ফরিদপুর থেকে বলিউডে, গীতা দত্ত মানে ‘তুমি যে আমার’
‘তুমি যে আমার’, ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’, ‘নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশ’, ‘মেরা নাম চিনচিন চু’ ও ‘বাবুজি ধীরে চল না’র মতো অনেক জনপ্রিয় গানের কালজয়ী শিল্পী তিনি। তবে তিনি যে বাংলাদেশেরই মাটির কন্যা, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। মুম্বাই চলচ্চিত্রজগতের প্রবাদপ্রতিম গায়িকা গীতা দত্ত। নায়ক, পরিচালক গুরু দত্তের জীবনসঙ্গী। আজ তার জন্মদিন।
শিরোনাম আর শুরুর তথ্যের পর তাঁকে নিয়ে লেখার কোনো ভূমিকা দরকার হয় না। এই বাংলার কন্যা গীতা দত্তের নামের আগে জুতসই বিশেষণ পাওয়াও মুশকিল। যেমন মুশকিলে পড়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ‘হারানো সুর’ সিনেমার গান করছেন। ‘তুমি যে আমার’ গানটি রেকর্ড হবে। সুচিত্রা মানেই তো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ। সবাই সে কথা বলেছিলেন, কিন্তু সুরকার হেমন্ত ঠিক আস্থা রাখতে পারছিলেন না। অন্য রকম ভাবছেন, এই গান গীতা ছাড়া আর কেউ গাইতে পারবে না! হেমন্তের কথামতোই ঠিক হলো, গীতা দত্তই গাইবেন। মুম্বাই (তৎকালীন বম্বে) গিয়ে গানের রেকর্ডিং করা হলো। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। আজও সুচিত্রা সেনকে নিয়ে প্রতিবেদন বা গল্প তৈরি করতে গেলে শুরুতে এই গানের উল্লেখ এসেই পড়ে। যেন সুচিত্রাই গাইছেন, গভীর থেকে। কী অদ্ভুত টান, কী দারুণ গায়কি! এই গানের মতোই উজ্জ্বল ছিলেন গীতা দত্ত, আর এমনই ছিল তাঁর গান। ভারতের সংগীতজগতে একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল—লতাকণ্ঠী, আশাকণ্ঠী হওয়া যায়, কিন্তু গীতাকণ্ঠী হওয়া যায় না।
ফরিদপুরের কন্যা
১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁর জীবনের উন্মেষ বাংলাদেশের ফরিদপুরে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ রায়চৌধুরী ছিলেন জমিদার। তাঁর ১০ সন্তানের মধ্যে গীতা ছিলেন পঞ্চম৷ তখন তিনি গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। ছোট থেকেই গানের প্রতি কন্যার আগ্রহ আর সুরেলা কণ্ঠ মা-বাবার নজরে আসে। স্থানীয় গুরু হরেন্দ্রনাথ নন্দীর কাছে তালিমের ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে কলকাতায় পাড়ি দেয় চৌধুরী পরিবার। কিছুদিন আসাম এবং কলকাতা থাকেন ঘোষ রায়চৌধুরীরা।
পরে ১৯৪২ সালে মুম্বাই পাড়ি দেন তাঁরা। ফরিদপুরের জমিদারি হারানোর পর আসাম, কলকাতা ঘুরে মুম্বাইয়ে থিতু হওয়া অত সহজ ছিল না। আর্থিক টানাপোড়েন পড়ে পরিবার। সেখানে আর কিশোরী গীতার জন্য সংগীতের তালিমের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি মা-বাবার। তাতে থেমে যান গীতা। সংগীত তো তাঁর আত্মায়, নিজের মতো করে চর্চা করে যেতেন। পাশাপাশি গানের টিউশনিও করাতেন। এবাড়ি–ওবাড়ি ছুটতেন টিউশনি করতে। বাসের ভাড়ার পয়সা বাঁচাতে হাঁটতেন মাইলের পর মাইল। যে বাড়িতে গান শেখাতেন, সেখানে গরিব বলে তাঁকে মাটিতে বসতে দেওয়া হতো। সংগীতের প্রতি দরদ ছিল বলেই হয়তো নিয়তি তাঁকে কাকতালীয়ভাবে সেদিকেই নিয়ে যায়। একদিন হঠাৎ পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের নজরে পড়ে যান। শোনা যায়, মুম্বাইয়ে তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন পণ্ডিতজি। বারান্দায় বসে চর্চা করছিলেন কিশোরী গীতা। তাঁর কিন্নর কণ্ঠ ভেসে আসে পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের কানে। দাঁড়ালেন, খোঁজ নিলেন। জহুরির মতো চিনে ফেললেন খাঁটি হীরা। ১৯৪৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গীতার যাত্রা শুরু হয় হনুমান প্রসাদের হাত ধরে ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ ছবিতে। এই ছবিতে গীতা কোরাসে মাত্র দুই লাইন গান গাওয়ার সুযোগ পান।
