শান্ত-উত্তাল-আনন্দময় ‘নদীর কূল’

এই গানের শিল্পী রিপন কুমার সরকার, যিনি ‘বগা তালেব’ নামে বেশি পরিচিত
কোক স্টুডিও বাংলা

‘ওপারে মেঘের ঘটা, কনক বিজলি ছটা, মাঝে নদী বহে…।’
এত দিন প্রবীণদের কণ্ঠে এই গান যাঁরা শুনতেন, বন্ধু–আড্ডায় গিটার নিয়ে এখন তাঁরা এই গানেরই সুর তুলছেন। গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গলায় আনছেন আকুলতা। তরুণ প্রজন্ম ধ্যানে মজেছেন ‘নদীর কূল’ গানটির।

শত বছর আগে কালজয়ী গানটি লিখেছিলেন পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন আর কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমেদ তাঁর দরদি গলা দিয়ে গানটিকে মানুষের অন্তরে স্থান করে দিয়েছিলেন। গ্রামগঞ্জে তো ছিলই, শহরের মানুষেরও প্রাণের আবেগ ছিল ‘নদীর কূল নাই’ গানটি। এই গানকে আবার নতুন রূপে এই সময়ে উপস্থাপন করে কোক স্টুডিও বাংলা।

কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় মৌসুমের নতুন গান ‘নদীর কূল’। রিপন কুমার সরকার, যিনি ‘বগা তালেব’ নামে পরিচিত, তাঁর অনবদ্য পরিবেশনায় ২৫ মে প্রকাশিত হয় গানটি। শিল্পী রিপন কুমার সরকার, গায়ক অর্ণবসহ এই গানে আরও অংশগ্রহণ করেছেন জ্যাজশিল্পী ইদ্রিস।

গানটির সংগীতায়োজন করেছেন সংগীতশিল্পী অর্ণব। তিনি বলেন, ‘কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম থেকেই আমরা বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি। সংগীতপ্রেমী এই দেশের মানুষের আবেগকে ফুটিয়ে তুলতে প্রতিটি গানে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। নদীর কূল গানটি পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের লেখা এবং মহান শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের গাওয়া কালজয়ী গানের আধুনিক সংস্করণ। এই নতুন গানের মাধ্যমে আমরা তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। ‘‘নদীর কূল’’ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানায়। লোকসংগীতের মূল আবেগটি অক্ষুণ্ন রেখে এতে যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক কিছু বিষয়। এই গানের হৃদয়ছোঁয়া পরিবেশনাগুলো ঘুচিয়ে দেয় প্রজন্ম, ভাষা ও আবেগের দূরত্ব।’

অর্ণব আরও বলেন, “‘নদীর কূল” একটি ভাটিয়ালি গান। কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম মৌসুম থেকেই একটি ভাটিয়ালি গান করার পরিকল্পনা ছিল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবাবায়িত হলো দ্বিতীয় মৌসুমে। প্রথম মৌসুমের ‘‘চিলতে রোদ’’–খ্যাত উদীয়মান শিল্পী রিপন কুমার সরকার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে গানটিকে প্রাণ দিয়েছেন। এই গানের যে আকুলতা, যে আবেগ তিনি তা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গানটির যেসব অংশে সুরের খেলা রয়েছে, সেখানে কীর্তনের প্রভাব রয়েছে। রিপন কুমার সরকার একটি কীর্তনের দলের পরিচালক। এই ধরনের গানে তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কারণে এটি তাঁর শিল্পীসত্ত্বা প্রকাশের জন্য চমৎকার একটি গান।’

গানটি প্রসঙ্গে কথা হয় রিপন কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কোক স্টুডিও বাংলার প্রথম মৌসুম থেকে এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারাটা আমার জন্য অনেক সম্মানের। আমি কৃতজ্ঞ কোক স্টুডিও বাংলার কাছে। আব্বাসউদ্দীনের মতো বিখ্যাত শিল্পী এবং জসীমউদ্‌দীনের মতো মহান কবির ‘‘নদীর কূল’’ গানটি গাইতে পারাও আমার জন্য সম্মানের। এই গান প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে নতুন প্রজন্মের দেশের গানের প্রতি আগ্রহ দেখে মন ভরে যাচ্ছে। এই গানে ভাটিয়ালি ও কীর্তনের মতো উপাদান আছে, যা একসঙ্গে মিলে দর্শক-শ্রোতাদের অন্য রকম এক আবহ দিয়েছে।’
গানটিতে আরও অংশগ্রহণ করেছেন জ্যাজশিল্পী ইদ্রিস। ‘সুথ সেয়ার্স’ নামে লন্ডনে তাঁর নিজস্ব ব্যান্ড আছে। ইদ্রিস জানান, ‘দেশের বাইরে সংগীত নিয়ে কাজ করলেও আমি বাংলাদেশি। শিকড়ের টান থাকবেই। শিকড়ের টান মজবুত করতে কোক স্টুডিও বাংলার এই গানে যুক্ত হতে পেরে আমি খুশি।’

নদীর প্রকৃতি হলো কখনো শান্ত, কখনো উত্তাল; কখনো আনন্দময়, আবার কখনো বিষণ্ন। এমন নানা প্রকৃতির নদীর ধরনকে গানের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। সংগীতায়োজক ও শিল্পী অর্ণব গানের স্বরে গতিশীল নদীর তরঙ্গকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। আর গানটি প্রকাশও করা হয় ভিন্ন ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ২৫ মে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে কোক স্টুডিও বাংলার অল্পসংখ্যক ভক্তের সঙ্গে দেখা করেন শিল্পী অর্ণব। ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে এসে তিনি ভক্তদের সঙ্গে যুক্ত হন। কথা বলেন সংগীত নিয়ে। এরপর গানটি প্রকাশিত হয় কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে।