বাবা হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন আপন মনে গাইছেন মেয়ে

বিউটি
ছবি : বিউটির ফেসবুক

পেশাদারি গানের জগতে বিউটির পথচলা রিয়েলিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা দিয়ে। এই প্রতিযোগিতার প্রথম আসরে বিউটি রানারআপ হন। খ্যাতি পেয়েছিলেন লালনের গান গেয়ে। লোকগান আঁকড়ে এখনো পথ চলছেন। লালনকন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিউটির গানের পথচলায় অনেকের অবদান থাকলেও বিশেষভাবে বাবাকে এগিয়ে রাখলেন। তাই চুয়াডাঙ্গা থেকে যখনই ঢাকায় বিউটির বাবা মজিবর রহমান আসেন, হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়েন এই গায়িকা। বাবা সংগত করেন আর পাশে বসে মেয়ে একের পর এক গান পরিবেশন করেন। তেমনই একটি ভিডিও বিউটি তাঁর ফেসবুক প্রকাশ করেছেন।

বাবার সঙ্গে বিউটি

বাবা হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন আর তিনি পাশে বসে গাইছেন, এমন ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে বিউটি লিখেছেন, ‘আজ এই বিউটি হওয়ার পেছনে হয়তো অনেকেরই অনেক অবদান রয়েছে। কিন্তু নিঃসন্দেহে আমার বাবার অবদান সব থেকে বেশি, কেননা শুরুটা হয়েছিল বাবার হাত ধরেই! গান শেখার ক্ষেত্রে আমার বাবাই ছিলেন আমার সব থেকে বড় প্রেরণা!’

বিউটি
ছবি : বিউটির ফেসবুক

২০০৫ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান-তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার প্রথম মৌসুমের অডিশন পর্ব শুরু বিউটির। ফরিদপুর জোনের অডিশন পর্বে গান গাইতে গেলে বিউটির কাছ থেকে বিচারকেরা সেদিন খুব বেশি কিছু আশা করেননি। কিন্তু বিচারকদের মুগ্ধ করেছিলেন তাঁর গায়কি দিয়ে। সেদিন থেকে তাঁর নাম হয় ‘লালনকন্যা’।

চুয়াডাঙ্গা জেলার ছোট একটি গ্রাম মোড়ভাঙ্গা থেকে উঠে আসা এই শিল্পীর ‘লালনকন্যা’ হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটা কিন্তু মোটেও সাধারণ নয়। এর পেছনে আছে অনেক সংগ্রাম আর সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সামনের এগোনোর সাহস। বিউটির বাবা মজিবর রহমানের গানের প্রতি দারুণ ঝোঁক। কেবল ভালোবাসার জোরেই ওস্তাদের কাছ থেকে গান শিখতে পেরেছিলেন। কিন্তু কোনো দিন মঞ্চে পরিবেশন করেননি। ইচ্ছা ছিল তাঁর একজন সন্তানকে শিল্পী বানাবেন। তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে কমবেশি সবাই গান করতেন। কিন্তু বাবার মতো সংগীতকে আপন করে নিয়েছিলেন একমাত্র বিউটি।

বিউটি তাঁর বাবার সঙ্গে গান গাইছেন, এমন ভিডিওর ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশনেও যেন সেই কথাটাই বললেন।

কথায় কথায় বিউটি বলেন, ‘বাবা যখনই ঢাকায় আসেন, এখনো নিয়ম করে তাঁর বাজানো হারমোনিয়ামের সাথে গান গাইবার লোভটা সামলাতে পারি না—ঠিক যেমনটা ছোটবেলায় করতাম। তাই ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়ে গেল। এ জন্যই, বাবা যখনই ঢাকায় আসেন, বাবা-মেয়ের গানের আসর এভাবেই শুরু হয়, যেখানে বাবা গুরু আর আমি তার শিষ্য। এখন পর্যন্ত আমার গানের সব থেকে বড় ক্রিটিক আমার বাবাই। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু এখনো আমার বাবার আমাকে ধরে ধরে গান শেখানোর অভ্যাসটা রয়ে গেছে। তাই সুখস্মৃতির এই মুহূর্তটাকে স্মৃতির পাতায় বন্দী করে রাখলাম।’

সবশেষে বাবা মজিবর রহমানের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বললেন, ‘আল্লাহপাক যেন আমার বাবাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন এবং সর্বদা সুস্থ-সবল রাখেন।’