চল্লিশ বছরের পুরোনো গান করলেন আঁখি

আঁখি আলমগীরসংগৃহীত

এমনিতে সারা বছর ব্যস্ত সময় কাটে আঁখির। করোনা সে ব্যস্ততায় লাগাম টানে। লকডাউন ভালো কাটেনি তাঁর। ঘরে বসে টুকটাক গান করেছেন কেবল। এ ছাড়া তেমন কিছু করারও ছিল না। হয়তো এ কারণেই অসুস্থতা পেয়ে বসেছে আঁখি আলমগীরকে। তবে এই সময়ে তিনি সন্তানদের সময় দিয়েছেন। তারা যেন ভেঙে না পড়ে, সে জন্য নিজের অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেননি, সন্তানদেরও বুঝতে দেননি কিছু।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন শিল্পী আঁখি আলমগীর। লকডাউনে কেমন কেটেছে, সেসব ভাগাভাগি করেন এই শিল্পী। ভিডিও আড্ডায় তিনি চল্লিশ বছর আগে প্রকাশিত পুরোনো গান নতুন করে গাওয়া, নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সে গানের সংগীতচিত্র প্রকাশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

আঁখি আলমগীর
সংগৃহীত

‘শেষ করো না’ শিরোনামে সেই গানটি ২৭ সেপ্টেম্বর আঁখির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়। শিল্পী জানান, এ গানের সঙ্গে দুজন প্রয়াত বিশেষ মানুষের স্মৃতি রয়েছে। একজন আলাউদ্দীন আলী, অন্যজন জাফর ইকবাল। প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো এই গানটি লিখেছিলেন মনিরুজ্জামান মনির। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য আশির দশকে গানটি তৈরি করেছিলেন প্রয়াত সংগীত পরিচালক আলাউদ্দীন আলী। গানটি গেয়েছিলেন কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী রুনা লায়লা ও অকাল প্রয়াত নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল। জানা গেছে, আলাউদ্দীন আলীর সঙ্গে জাফর ইকবালের এটাই প্রথম গান। এরপর তাঁরা একসঙ্গে আরও অনেক গান করেছিলেন। জনপ্রিয় সেই গানটি এবার একক কণ্ঠে তুলেছেন আঁখি আলমগীর। জে কে মজলিশের নতুন সংগীতায়োজনে তৈরি হলো গানটি। আর গ্ল্যামারাস আঁখিকে ক্যামেরার সামনে রেখে ভিডিও তৈরি করেছেন হাবিব।

আঁখি আলমগীর
সংগৃহীত

আঁখি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে কেন যেন এই গানটি আমার অসম্ভব পছন্দের। এর কথা-সুর সত্যিই অসাধারণ। গানটি আমি গেয়েছি আলী চাচার অনুমতি নিয়ে, তিনি বেঁচে থাকতেই। রেকর্ডিং করেছি লকডাউনের কয়েক দিন আগে। এরপর থেকে তো ঘরবন্দী। এর মধ্যে আলী চাচাও চলে গেলেন। আফসোস, তাঁকে গানটি শোনাতে পারলাম না।’ আক্ষেপ থেকে নতুন সংস্করণের গানটি তিনি উৎসর্গ করেছেন আলাউদ্দীন আলীকে। গানটির শুরুতে শুভেচ্ছাবার্তা রয়েছে আলীকন্যা কণ্ঠশিল্পী আলিফের। তিনি জানিয়েছেন গানের পেছনের গল্প। তিনি বলেন, ‘গানটির পেছনে আমার বাবা–মায়ের দুজনেরই স্মৃতি আছে। গানটি আব্বু মনির চাচার সঙ্গে তৈরি করেছেন।’

আঁখি আলমগীর
সংগৃহীত

এর আগে করোনাকালের অভিজ্ঞতা নিয়ে আঁখি আলমগীর বলেছিলেন, ‘করোনাকাল কেটে গেলে শিগগিরই গানবাজনা হবে না। হাতে গোনা কয়েকজন বাদে গানের জগতের বেশির ভাগ মানুষই কষ্টে থাকবে। শিল্পী, কলাকুশলীদের মধ্যে অনেকে হয়তো অসুবিধার কথা বলতে পারছেন না। তবে আমরা বুঝতে পারছি, অনেকেই এরই মধ্যে সমস্যায় পড়ে গেছেন। আমরা যতই চাকচিক্যের জীবন যাপন করি না কেন, আমরা যা আয় করি, প্রায় পুরোটাই ব্যয় হয়ে যায়। অথচ এটি মানুষ বোঝে না। আমাদের দেশের শিল্পীরা কিন্তু টাকার ওপর ঘুমান না। তাঁরা আয় যেমন করেন, তেমনি খরচও আছে। আর বসে খেলে তো রাজার ভান্ডারও শেষ হয়ে যায়।’

আশা ভোঁসলের সঙ্গে আঁখি আলমগীর
সংগৃহীত

শিল্পীদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বানও করেছেন আঁখি। তিনি বলেছেন, ‘এই মহাদুর্যোগ কেটে গেলে শিল্পীদের দিকে সরকারের তাকাতে হবে। সংস্কৃতি অঙ্গনের গুণীজন ও কর্তাব্যক্তিদের এ নিয়ে কথা বলা উচিত। প্রণোদনা আদায়ের পর এটি যেন সঠিকভাবে বণ্টন করা হয়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রকৃত অর্থে যাঁরা কষ্ট করছেন, তাঁদের কয়েক মাস চালিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিল্পীদের পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে। সবাই খেয়াল করলে দেখবেন, এই দুর্যোগে কিন্তু শিল্পীরা ঘরে বসে থাকলেও থেমে নেই। তাঁরা ঘরে বসে গান গেয়ে, কথা বলে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছেন। কেউ নানাভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছেন গোপনে বা প্রকাশ্যে। দেশ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই এমনটা করেন তাঁরা। ভালোবাসা ছাড়া তাঁরা কিন্তু আর কিছু চান না।’

লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে আঁখি আলমগীর
সংগৃহীত

এই দুর্যোগে কিন্তু শিল্পীরা ঘরে বসে থাকলেও থেমে নেই। তাঁরা ঘরে বসে গান গেয়ে, কথা বলে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছেন। কেউ নানাভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছেন গোপনে বা প্রকাশ্যে। দেশ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই এমনটা করেন তাঁরা। ভালোবাসা ছাড়া তাঁরা কিন্তু আর কিছু চান না।