চাঙা হতে পারে গানের বাজার

বিশ্বকাপ ক্রিকেট রোজার ঈদের অডিও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। তাই তো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো তারকা শিল্পীদের চেয়ে নতুনদের গানই বেশি প্রকাশ করেছে। এবার সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের ধারণা, রোজায় ঝিমিয়ে থাকা অডিও বাজার কোরবানির ঈদে চাঙা হতে পারে। তাই তারা তারকা শিল্পীদের গানই বেশি প্রকাশের পক্ষে। পাশাপাশি নতুন শিল্পীদের গানও থাকবে। কয়েক বছরের মতো এবারও বেশির ভাগ গান প্রকাশিত হবে ইউটিউবে। কোনোটি লিরিক ভিডিও, আবার কোনোটি মিউজিক ভিডিও। তবে গানটিই মূল কথা।
একটা সময় ছিল রাস্তার দেয়ালে চোখ পড়লেই দেখা যেত শিল্পীদের পোস্টার। ক্যাসেটের দোকানের সামনে শোভা পেত নতুন শিল্পীদের ক্যাসেটের প্রচ্ছদ। এখন হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ভার্চ্যুয়াল জগতে চোখ পড়লেই দেখা যায় শিল্পীদের নতুন গানের পোস্টার, টিজার—বোঝা যায় ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। ঈদ অডিও বাজার চাঙা হওয়ার আভাস দিলেও শ্রোতাদের কাছে চমক রাখতে প্রিয় শিল্পীদের নাম প্রকাশ করতে চাইছে না প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বলছে, হাতে যেহেতু এখনো সময় আছে, অনেক শিল্পীর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তারকা শিল্পীরাই থাকবেন বেশি, জানিয়েছে কেউ।
সংগীতা, জি–সিরিজ, লেজার ভিশন, সিএমভি, ইমপ্রেস অডিও ভিশন, ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধারেরা জানিয়েছেন তাঁদের ঈদের গান নিয়ে। সাউন্ডটেক, সিডি চয়েজ, ঈগল মিউজিক সূত্রে জানা গেছে, তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কাদের গানে তাদের ইউটিউব মাতবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এ মাসের শেষ পর্যন্ত।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লেজার ভিশনের অন্যতম কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রোজার ঈদের ব্যবসা নিয়ে আমরা হতাশ ছিলাম। বিশ্বকাপ ক্রিকেট বেশ ভালো প্রভাব ফেলেছিল ঈদের গানে। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রিকেটকেন্দ্রিক গানে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল বেশি। তবে এবারের ঈদ নিয়ে আমরা অনেক বেশি আশাবাদী।’
ঈদুল আজহায় ব্যবসায়িক ভাগ্যটা বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ভালো থাকে, কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এই উপলব্ধি সিএমভির কর্ণধার শেখ সাহেদ আলীর। তাই কোরবানির ঈদে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি গান প্রকাশের ইচ্ছার কথা জানালেন তিনি। পাশাপাশি কিছু গানের ভিডিও প্রকাশ
করবেন তাঁরা।
ব্যবসাটা কীভাবে হয় জানতে চাইলে সাহেদ আলী বলেন, ‘আগে তো কত সংখ্যক সিডি বিক্রি করলাম, তা দিয়ে একটা হিসাব পেতাম। এখন তো আর সিডি কিংবা ক্যাসেট কোনোটাই নেই। আমাদের আয়ের বড় অংশ আসে মোবাইলের রিংটোন থেকে। এরপর আসে ইউটিউব ভিউ দিয়ে।’
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে আপাতত যেসব শিল্পীর নাম উঠে এসেছে, তাঁদের মধ্যে আছেন দিলরুবা গান, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী, এস ডি রুবেল, আসিফ আকবর, আঁখি আলমগীর, তাহসান, ন্যান্সি, কনা, কোনাল, এলিটা, আরফিন রুমী, ইমরান, কাজী শুভ, মিনার, তানজীব সারোয়ার, ঐশী, মাহতিম শাকিব, শেখ সাদী, লিজা উল্লেখযোগ্য। সংগীতা কর্তৃপক্ষও তাদের শিল্পীদের নাম প্রকাশ করতে চাইছে না। তবে এটুকু জানিয়ে রাখল, রোজার ঈদে যে কয়েকটি গান প্রকাশ করবে বলে তারা ভেবেছিল কিন্তু প্রকাশ করেনি, সে গানগুলো এবার ইউটিউবে প্রকাশ করবে।
এ বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুব একটা ভালো নয় বলে মনে করছেন ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের কর্ণধার ধ্রুব গুহ। তিনি বলেন, ‘সস্তা কথা ও সুরের বেশ কয়েকটি ভাইরাল গানের কারণে বাংলাদেশের বাংলা গানের ব্যাপারে ইউটিউবে শ্রোতাদের আগ্রহ খুব একটা দেখছি না। ভাইরাল গানের কারণে রুচিশীল গানের প্রতি শ্রোতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন।’
কয়েক বছর ধরে গান শোনার মাধ্যম বদলেছে। তাই নিজেদেরও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলেছে সাউন্ডটেক। তারাও গান প্রকাশ করছে নিজেদের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘এই প্ল্যাটফর্ম আমাদের গানের ডিসপ্লে সেন্টার, বিপণিবিতান ও আর্কাইভ। ইউটিউব সংগীতপ্রেমীদের জন্য গানের বিশাল শোরুম। শ্রোতারা আপনমনে সেখান থেকে ক্লিক করে সময়মতো শুনে নেন প্রিয় শিল্পীর প্রিয় গান।’
প্রযোজন প্রতিষ্ঠানের বাইরেও অনেক শিল্পী তাঁদের নিজস্ব ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম থেকে সামনের ঈদের জন্য গান প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোন কোন শিল্পীর কোন কোন গান আসবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।