অর্থাভাবে ওষুধ কিনতে পারছেন না কাঙালিনী সুফিয়া

করোনার আগে কাঙালিনী সুফিয়া চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তখন চিকিৎসক প্রতি মাসে একবার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। পরে করোনা শুরু হলে আর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসা হয়নি তাঁর। কাঙালিনী সুফিয়ার মেয়ে বলেন, ‘মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার টাকা কোথায় পাব? নিয়মিত খাবারই জোটে না।

কাঙ্গালিনী সুফিয়া
সংগৃহীত

১৩ দিন ধরে সংগীতশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়ার ঘরে ওষুধ নেই। টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনতে পারছেন না তিনি। ফলে দিন দিন শারীরিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি। তাঁর শরীরে বাসা বাঁধা রোগগুলো আবারও বাড়তে শুরু করেছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এই প্রবীণ গায়িকার। চিকিৎসকেরা বলেছেন, প্রতি মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে তাঁকে। তা-ও অর্থের জন্য সম্ভব হচ্ছে না।
শৈশব থেকেই গানের সঙ্গে বসবাস সুফিয়ার। চারপাশের সবাই গান শুনতে চাইলে তিনি গেয়ে উঠতেন ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’ কিংবা ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’সহ অসংখ্য গান। সেই গানে সবাই তাল মেলাতেন, গুনগুনিয়ে গাইতেন। কদিন আগেও তাঁর মুখে ছিল সেই গান। বাড়িতে পাটি বিছিয়ে নাতিদের সঙ্গে গাইতেন তিনি। কিন্তু এখন সেই কাঙালিনী সুফিয়ার মুখে নেই কোনো গান। তাঁর সুর যেন থেমে গেছে।

কাঙ্গালিনী সুফিয়া
প্রথম আলো

জানা গেছে, বাসায় কোনো ওষুধ না থাকায় শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর মেয়ে পুষ্প বেগম মায়ের অসুস্থতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘১৩ দিন ধরে মায়ের ওষুধ কেনার কোনো টাকা নেই। ওষুধের দোকানে ২৫ হাজার টাকার মতো বাকি পড়ে আছে। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আর ওষুধ আনতে পারছি না। মাকে নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। মা কারও সঙ্গে সেভাবে কথাও বলেন না।’

করোনার আগে এই সংগীতশিল্পী চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তখন চিকিৎসক প্রতি মাসে একবার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। পরে করোনা শুরু হলে আর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসা হয়নি তাঁর। কাঙালিনী সুফিয়ার মেয়ে বলেন, ‘মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার টাকা কোথায় পাব? নিয়মিত খাবারই জোটে না। ডাক্তার বলেছিলেন, আজীবন তাঁকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।’

তাঁর মেয়ে পুষ্প বেগম মায়ের অসুস্থতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘১৩ দিন ধরে মায়ের ওষুধ কেনার কোনো টাকা নেই। ওষুধের দোকানে ২৫ হাজার টাকার মতো বাকি পড়ে আছে। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আর ওষুধ আনতে পারছি না। মাকে নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। মা কারও সঙ্গে সেভাবে কথাও বলেন না।’
বসন্ত উৎসবে সংগীত পরিবেশন করছেন কাঙালিনী সুফিয়া।
প্রথম আলো,ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হার্ট ও মস্তিষ্কের গুরুতর কিছু সমস্যায় ভুগছেন। ওষুধ না খেতে পারায় ক্রমাগত তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
এই লোকশিল্পী শরীর ভালো থাকলে গান গাইতে ছুটে যেতেন। তাতে কিছু আয় হতো। কিন্তু করোনায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান না হওয়ায় তাঁরও আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ। গত ঈদে কুষ্টিয়াতে ছিলেন। সেখান থেকে কিছু চাল নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোও বেশ আগেই ফুরিয়ে গেছে। এখন আর চলছে না। বাকিতে দোকান থেকে কিনছেন ওষুধ ও খাবারদাবার। সেই বাকি জমতে জমতেও ৫০ হাজারের মতো হয়ে গেছে। পাওনাদারেরা বাড়িতে এসে টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন।
সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় পরিবারসহ থাকেন কাঙালিনী সুফিয়া। তাঁর মেয়ে পুষ্প বেগম বলেন, ‘আপনারা মনে করতে পারেন মোবাইলে মিথ্যা কথা বলছি। কিন্তু আপনারা এসে আমার মাকে দেখে যান। তাহলে বুঝতে পারবেন আমরা কত অসহায় হয়ে পড়েছি। এখন কেউ আসে না, ফোন দিয়ে খবরও নেয় না। মা ভাবেন, তাঁকে আর দেখার কেউ নেই।’

কাঙালিনী সুফিয়ার জন্ম ১৯৬১ সালে। প্রকৃত নাম টুনি হালদার। ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী তিনি। গ্রামের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ১৪ বছর বয়সে মানুষের নজর কেড়েছিলেন। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্তি পান। তাঁর গানের গুরু ছিলেন গৌর মহন্ত ও দেবেন খ্যাপা। হালিম বয়াতির কাছেও গান শিখেছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী।

কাঙালিনী সুফিয়া
প্রথম আলো