এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার মতো নয়

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই কনসার্ট ও মঞ্চ অনুষ্ঠান আয়োজকদের ব্যবসা এখন হুমকির মুখে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ‘লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট’ ইন্ডাস্ট্রি এক হয়ে চালু করেছে ‘উই মেক ইভেন্টস’ নামের একটি কর্মসূচি। এর আওতায় আছেন কনসার্ট, সংগীত উৎসবের আয়োজক, অপেরা উৎসবের আয়োজকসহ বিভিন্ন ধরনের মঞ্চভিত্তিক অনুষ্ঠানের কান্ডারিরা, আছেন মাঠপর্যায়ে কাজ করা কারিগরি সহায়তা দেওয়া কুশলীরাও।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই কনসার্ট ও মঞ্চ অনুষ্ঠান আয়োজকদের ব্যবসা এখন হুমকির মুখেকোলাজ

২০২০ সাল বাংলাদেশের কনসার্ট ও অনুষ্ঠান আয়োজকদের জন্য সম্ভাবনার বছর হতে পারত। মুজিব বর্ষ ও আগামী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ঘিরে দেশজুড়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে বড় পরিসরের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান ও কনসার্ট আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সব সম্ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়েছে। অনুষ্ঠান আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির হিসাব করতে করতে বিপর্যস্ত। প্রত্যেকের ভাষ্য, এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

ইভেন্ট ও অ্যাক্টিভেশন ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক বাজার ছিল প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। কিন্তু করোনাকালের বিপর্যয়ের কারণে আমাদের বাজারে রীতিমতো ধস নেমেছে। বছরের শেষ নাগাদ আমরা অনুষ্ঠান আয়োজনে ফিরতে না পারলে এ বছর পুরো ইন্ডাস্ট্রির হাজার কোটি টাকার লোকসান হবে।
দোজা এলান, সাধারণ সম্পাদক, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন
আড়ংয়ের ৪০ বছর পূর্তির উৎসব আমরা আয়োজন করেছিলাম। তাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাড়াই বিভিন্ন পর্যায়ের কারিগরি ও সমন্বয়ের কাজে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন ৬০০ থেকে ৭০০ জন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁরা তো সবাই প্রায় কর্মহীন।
ফরহাদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্লুজ কমিউনিকেশনস

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই কনসার্ট ও মঞ্চ অনুষ্ঠান আয়োজকদের ব্যবসা এখন হুমকির মুখে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ‘লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট’ ইন্ডাস্ট্রি এক হয়ে চালু করেছে ‘উই মেক ইভেন্টস’ নামের একটি কর্মসূচি। এর আওতায় আছেন কনসার্ট, সংগীত উৎসবের আয়োজক, অপেরা উৎসবের আয়োজকসহ বিভিন্ন ধরনের মঞ্চভিত্তিক অনুষ্ঠানের কান্ডারিরা, আছেন মাঠপর্যায়ে কাজ করা কারিগরি সহায়তা দেওয়া কুশলীরাও। গত ১১ আগস্ট এ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ৭৫টি শহরের প্রায় ১ হাজার ৫০০ অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যালয় ও বড় বড় অনুষ্ঠানস্থলকে (ভেন্যু) লালবাতি জ্বেলে ‘রেড অ্যালার্ট’-এর প্রতীকী বার্তা দেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ‘গ্লোবাল অ্যাকশন ডে’ ঘোষণা দিয়ে একই কর্মসূচির আওতায় আবার বিশ্বের ২৮টি দেশের মঞ্চ অনুষ্ঠান আয়োজকেরা তাঁদের কার্যালয়কে লাল রঙে রাঙান।

