আমার একটাই কথা, দেশের ছেলে দেশে আছি যাব কই: তাসরিফ খান

হঠাৎ করেই ছড়িয়েছে, আর দেশে থাকছেন না তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। শিগগিরই তিনি দেশের বাইরে থিতু হচ্ছেন। এদিকে তাঁর কুঁড়েঘর ব্যান্ড থেকে এসেছে ‘পাহাড় যাব’ ও ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে নতুন গান। ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

তাসরিফ খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

শুনলাম আপনি দেশ ছাড়ছেন?

তাসরিফ খান: এটি সঠিক তথ্য নয়। আমি দেশ ছাড়ছি না। একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বক্তব্যকে সংক্ষিপ্ত করে অনেকেই বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করেছেন; যা কোনোভাবেই পুরো সঠিক তথ্য নয়।

প্রথম আলো :

আপনি দেশ ছাড়া সম্পর্কিত কোনো বক্তব্য দিয়েছিলেন?

তাসরিফ খান: এখন যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে আশাবাদী হলেও কখনো মনে হয় পরিবেশ খুব একটা ভালো নয়। অনেক সময় রাজনীতির অনেক নোংরামি চোখে পড়ে। আজকে যাদের দেখি ভাই ভাই, কাল দেখি তারা শত্রু। এভাবে গ্রুপিং বা কোনো রাজনৈতিক দল চলতে থাকলে দেশের অবস্থা ভালো হবে না। আমরা আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব। যে কারণে কথায় কথায় দেশ ছাড়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম। কথা প্রসঙ্গে এমন একটা আলাপ এসেছিল। সেটাই পরবর্তী সময়ে দেখি সবাই লিখছেন আমি দেশ ছেড়ে যাচ্ছি।

তাসরিফ খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

চ্যালেঞ্জের কথা কেন মনে হলো?

তাসরিফ খান: আমরা ৫ আগস্ট এক হয়েছিলাম এক উদ্দেশ্যে; দেশের ভালোর জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করব। পরবর্তী সময়ে দেখা দিল দ্বন্দ্ব। এখন একটি পরিবারের সবাই যদি চায় ভালো করতে, তাহলে সবার মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকবে কেন? আমরা সবাই এক হয়ে পরিবারের ভালোর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারি। একটি ভালো পরিকল্পনা করতে পারি। এতে তো রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে রাজনৈতিক দলের ভালো কাজের প্রতিযোগিতা দেখতে চাই। কিন্তু রাজনৈতিক নোংরামি আমাকে পীড়া দেয়।

প্রথম আলো :

প্রতিযোগিতা কি আপনার চোখে পড়ছে?

তাসরিফ খান: বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোই তো পরবর্তী সময়ে সরকার গঠন করবে। তাদের প্রতি আস্থার জায়গাটা তৈরি হতে হবে। তাদের এখন সেরা সময় মানুষের মন জয় করার। তাদের সেরাটা দিয়ে মানুষের পাশে থাকতে হবে। তা না করে কেউ কেউ যদি এখনই নিজেদের লাভের জায়গা চিন্তা করে, তাহলে প্রতিযোগিতা থাকল কোথায়? যে কারণে মাঝেমধ্যে মনে হয়, এখানে দেশ নিয়ে ভাববার লোকের অভাব। বেশির ভাগ মানুষই ক্ষমতায় যেতে চায়। এসব ঘটনা দেখে অনেক সময় অভিমানে মনে হয় দেশে আর থাকব না।

তাসরিফ খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

কেউ কেউ তো আপনাকে ট্রল করছেন?

তাসরিফ খান: দেশের কল্যাণে যারা কাজ করবে, আমি সব সময় তাদের পাশে আছি। গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছি। সেই সময় তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েছিলাম। অনেকবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এখন তারাই এসব খবর পোস্ট করে ট্রল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি এগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। খারাপ লাগছে, যারা পালিয়ে আছে, তারাও একটা সুযোগ পেয়েছে। আমাকে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরা জানেন আমি দেশ ছেড়ে যাওয়ার মতো মানুষ নই।

প্রথম আলো :

শৈশবে কখনো ইচ্ছা ছিল বিদেশে যাওয়ার?

তাসরিফ খান: আমি চাইলে তো আরও অনেক আগে বিদেশে যেতে পারতাম। আমার সেই সুযোগ তো আছে। কিন্তু বিদেশে যাব কেন। আমার দেশটাকে ভালো লাগে বলেই তো দেশে থাকি। দেশ নিয়ে গান করি। বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি। দেশের মানুষের জন্য আমি কাজ করতে চাই। আমার একটাই কথা, দেশের ছেলে দেশে আছি, যাব কই। দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না। আমি চাই দেশ ভালো থাকুক। দেশের মানুষ ভালো থাকুক। দেশ এগিয়ে যাক।

নতুন গান নিয়ে তাসরিফ খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রথম আলো :

গান নিয়ে ব্যস্ততা কেমন?

তাসরিফ খান: আমি পুরোপুরি গান নিয়েই আছি। অল্প সময়ে দুটি গান মুক্তি দিয়েছি। একটি ‘পাহাড় যাব’ শিরোনামের গান। আরেকটি ‘বাংলাদেশ’ দেশকে উৎসর্গ করে আমি ও জিসান খান গেয়েছি। সেই গানটা বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ফুটবল ম্যাচের দিন প্রকাশ পেয়েছে। গানটি স্টেডিয়ামেও শোনানো হয়েছে। সামনে আরও গান রয়েছে, সেগুলো এখন গুছিয়ে নিচ্ছি। এ বছর একের পর এক গান আসছে।

প্রথম আলো :

সমুদ্র নিয়ে গানের পরে কেন মনে হলো পাহাড় নিয়ে গান করবেন?

তাসরিফ খান: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গাওয়া ‘তাই তো আইলাম সাগরে’ গানটির পরে ভক্তরা পাহাড়ের সৌন্দর্য নিয়ে গান চেয়েছিলেন। এটা আমাদের মনে ধরে। কারণ আমরা সময় পেলেই পাহাড়ে ঘুরতে যাই। পাহাড়ের কোলে বসে গান গাই। পাহাড়ের নানা মুহূর্ত ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। যখনই পাহাড়ে গিয়েছি খুব কাছ থেকে দেখেছি পাহাড়ের কালচার। সে বিষয়গুলো ভক্তদের জন্য গানে তুলে ধরেছি।

তাসরিফ খান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন