালো লাগেনি, আমি যাব না। রোহিত অবাক হয়ে প্রীতমকে বলেছিল—“কেমন মানুষ এ!” তখন প্রীতম উত্তর দিয়েছিল, “ও এ রকমই। রাজা। সে নিজের মতো করেই থাকে।” যদি কাজ থাকে, আসামে আসুন। আমি কোথাও যাব না।’
গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জুবিনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। হাজারো ভক্ত উপস্থিত ছিলেন শেষবিদায় জানাতে। এর আগে গুয়াহাটির ভোগেশ্বর বড়ুয়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয়েছিল তাঁর মরদেহ। বিপুল ভিড় সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, স্টেডিয়াম সারা রাত খোলা থাকবে।
আসামের অন্যতম জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক আইকন ছিলেন জুবিন গার্গ। অসমিয়া, বাংলা ও হিন্দি গানে তিনি সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। তিনি ভারতজুড়ে পরিচিতি পান ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমার গান ‘ইয়া আলী’র মাধ্যমে। পরে ‘কৃষ ৩’-এর ‘দিল তু হি বাতা’সহ বহু জনপ্রিয় গান উপহার দেন।
সিঙ্গাপুরের নর্থ-ইস্ট ফেস্টিভ্যালে ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর পারফর্ম করার কথা ছিল জুবিনের। কিন্তু তার আগেই তিনি দুর্ঘটনায় মারা যান। জুবিনের মৃগীরোগের সমস্যা ছিল। স্কুবা ডাইভিং করতে নেমে প্রাণ হারান তিনি। তবে আসল কারণ জানতে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি