কুষ্টিয়ায় সমাহিত গীতিকার আবু জাফর
‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম…’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’সহ অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার, সুরকার আবু জাফর আর নেই। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
তিনি দীর্ঘদিন চুয়াডাঙ্গা কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর জন্ম কুষ্টিয়ার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে। পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার কুমারখালী।
রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ছিলেন আবু জাফর। তাঁর রচিত দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গানগুলো তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ আবু জাফরের সৃষ্টি। এই গান তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল অনন্য উচ্চতায়। গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। পাশাপাশি ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম’ গানটিও বিবিসির তালিকায় ছিল।
‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’, ‘আমি হেলেন কিংবা মমতাজকে দেখিনি’, ‘তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি’—গানগুলো এখনো তাঁর সময়ের শ্রোতাদের কাছে জড়িয়ে রেখেছে প্রেম-বিরহের নানা স্মৃতি। নিজের রচিত সব গানের বাণীতে অসামান্য সুর সংযোজনও করেন আবু জাফর। শুধু তা–ই নয়, নিজের রচিত ও সুর সংযোজিত অধিকাংশ গানে কণ্ঠও দিয়েছেন তিনি।
গানের ভুবনে থাকা মানুষটি করতেন সাহিত্যচর্চাও। লিখেছেন বেশ কিছু বইও। এর মধ্যে নতুন ‘রাত্রি পুরনো দিন’ (কাব্য), ‘বাজারে দুর্নাম তবু তুমিই সর্বস্ব’ (কাব্য), ‘বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত কবিতা’ (অনুবাদ কাব্য), ‘মহানবী, মহাজীবন’সহ বেশ কয়েকটি বই উল্লেখযোগ্য।
অবসরটা অনেকটা নিভৃতেই কেটেছে আবু জাফরের। তাঁর পাশে সব সময়ের জন্য ছিলেন এক মেয়ে ও তিন ছেলে। মেয়ে জিহান ফারিয়া গতকাল প্রথম আলোকে জানান, আজ সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে তাঁর বাবাকে সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে আসরের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।