তরুণ শিল্পীদের কণ্ঠে লতার গান

হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে উপমহাদেশীয় সংগীতের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের ইহজাগতিক জীবনের ইতি ঘটে। সংগীতের এই মহাতারকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ শুক্রবার অন্যরকম এক আয়োজন করে হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) বাংলাদেশ। ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে, আ ট্রিবিউট টু লতা মঙ্গেশকর’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশের দুই তরুণ কণ্ঠশিল্পী নন্দিতা ও রাশেদ এবং ভারতের অন্বেষা দত্ত।
লতা মঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জানানোর ওই অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকার পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুম সেজেছিল ভিন্ন সাজে। একনজরে লতা মঙ্গেশকরের জীবন ও কর্মের সব অর্জনের খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হয় সেখানে। আমন্ত্রিত অতিথিরও তা ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন আর স্মৃতিকাতর হচ্ছিলেন। এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমানের কথায়ও তেমনটাই বোঝা গেল।

এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘স্মৃতিকে উসকে দেওয়া, স্মৃতি রোমন্থন করা এবং একই সঙ্গে নতুন কিছু স্মৃতি তৈরি করার প্রয়াসে আমাদের এই আয়োজন। আমি নিশ্চিত, সাত দশক ধরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গান নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কণ্ঠে শুনতে শুনতে সবারই কোনো না কোনো স্মৃতি মনে পড়ে যাবে। মনে পড়বেই না বা কেন, ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রান্ত করে, আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে সংগীতের মূর্ছনা দিয়ে যে গেছেন তিনি।’

নন্দিতার কণ্ঠে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘একবার বিদায় দে মা... ঘুরে আসি’ গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দুটি গানের পর যোগ দেন কণ্ঠশিল্পী রাশেদ। এরপর তাঁরা দুজন একসঙ্গে বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। রাশেদ ও নন্দিতার পর উপস্থাপকের ডাকে মঞ্চে গান শোনাতে আসেন ভারতের সারেগামাপাখ্যাত কণ্ঠশিল্পী অন্বেষা দত্ত। গানের ফাঁকে কথা প্রসঙ্গে তিনি লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর স্মৃতিচারণাও করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই প্রজন্মের একজন শিল্পী হয়ে সুরের দেবী লতা মঙ্গেশকরকে সামনাসমানি দেখার সুযোগ পেয়েছি, গান শোনাতেও পেরেছি। তিনি আমার গাওয়া গানের প্রশংসাও করেছেন। তাঁর মতো একজন শিল্পী আমার গান শুনেছেন, এটাই তো বড় ব্যাপার, সেখানে প্রশংসা করাটা আমার জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি!’

লতা মঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এইচএসবিসি আয়োজিত সংগীতানুষ্ঠান ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’ অনুষ্ঠানে লতা মঙ্গেশকরের গান পরিবেশন করছেন ভারতের শিল্পী অন্বেষা দত্ত।
ছবি: দীপু মালাকার

‘নিশিদিন নিশিদিন’ গানের মধ্য দিয়ে অন্বেষা তাঁর পরিবেশনা শুরু করেন। একে একে আঠারোটির মতো গান গেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব’, ‘কে যেন গো ডেকেছে আমায়’, ‘ন্যায়না বরষে রিমঝিম’, ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘এক প্যায়ার কা নাগমা হ্যায়’, ‘প্রিয়তম কী লিখি তোমায়’, ‘লাগ যা লাগে’, ‘আপ কি নাজরু নে স্যামঝা’, ‘আজিব দাস্তা হ্যায় ইয়ে’ ও ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’। অন্বেষার গানের ফাঁকে লতা মঙ্গেশকরকে নিয়ে ভারতের বিভিন্ন শিল্পীর ভিডিও বার্তা দেখানো হয়।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ত্রপা মজুমদার। এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান ছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, সংস্কৃতিকর্মী, কূটনৈতিক, সাহিত্যিক,সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল লতা মঙ্গেশকরের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে। তরুণদের কণ্ঠে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গান ছুঁয়ে গেছে তাঁদের।