ছায়ানটে লোকগানের জমজমাট আসর

ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে বার্ষিক লোকসংগীতানুষ্ঠানে সমবেত পরিবেশনা। ছবি: সংগৃহীত
ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে বার্ষিক লোকসংগীতানুষ্ঠানে সমবেত পরিবেশনা। ছবি: সংগৃহীত

আয়োজনটা শহুরে দর্শকের জন্য। মাটির গন্ধ সব পরিবেশনায়, যেভাবে মূল গান গাওয়া হয়, সেভাবেই গাওয়া হলো। লোকগানের অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জায় ছিল লোকজ বিভিন্ন সামগ্রী। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল পাড়াগাঁয়ের আঙিনায় গান হচ্ছে। দর্শক শুনছে উঠানে বসে।

পৌষের উনিশতম সন্ধ্যায় নির্বাচিত পাঁচ গীতিকবির গান নিয়ে ছায়ানট আয়োজন করেছিল তাদের বার্ষিক লোকসংগীতানুষ্ঠান। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তনে এই গানের অনুষ্ঠানের শুরুতে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের লোকসংগীত বিভাগের শিক্ষক তপন মজুমদার লোকগান নিয়ে নিয়ে কথা বলেন। এবারের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয় কবি জসীমউদ্‌দীনকে। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সম্মেলক কণ্ঠে জসীমউদ্‌দীনের লেখা ‘এই না রূপে নয়ন দিয়ে’ গানের পরিবেশনা দিয়ে। পরের গানটিও জসীমউদ্‌দীনের লেখা। সরদার মো, রহমাতুল্লা শোনান ‘তুমি কাইন্দো না ওরে আমার’ গানটি। একে একে আরও তিনটি গানের একক পরিবেশনা হয়। ‘তুমি আমার বন্ধু লাগো গানটি শোনান পলি রায়। ‘ও সুজন বন্ধু’ শোনান সঞ্চিতা বর্মণ। পরে শুরু হয় মনমোহন দত্তের গানের পালা। শুরুতে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘জগৎ জননী জাগো’ গানটি।

জসীমউদ্‌দীন ও মনমোহন দত্ত ছাড়া এদিন দুরবিন শাহ, আবদুল হালিম ও বাউল চান মিয়ার লেখা গান পরিবেশিত হয়। একক সংগীত পরিবেশন করেন সরদার মো, রহমাতুল্লা, পলি রায়, সঞ্চিতা বর্মণ, মহিতোষ কুমার মণ্ডল, মো. মানিক, মুকুল মজুমদার, নারায়ণ চন্দ্র শীল, জোনাকী রানী শীল, আবুল কালাম আজাদ, এরফান হোসেন, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, নাজমুল আহসান, সুপ্রিয়া শাহনেওয়াজ ও মো. খায়রুল ইসলাম। তাঁরা শোনান ‘মন্দিরে দেবতা নাই’, ‘আমি তোমার পোষা পাখি’, ‘রজনী হোসনে অবসান’ ‘নির্জন যমুনার কূলে’, ‘আজ রাধার শুভদিন’, ‘আর কী শ্যাম আসিবে গো’ ‘আজ রাধার শুভদিন’ ইত্যাদি। সম্মেলক গানের মধ্যে ছিল দুরবিন শাহের ‘কাইন্দো না রাই কমলিনী’, আবদুল হালিমের ‘তোরা আয়রে চাষি ভাই’, বাউল চান মিয়ার ‘আর কী শ্যাম আসিবে গো।’

ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে বার্ষিক লোক সংগীতানুষ্ঠানে একক গান পরিবেশন করছেন ছায়ানটের শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত
ছায়ানট ভবন মিলনায়তনে বার্ষিক লোক সংগীতানুষ্ঠানে একক গান পরিবেশন করছেন ছায়ানটের শিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনায় তবলায় ছিলেন অলোকেশ আধিকারী ও বাদল চৌধুরী। বাঁশি বাজিয়েছেন মো. মুনিরুজ্জামান। দোতরায় ছিলেন রতন কুমার রায়, ঢোল বাজিয়েছেন দশরথ দাস, মন্দিরা বাজিয়েছেন প্রদীপ কুমার রায়। খায়রুল ইসলামের গাওয়া বাউল চান মিয়ার রজনী হোসনে অবসান গানটির পর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

একক ও দলীয় পরিবেশনা চলে পর্যায়ক্রমে। ছবি: সংগৃহীত
একক ও দলীয় পরিবেশনা চলে পর্যায়ক্রমে। ছবি: সংগৃহীত

ছায়ানট প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ওয়াহিদুল হক মনে করতেন, দেশ-গাঁয়ের সংগীতসম্পদের প্রত্যক্ষ পরিচয় পেলে সংগীত বিষয়ে অসম্পূর্ণ ধারণার অধিকারী বাঙালি অর্জন করবে স্বকীয় সংস্কৃতির পূর্ণ জ্ঞান। প্রয়োজন নিজের গানের শিকড়ের সঙ্গে পরিচয়। দীর্ঘদিন ধরেই অনেক শিল্পী দেশ-গ্রাম ঘুরে ঘুরে ‘লোকগান’ সংগ্রহ করে নিজের মতো করে গাইছেন। পুরো গান আমরা পাই না, পাই অর্ধেকটা। মূলত ওই আধাআধি ব্যাপারটা থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াসেই ১৪১৩ সাল থেকে ছায়ানট আয়োজন করে আসছে ‘দেশ ঘরের গান’-এর। পাশাপাশি প্রতিবছর শীতে আয়োজন করা হয় বার্ষিক লোকসংগীত অনুষ্ঠানের।