২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে অনুষ্ঠান আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুজ কমিউনিকেশনস। এ কর্মসূচি নিয়ে কথা হয় ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁরা সর্বশেষ মার্চের প্রথম সপ্তাহে বড় পরিসরের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এরপর থেকে স্থবির হয়ে আছে তাঁদের সব ধরনের কার্যক্রম। তিনি বলেন, ‘আড়ংয়ের ৪০ বছর পূর্তির উৎসব আমরা আয়োজন করেছিলাম। তাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাড়াই বিভিন্ন পর্যায়ের কারিগরি ও সমন্বয়ের কাজে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন ৬০০ থেকে ৭০০ জন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁরা তো সবাই প্রায় কর্মহীন।’ ধারণা দিতে গিয়ে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে মঞ্চ অনুষ্ঠান ও কনসার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে এভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক। একই সুর ছিল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও স্কাই ট্র্যাকারের প্রধান নির্বাহী দোজা এলানের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘ইভেন্ট ও অ্যাক্টিভেশন ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক বাজার ছিল প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। কিন্তু করোনাকালের বিপর্যয়ের কারণে আমাদের বাজারে রীতিমতো ধস নেমেছে। বছরের শেষ নাগাদ আমরা অনুষ্ঠান আয়োজনে ফিরতে না পারলে এ বছর পুরো ইন্ডাস্ট্রির হাজার কোটি টাকার লোকসান হবে।’

নিজেদের কার্যালয়ে লাল বাতি জ্বালিয়ে রেখেছিল ব্লুজ
ফেসবুক থেকে
আমাদের আয়ের পথ বন্ধ, কিন্তু ব্যয় ঠিকই হচ্ছে; বরং দিন দিন সেটা বেড়েই যাচ্ছে। যে যন্ত্র ও সরঞ্জামগুলো অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যবহার করা হতো, সেগুলো গুদামজাত করে রাখতে গিয়ে একটা বড় অঙ্কের খরচ হচ্ছে। অচল থাকতে থাকতে সেগুলোর নানা যান্ত্রিক ক্ষতিও যাচ্ছে।
শেখ মনিরুল আলম, প্রধান নির্বাহী, কার্নিভাল

এশিয়াটিক ইএক্সপির গ্রাহকসেবা (ক্লায়েন্ট সার্ভিস) বিভাগের প্রধান খান মইদুল ইসলাম জানালেন আশার খবর। তিনি বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ বড় পরিসরে সামাজিক দূরত্ব মেনেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। এরপর আবার ৮ আগস্ট নতুনভাবে নতুন স্বাভাবিকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করি।’ তবে তিনিও মনে করেন, ছয় মাসের করোনা স্থবিরতায় দেশের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্র যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তা পূরণ হওয়ার মতো নয়। এই সময়ে যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, সেই পরিমাণ লোকবলও হারিয়েছে এই ক্ষেত্র। যাঁরা অনুষ্ঠান আয়োজনে মাঠপর্যায়ে কাজ করতেন, তাঁদের অনেকেই এই সময়ে জীবিকার জন্য পেশা বদল করে ফেলেছেন। তাই এখন স্বল্প পরিসরে আবার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও তা আগের মতো লোকবল নিয়ে করা যাচ্ছে না।

এদিকে অনুষ্ঠান আয়োজক ও বিজনেস সলিউশন প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান কার্নিভালের প্রধান নির্বাহী শেখ মনিরুল আলম বললেন আরেক সংকটের কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের আয়ের পথ বন্ধ, কিন্তু ব্যয় ঠিকই হচ্ছে; বরং দিন দিন সেটা বেড়েই যাচ্ছে। যে যন্ত্র ও সরঞ্জামগুলো অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যবহার করা হতো, সেগুলো গুদামজাত করে রাখতে গিয়ে একটা বড় অঙ্কের খরচ হচ্ছে। অচল থাকতে থাকতে সেগুলোর নানা যান্ত্রিক ক্ষতিও যাচ্ছে।’

প্রতিকূলতার শেষ নেই, নেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত। তাই অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, এক হয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে। সরকারি প্রণোদনা ও ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সহায়তা না পেলে এ বিপদ থেকে উত্তরণ করে বাজারে টিকে থাকা হবে আরও সংগ্রামের।