শুরু হলো পথচলা
হাসনাহেনা জঙ্গলে ফুটলেও ঘ্রাণ ছড়ায় চারপাশ। একটি গানের কোরাসে অংশগ্রহণই গীতার পথচলার রাস্তা তৈরি করে। ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ ছবিতে গীতার কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে শচীন দেববর্মন তাঁর পরের ছবি ‘দো ভাই’তে গীতাকে মূল শিল্পী হিসেবে গাওয়ার দায়িত্ব দেন। ঠিক দেশ ভাগের বছরে; সে সময় নাকি অনেকে বারণ করেছিলেন শচীন দেববর্মনকে, এমন নতুন ‘অপরিপক্ব’ শিল্পীকে এত বড় দায়িত্ব না দিতে।
কিন্তু তিনি পরের পরামর্শে কান না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। হয়তো বাঙালি বলে কিংবা এপারের মানুষ বলে বাড়তি স্নেহ দিয়েছিলেন গীতাকে। শচীন দেবের আস্থার প্রতি ষোলো আনা সম্মান দেখিয়েছিলেন গীতা, ‘মেরা সুন্দর স্বপ্না বিত গ্যায়া’র গানের সুর নাড়া দিয়েছিল শ্রোতাদের। মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে নায়িকার হাহাকারের পুরোটাই ছিল গীতার গায়কিতে। এ সিনেমার ৯টি গানের ৬টিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন ১৬ বছরের সেই নবীন গায়িকা। আর কি চেনাতে হয়? শুধু মুম্বাই না, সারা ভারতের বিনোদন দুনিয়ায় তোলপাড় ঘটে যায়। কে এই গায়িকা? দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাঙালি সেই গায়িকার নাম। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯—তিন বছরের মধ্যে শুধু প্রতিষ্ঠা না, গায়িকা হিসেবে শীর্ষে পৌঁছে যান গীতা। শীর্ষ তিনজনের তিনি একজন। জোহরাবাই অম্বালেওয়ালি বা নুরজাহান থেকে গীতার আলাদা গায়কির কদর বাড়তে থাকে।সেই সময়ে ভক্তিগীতির খুব চল ছিল। আর ভক্তিগীতিতে গীতা ছিলেন অনন্য। করুণ গলায় সমর্পণ, আকুতিতে সেই গানগুলো একদম বুকের গভীরে নাড়া দিত। আবার আধুনিক রোমান্টিক গানে তাঁর কণ্ঠ এবং গায়কিতে আস্থা রাখতেন নির্মাতারা। গরিব বলে গান শেখাতে গিয়ে তাঁকে যেসব বাড়িতে একসময় মাটিতে বসতে বলা হতো, তাঁকে নামডাক হতেই সেসব বাড়ি থেকেই নিমন্ত্রণ আসত। তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন না। সেখানে গিয়ে জোর করে মাটিতেই বসতেন। হয়তো সেই অভিমানই সমকালীন ফর্মুলা গল্পের নায়িকার নেপথ্য কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে পর্দায় দারুণ ফুটে উঠত।শচীন দেববর্মনের সংগীত পরিচালনায় ১৯৫১ সালের ‘বাজি’ সিনেমা নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয় গীতাকে।
পরপর বেশ কিছু গানে যেন শ্রোতারা নতুন আরেক শিল্পী খুঁজে পান। কে জানত পদ্মাপারের সেই কিন্নরী কণ্ঠে পাশ্চাত্য সুর এভাবে মানিয়ে যাবে। সহজে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য ১৯৫০–এর দশকে লাস্যময়ী এবং ডান্স ক্লাবের গানে তিনি প্রথম পছন্দরূপে গণ্য হতে শুরু করেন। গীতার তীক্ষ্ণ বাঙালি টানকে কাজে লাগিয়ে ‘দেবদাস’ (১৯৫৫) এবং ‘পেয়াসা’ (১৯৫৭) ছবিতে তাঁর লোকসংগীতের ধার বাড়িয়েছিলেন শচীন দেববর্মন। ‘পেয়াসা’ ছবিতে ‘আজ সাজন মুঝে অঙ্গ লাগা লে’ বাংলা কীর্তন গানকে গীতা সফলভাবে হিন্দিতে গেয়েছিলেন। এরপর ও পি নাইয়ারের সুরে সব ধরনের গানেই তিনি সাবলীলতার ছাপ রেখে গেছেন।
