উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ প্রয়োজন আকবরের

ঈদের পর থেকেই অসুস্থ গায়ক আকবর। তাঁকে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। সারা শরীরে ঘা, জ্বালাপোড়া, পটাশিয়াম ও লবণসংকট। এর ওপর হার্ট, কিনডিসহ একাধিক সমস্যায় নিয়ে তিনি সুনীল কুমার বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়েছেন। দুই সপ্তাহে বেশি সময় চিকিৎসা নেওয়ার পর এ গায়ক বুধবার বিকেলে বাসায় ফিরেছেন। এবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে চেন্নাই নিয়ে যাওয়া হবে। এ রকমটাই জানিয়েছে শিল্পীর পরিবার।

জানা গেছে, বর্তমানে আকবরের শরীর তুলনামূলক ভালো। হাসপাতালে ভর্তির শুরুর দিকে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারতেন না। তবে এখন অল্প অল্প হাঁটাচলা করতে পারছেন তিনি। তবে তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্য আগামী সপ্তাহে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে কিডনিজনিত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে। মেডিকেল ভিসার আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভিসা হাতে আসার কথা। চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য আকবরের মোটা অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এখন সেই অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তির পর আকবরের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছিল। খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সব সময় স্যালাইন দেওয়া থাকত। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি শরীরের জ্বালাপোড়ার জন্য অস্থিরতায় কাতরাতেন। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সার্বক্ষণিক দেখভাল করতেন। আকবরের স্ত্রী বলেন, পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরাও সব সময় আন্তরিকতা দিয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

হাসপাতালে ভর্তির পর আকবরের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছিল
সংগৃহীত
‘এই কদিন ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২০ হাজার টাকা ধার করে এনেছি, বাকি ২০ হাজার দিয়েছেন দুজন। টাকার কষ্টের কথা আর বলতেও ইচ্ছা করে না।’
কানিজ ফাতেমা, আকবরের স্ত্রী

গত বছরের শুরুর দিকে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হয় আকবরকে। তাঁর অসুস্থতার খবর পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এরপর তাঁর পরিবারকে ডেকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই টাকার মুনাফা হিসেবে ৩ মাস পরপর ৪৯ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তোলেন আকবর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গত বছর পাওয়া ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙতে পারলে চিকিৎসা ভালোভাবে চালিয়ে নিতে পারবেন বলে জানালেন আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। এরই মধ্যে সঞ্চয়পত্র ভাঙার আবেদনও করেছেন বলে জানান তিনি। কানিজ ফাতেমা বললেন, ‘এই কদিন ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২০ হাজার টাকা ধার করে এনেছি, বাকি ২০ হাজার দিয়েছেন দুজন। টাকার কষ্টের কথা আর বলতেও ইচ্ছা করে না। সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারলে আরও ভালোভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব। দেখি এখন কী হয়।’

‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দেশ–বিদেশে গায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন আকবর
সংগৃহীত

‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দেশ–বিদেশে গায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন আকবর। আগে তিনি যশোরে রিকশা চালাতেন। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা যশোরে। টুকটাক গান করতেন। তবে গান নিয়ে ছোটবেলা থেকে হাতেখড়ি ছিল না। আকবরের ভরাট কণ্ঠের গানের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন।

২০০৩ সালে যশোর এমএম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। সেবার বাগেরহাটের এক ভদ্রলোক আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপর তিনি আকবরকে নিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে চিঠি লেখেন।

যশোরে রিকশা চালাতেন আকবর
সংগৃহীত

এরপর ‘ইত্যাদি’র টিম আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছরই ‘ইত্যাদি’তে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, ফিরবে না সে তো আর কারও আকাশে’—কিশোর কুমারের এ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান তিনি। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি গায়ক পরিচয়ে পরিচিতি পান। পরে তাঁর গাওয়া ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র একটি গান তাঁকে আলোচনায় নিয়ে আসে। সেই থেকে আকবরের পরিবারের পাশে সব সময় থেকেছেন তিনি। আকবরের স্ত্রী বলেন, ‘স্যারের (হানিফ সংকেত) পরামর্শে আমরা চিকিৎসা চালিয়ে নিচ্ছি।’