‘গানের মানুষেরা নতুন একটা জীবন শুরু করলাম’

শুক্রবার ঢাকার একটি কনসার্টে গাইছে ব্যান্ড শিরোনামহীনছবি : সংগৃহীত

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সব রকম জনসমাগম। ধীরে ধীরে সেসব আবার শুরু হচ্ছে। বিনোদন অঙ্গনে কনসার্ট বন্ধ ছিল বলে অসহায় দিন যাপন করছিলেন শিল্পী ও শ্রোতারা। শিল্পী ও কনসার্টসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রোজগার ছিল বন্ধ। অন্যদিকে বিষণ্ন হয়ে পড়ছিলেন সংগীতপ্রেমীরা। এ অচলাবস্থা কাটতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে কনসার্ট শুরু হয়েছে। নভেম্বরে পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক ও শিল্পীরা।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, বগুড়াসহ বাংলাদেশের অনেক জায়গায় কনসার্টের খবর ইতিমধ্যে জেনে গেছেন সবাই। ১ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় হয়ে গেল একটি জমজমাট কনসার্ট। উপচে পড়া দর্শক-শ্রোতার সামনে সেখানে গান পরিবেশন করে আর্টসেল, শিরোনামহীন, নেমেসিস, অ্যাভয়েড রাফা, স্যাভেজারি, এনকোর, আরেকটি রক ব্যান্ড। কেমন লাগল এত দিন পর মঞ্চে পরিবেশন করে?

রাজশাহীর একটি কনসার্টে গান গাইছেন শাফিন আহমেদ
ছবি : সংগৃহীত

শিরোনামহীনের দলনেতা জিয়া বলেন, ‘আমরা তো ভুলেই গিয়েছিলাম স্টেজে গান করার কথা। দেড় বছর স্টেজ থেকে দূরে। তারপর যখন আনুষ্ঠানিক শুরু হলো, সেটা ছিল দারুণ সূচনা। হলভর্তি দর্শক, করতালি আমাদের শক্তি ও সাহস দিয়েছে। আমি মনে করি, কোমা থেকে বের হয়ে আমরা গানের মানুষেরা নতুন একটা জীবন শুরু করলাম।’
দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভেঙে কনসার্ট শুরু হওয়াকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন মাইলসের ভোকাল ও গিটারিস্ট শাফিন আহমেদ। ব্যান্ড মাইলস এখনো পারফর্ম শুরু না করলেও শাফিন আহমেদ দুটি একক কনসার্টে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইনডোর ও আউটডোর—দুই ধরনের দুটি ভালো কনসার্টে গাইলাম। আমরা খুব উৎসাহিত, হঠাৎ করে অনেক ফোনকল আসতে শুরু করেছে, অনেকে খোঁজখবর নিচ্ছে। সবাই অনেক পরিকল্পনাও করছে। শুক্রবার ঢাকার আইসিসিবির অনুষ্ঠানও অসাধারণ হয়েছে। কনসার্টে দর্শকের আগ্রহ দেখে বোঝা যায়, কতটা অপেক্ষায় ছিল সবাই। শিল্পীরা সবাই দমবন্ধ অবস্থায় ছিল, স্টেজে উঠে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।’

শুক্রবার ঢাকার কনসার্টে গান গাইছে একটি ব্যান্ড
ছবি : সংগৃহীত

কনসার্টের বড় আয়োজক ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যদি আমারই কথা বলি, গেল ১৮ মাসে পরিবারের কথা ভেবে ঘর থেকে বের হইনি। আমাদেরও মনে হয়, একটু খোলা জায়গায় যাই, এন্টারটেইনড হই। এর মধ্যে শুরু হওয়া কনসার্টগুলো খেয়াল করলে দেখা যাবে, উপচে পড়া ভিড়। এই অঙ্গনের যে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যেভাবে শুরু হচ্ছে, আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আমরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকেও বড় আয়োজন করার চিন্তা করছি। গত এক সপ্তাহ অবশ্য বেশ ভালো সাড়া দেখছি।’
কনসার্ট শুরু হওয়ায় ভীষণ আনন্দিত আর্টিস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান মেলোডি এন্টারটেইমেন্টের কর্ণধার ওমর মির্জা জানালেন, স্টেজ শো আবার চাঙা হওয়ার পথে। তিনি বলেন, ‘অনেকে এই সেক্টর থেকে দূরে সরার কথা ভেবেছিল, আমার মনে হয়, তারা সিদ্ধান্ত বদল করবে। আর যারা অলরেডি পেশা বদল করেছে, তাদের আমাদেরই দায়িত্ব ফিরিয়ে আনা। এই সেক্টরকে এগিয়ে নিতে হলে তাদের সবাইকে নিয়েই করতে হবে। কারণ, আমি মনে করি, গত দেড় বছরে নতুন কোনো শিল্পী তৈরি হয়নি, কলাকুশলী তৈরি হয়নি; তাই ওদের নিয়েই এগোতে হবে।’

চট্টগ্রামের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ইভেন্টজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান ইসলাম জানালেন, ‘সপ্তাহখানেক আগেও ইভেন্ট নিয়ে একটা বড় অনিশ্চিত সময় পার করেছি। গত দেড় বছরে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। মনে হচ্ছে, আবার আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নানা ধরনের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছে। আশা করছি, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব।’
কনসার্ট শুরু হয়ে গেলেও আয়োজক, শিল্পী ও শ্রোতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সবাই। করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সংক্রমণ পুরোপুরি শূন্যে পৌঁছায়নি। তাই কনসার্টে অবশ্যই সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন সবাই। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পাই, সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে। আমাদের দেশে মার্চে এই ওয়েভ শুরু হয়। তবে এখন তো সংক্রমণ কমেছে।’