গীতা ঘোষ থেকে দত্ত
‘তাদবির সে বিগরি হুই তাকদির বানা লে’ দেব আনন্দ আর নায়িকা গীতা বালি অভিনীত ‘বাজি’ সিনেমা গানটি হয়তো অনেকে শোনা। ১৯৫১ সালে এস ডি বর্মনের সংগীত পরিচালনায় এই গানটি রেকর্ড হয় মুম্বাইয়ের বিখ্যাত মহালক্ষ্মী স্টুডিওতে। সেদিন স্টুডিওতে এসেছিলেন ছবির পরিচালক গুরু দত্ত। গানে, গল্পে প্রেমে পড়ে যান গুরু দত্ত। টানা তিন বছরের প্রেমপর্বের পর বিয়ে করেন তাঁরা। সালটা ১৯৫৩। বাড়ির অমতে ২৬ মে বিয়েও করেন তাঁরা। গীতা ঘোষ হয়ে যান গীতা দত্ত। গীতা-গুরুর বিয়ের ছবি পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিয়ের দিন বাংলার শিকড়ের কথা ভোলেননি গায়িকা। নিজে লাল বেনারসি ও গয়নায় সেজেছিলেন। আর ধুতি-সিল্কের পাঞ্জাবি পরেছিলেন গুরু দত্ত।গুরু দত্তের ছবিতে গান সব সময় প্রাধান্য পেত। যেন গানটাও ছবির অন্য আরেকটা গল্প, একটা চরিত্র। গীতার বিয়ের কিছুদিন পরেই গুরু দত্ত নিজের প্রযোজনা ছাড়া স্ত্রীর অন্যত্র গাওয়া নিয়ে আপত্তি করতে থাকেন।
যার ফলে গীতার গান গাওয়ার সীমানা কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে যায়। অবশ্য এর মধ্যেও ‘পেয়াসা’ সিনেমার ‘আজ সাজান মুঝে আঙ্গ লাগালো’, ‘সিআইডি’র ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল জিনা ইহা, ‘আর পার’–এর ‘বাবুজি ধীরে চল না’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফিফটি ফাইভ’–এর ‘থান্ডি হাওয়া কালি ঘটা’, ‘সাহেব বিবি গুলাম’–এর ‘না যাও সাইয়া ছুড়াকে বাইয়া’–এর মতো তুমুল জনপ্রিয় গান উপহার দেন তিনি।
গুজরাটি ও বাংলা গানের গীতা
পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে গুরু দত্তের শর্ত মেনেও সুরকারেরা গীতার জন্য একটা গান তুলে রেখেছিলেন তাঁদের ছবির জন্য। এ পাশাপাশি গুজরাটি ছবিতেও দাপটের সঙ্গে গেয়েছিলেন তিনি। শুধু তা–ই নয়, গুজরাটি ছবিতেও প্রধান নেপথ্য গায়িকা ছিলেন তিনি। গুজরাটি ভাষায় বিখ্যাত সুরকার অবিনাশ ব্যাসের সুরে বেশ কিছু গান গেয়েছিলেন। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে গীতা বেশ কিছু বিখ্যাত বাংলা গান গেয়েছেন।
তাঁর বেশির ভাগ বাংলা গানেরই সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। গেয়েছিলেন নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরেও।
জীবনে নেমে এল ঝড়
অমিতাভ-জয়ার ‘অভিমান’ ছবিটির কথা হয়তো অনেকের মনে আছে। অনেকেই এ ছবির গল্প বলতে গিয়ে গীতা-গুরু জুটির কথা তোলেন। বিয়ের তিন বছর কাটতে না কাটতেই জীবন ঘুরে যায় তাঁদের। দুজনই ছিলেন স্বাধীনচেতা, জেদি। এমনিতে গীতার খ্যাতি শিখরে, সে তুলনায় গুরু দত্ত তখনো যশপ্রার্থী বললে বাড়াবাড়ি হবে না। হয়তো এখানে কোথাও ব্যক্তিত্বের টানাপোড়েন তৈরি করে। শুরু থেকে গুরু দত্ত চাইতেন তাঁর ব্যানার ছাড়া অন্য কোনো ব্যানারের জন্য গান করবেন না গীতা।
এটা মেনে নিয়েও যেন ঠিক মেনে নিতে পারেননি গীতা। শোনা যায়, লুকিয়ে টুকটাক গাইতেন তিনি। তবে ‘সিআইডি’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় থেকে সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও জটিল হয়। এ সময় ওয়াহিদা রহমানকে সামনে এনেছিলেন গুরু দত্ত। গুরু দত্তের ‘সিআইডি’ ছবিতে খলনায়িকা ওয়াহিদা; পরপর গুরু দত্তের ছবিতে অভিনয় করে চলেছেন ওয়াহিদা।
