চেরিগুলো এন্ড্রু কিশোরের কথাই মনে করিয়ে দেয়

এন্ড্রু কিশোর
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী নগরের একটি সড়ক বিভাজকজুড়ে ফুটে আছে পাগলকরা চেরিফুল। সাদা, গোলাপি ও বেগুনি রঙের চেরি যেন কথা বলছে! মৃদুমন্দ বাতাসে গান ভাসিয়ে দিচ্ছে ‘ওগো বিদেশিনী তোমার চেরিফুল দাও...। আর এর গায়ক এন্ড্রু কিশোর ওই সড়কের কাছাকাছি একটি কবরে শুয়ে আছেন। আজ বুধবার ৬ জুলাই তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। নগরের ফায়ার সার্ভিসের মোড় থেকে ভেড়িপাড়া পর্যন্ত এই সড়কের অসম্ভব সুন্দর এই চেরিগুলো যেন এই প্লে-ব্যাক সম্রাটের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

এন্ড্রু কিশোরের বাল্যকাল কেটেছে রাজশাহীতে। রাজশাহীতেই ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে তার সংগীতের হাতেখড়ি। এ জন্য রাজশাহীর প্রতি তাঁর টান ছিল অন্যরকম। ফিরে ফিরে তিনি রাজশাহীতে ছুটে আসতেন। ‘ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদ’–এর সঙ্গে কাজ করেছেন। রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিল্পীদের তুলে আনার জন্য বছরে তিন মাস অন্তর তাঁদের নিয়ে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম জানান, বুধবার এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁরা একটি এতিমখানায় শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ করবেন। সন্ধ্যায় ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদে তাঁর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

এন্ড্রু কিশোরের ভগ্নিপতি চিকিৎসক প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস জানান, মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর ছেলে জয় এন্ড্রু সপ্তক ও স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু ইতি ইতিমধ্যে রাজশাহীতে এসেছেন। বুধবার বিকেল চারটার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁরা কবরস্থানে যাবেন। পৌনে ছয়টার দিকে চার্চে আসবেন। সেখানেই সমাজের লোকজন থাকবেন। তাঁদের নিয়ে একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে।

এন্ড্রু কিশোরের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় অবস্থিত চার্চ অব বাংলাদেশের খ্রিষ্টান কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। এই কবরস্থানেই রয়েছে তাঁর বাবা ক্ষিতিশ বাড়ৈ ও মা মিন বাড়ৈর কবর।

বরেণ্য সংগীতশিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেছিলেন, ‘এই গুণী শিল্পীর জন্য আমাদের যা করণীয়, তা করা অবশ্যই উচিত। এন্ড্রু কিশোরের নামে শুধু রাজশাহী নয়, ঢাকাতেও সংগীতচর্চাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করা যেতে পারে। এ জন্য করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমি ঢাকায় গিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলব। আমি মেয়র হিসেবে রাজশাহীতে এন্ড্রু কিশোরের নামে একটি সড়কের নামকরণ ও একটি সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করব। এসবের কিছুই করা হয়নি।’

২০২০ সালের ৬ জুলাই রাজশাহী নগরের মহিষবাথান এলাকায় বোন শিখা বিশ্বাসের বাসায় এন্ড্রু কিশোর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।