তাহসানের গাওয়া গান: সুর নকলের অভিযোগ, কী বললেন অর্ণব

প্রথমবারের মতো ‘কোক স্টুডিও বাংলা সিজন ১’–এ দেখা গেল দেশের জনপ্রিয় গায়ক তাহসানকে। ভারতীয় শিল্পী মধুবন্তী বাগচীর সঙ্গে পুরোনো একটি গানে তাহসানকে অল্প সময়ের জন্য নতুন একটি গানের মাত্র কয়েকটি লাইন গাইতে দেখা গেছে। পূর্ণাঙ্গ একটি গান ছাড়া মাত্র কয়েক লাইন গাওয়ার কারণে তাহসানের ভক্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও একটি বড় অংশ ইউটিউবে গানটির সুর নকলের অভিযোগ তুলেছেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চলছে বিতর্ক। তাহসানের গাওয়া গানটির সুরকার অর্ণব প্রথম আলোকে বললেন, ‘যে গানের সঙ্গে সুরের মিলের কথা বলা হচ্ছে, সে গান আগে কখনোই শুনি নাই। এখন যদি মিল থাকে বা কেউ যদি মিল পায়, পাইল আরকি!’

অর্ণব জানালেন, বিদেশি গানের মেলোডির এ রকম মিল তো অনেক সময় হতেই পারে। থাকতেই পারে। এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। তাহসানের গাওয়া গানটির সুর যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী ক্লাইরোর গাওয়া ‘সোফিয়া’ গানের সঙ্গে হুবহু মিলের কথা বলছেন নেটিজেনরা।
মীরা দেববর্মনের লেখা আর শচীন দেববর্মনের সুর ও গায়কির বহুল শ্রোতাপ্রিয় গান ‘দখিন হাওয়া’ গানটি নতুন সংগীতায়োজনে প্রকাশ করেছে ‘কোক স্টুডিও বাংলা সিজন ১’। গানটি গেয়েছেন ভারতীয় শিল্পী মধুবন্তী বাগচী। এই গানের একটি অংশ ফিউশন করা হয়েছে ‘যদি উত্তরে হাওয়া বয়ে যায়, জেনো আমি নেই/ শোনো ঝরাপাতা দিন কয়ে যায়, কেন আমি নেই?’—এই ধরনের কয়েকটি নতুন লাইন দিয়ে। গাউসুল আলমের লেখা এই অংশটুকু গেয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী তাহসান খান। গানটি প্রকাশের পরই তাহসানের গাওয়া এই অংশটুকু নিয়ে সুর নকলের অভিযোগ উঠেছে। যার সুর ও সংগীত করেছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গানপ্রেমীরা জানিয়েছেন, গানটির ‘যদি উত্তরে হাওয়া বয়ে যায়, জেনো আমি নেই/ শোনো ঝরাপাতা দিন কয়ে যায়, কেন আমি নেই?’—এই লাইনগুলোর সুরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংগীতশিল্পী ক্লাইরোর গাওয়া প্রথম অ্যালবাম ‘ইমিউনিটি’র ‘সোফিয়া’ গানের সুরের হুবহু মিল রয়েছে। ক্লাইরোর গাওয়া অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে, এরই মধ্যে গানটি শিল্পীর ইউটিউবে ৯ কোটির বেশি ভিউ হয়েছে। ক্লাইরোর গাওয়া যে গানের সঙ্গে সবাই তাহসানের গাওয়া গানটির সুরের হুবহু মিল খুঁজে পাচ্ছেন, সেটি কোনো দিন শোনেননি বলে জানালেন সুরকার ও সংগীত পরিচালক অর্ণব। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলার কিছু নাই। আমি তো গানটা শুনিও নাই। কেউ কেউ হয়তো কোথাও মিল পাবে। মিল থাকে আর কেউ যদি মিল পায়, পাইল আরকি। বিদেশি গানের মেলোডির এ রকম মিল তো অনেক সময় হইতেই পারে। থাকতেই পারে। এটা নিয়ে বলার কিছু নাই।’

তাহসান খান
ছবি : প্রথম আলো

কিন্তু ফেসবুকে এটা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। কোক স্টুডিওর মতো প্ল্যাটফর্মে গানের সুরের হুবহু মিলের বিষয়টি ইস্যুও করছেন। আপনি কী বলবেন? ‘এখন কেউ যদি ইস্যু করতে চায়, আমি তো আটকাইতে পারব না। তাদের মনে হইতেই পারে, এই গানের মতো, ওই গানের মতো,’ বললেন অর্ণব। কিন্তু আপনি যে গানটি তৈরি করেছেন, সেটি নিয়ে কী বলবেন? ‘আমি যেভাবে গান বানাইছি, এত কিছু শুনে তো বানাইনি। আমার যেটা মনে আসছে, একসাথে বসে গানটি সবাই মিলে বানিয়েছি, সুরটা তখন তো কারও মিল লাগে নাই। জানি না, এখন এটার পর হয়তো লাগতে পারে। অনেক জায়গায় অনেক কিছুই লাগতে পারে অনেকের। এটার সাথে মিল, ওইটার সাথে মিল,’ বলেন অর্ণব।
আপনি বলছিলেন, মিল থাকতেই পারে। তাহলে যাঁরা মিল খুঁজে পেয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন জানতে চাইলে অর্ণব বললেন, ‘কী বলব আর। “হাওয়া” ছবিরও তো মিল পাইল কোরিয়ান সিনেমার সঙ্গে। এ রকম অনেক কিছুই মিল পড়বে। ভালো তো। ভালো। আমি শুনলাম, জানলাম। (হাসি)। ব্যাপার না।’ তাহলে পরবর্তী ভাবনা কী? ‘চিন্তাভাবনা মানে, যেভাবে কাজ করি, সেভাবেই কাজ করব। আমি আমার মতো কাজ করে যাব।’

আপনি বলছিলেন, কোক স্টুডিওর গানটি তৈরির আগে আপনি ক্লাইরোর গাওয়া ‘সোফিয়া’ গানটি শোনেননি। কিন্তু যখন সুর নকলের বিতর্ক উঠেছে, তারপর কি গানটি শোনার কোনো আগ্রহ হয়েছে? অর্ণব বললেন, ‘আমার কোনো আগ্রহ নাই গানটি শোনার।’
‘কোক স্টুডিও সিজন ১’–এ তাহসান ও মধুবন্তী বাগচীর গাওয়া ‘দখিন হাওয়া’ গানটির ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগে ইউটিউবে ৭ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে। গানের নিচে মন্তব্য এসেছে সাড়ে চার হাজারের বেশি। ৬১ হাজারের বেশি মানুষ লাইক করেছেন।