‘পিয়াসা’ ছবিতে নায়িকা। ‘চৌধভি কা চাঁদ’ ছবিতে ওয়াহিদা রহমানের বিপরীতে গুরু দত্তের অভিনয় সাড়া ফেলে। পর্দার প্রেম জীবনে ঢুকে পড়ছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রহমান হয়ে ওঠেন ‘টক অব দ্য টাউন’। তবে শুধু কথার কথাই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও ওয়াহিদার প্রেমে পড়েন গুরু দত্ত। ওয়াহিদা রহমানকে কেন্দ্র করে নাকি মাঝেমধ্যে ঝগড়াও হতো। এর মধ্যে ‘কাগজ কা ফুল’ ছবিটি ফ্লপ হয়। গুরু–গীতার বিবাহবিচ্ছেদ না হলেও তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। অবসাদে ভুগতে থাকা গুরু দত্ত দুবার আত্মঘাতীও হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৬৩ সালে আলাদা হয়ে যান পরিচালক, নায়ক-গায়িকা। গীতা থাকতে শুরু করেন মুম্বাইয়ের সান্তাক্রুজে। গুরু দত্ত ছিলেন পেডার রোডের ফ্ল্যাটে। বছরখানেক পর সেই ফ্ল্যাট থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হলো। মারা যাওয়ার আগের দিনও স্ত্রী গীতা দত্তের কাছেও যান গুরু দত্ত। দুই ছেলের সঙ্গে থাকতে চাইলে গীতা দত্ত রাজি হননি। গুরু দত্তের অপমৃত্যুর পর গীতা দত্তের জীবনেও সেই সময়ে নেমে আসে আরও বিপর্যয়। শোনা যায়, ঘোর পানাসক্ত হয়ে ওঠেন তিনিও।
আর্থিকভাবেও সংকটে পড়েন। অনেক চেষ্টা করছিলেন। সামলে উঠতে এমনকি বাংলা ছবি ‘বধূবরণ’-এ অভিনয়ও করেন। ওদিকে লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোসলে গানের বাজার দখল করে নেন। যদিও ‘অনুভব’ ছবিতে গীতার কণ্ঠে গাওয়া সব কটি গান হিট। কিন্তু ততক্ষণে নিয়তিই যেন সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে তাঁর। ফিরবেন ফিরবেন করছেন, তখনই ধরা পড়ে যকৃতের জটিল রোগ, সিরোসিস।
অর্থের অনটন দূর করতে সেই সময়ে কলকাতার মঞ্চে গীতা অনেক অনুষ্ঠান করেছেন। গীতা পুরোদমে গানের তথা চলচ্চিত্রজগতে ফিরতে চাইলেও বম্বের ফিল্মি দুনিয়ার রাজনীতির সমীকরণ তাঁকে আর সেই সুযোগ দেয়নি। শেষের দিকে হাসপাতালে প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক চিকিৎসার ফাঁকেই সিনেমার চটুল গানে যথাযথ আবেদন ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে, নিজ প্রতিভার গুণে। সকালে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণাদায়ক চিকিৎসা নিয়ে বিকেলে স্টুডিওতে গিয়েছেন ‘মুঝে জান না কাহো মেরি জান’! প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়েও রেকর্ডিংয়ে তিনি কীভাবে একের পর এক গান গেয়ে গেছেন, তা নিয়ে সমালোচকেরা এখনো আলোচনা করেন। গীতা দত্তের শেষের দিনগুলো শারীরিক যন্ত্রণায় কেটেছে। নাকেমুখে নল গোঁজা। কখনো কান বা নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতো। বেশির ভাগ সময়ই অজ্ঞান থাকতেন গায়িকা ও অভিনেত্রী। সালটা ১৯৭২ সালের ২০ জুলাই, কোনো চিকিৎসাই গীতাকে আর সুরের জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। শেষ হয় গীতার জীবনযাত্রা। অবসান হয় সব যন্ত্রণার।
শোনা যায়, শচীন দেববর্মন তাঁর পছন্দের গীতার জন্য আলাদা করে রেখেছিলেন ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি’ গানটি! শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। শচীন কর্তা নিজেই গানটি গেয়েছেন বটে, তবে এই গানটি আমাদের পদ্মাপারের মেয়ের কণ্ঠে শুনতে না পাওয়ার আফসোস থেকে যাবে সংগীতানুরাগী শ্রোতাদের।