নজরুল বন্দনা ছড়িয়ে পড়েছে

সম্মেলক কণ্ঠে গান দিয়ে শুরু হয় ছায়ানটের নজরুলজয়ন্তী। ছবি: প্রথম আলো
সম্মেলক কণ্ঠে গান দিয়ে শুরু হয় ছায়ানটের নজরুলজয়ন্তী। ছবি: প্রথম আলো

ছুটির দিনের সকাল। আগের সারা রাত বৃষ্টির কারণে বেশ ঠান্ডা ভাব বাতাসে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিশাল প্রতিকৃতি আর ফুল দিয়ে সাজানো ছায়ানট ভবনের রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্র। এমন পরিবেশে বেশ লোক জমেছে সেখানে। নজরুলজয়ন্তী ঘিরে তাদের এই আগমন।

অনুষ্ঠান শুরু সম্মেলক কণ্ঠে গান দিয়ে। ‘জাগো অমৃত-পিয়াসি চিত আত্মা অনিরুদ্ধ কল্যাণ প্রবুদ্ধ’ গান দিয়ে উদ্বোধনের পর নজরুল কথনে সবাইকে নজরুলের দর্শন জীবনে প্রতিফলনের আহ্বান জানান ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি বলেন, ‘জাতীয় জীবনে নজরুলের অবদান অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনে নজরুল ছিলেন আমাদের প্রেরণার উৎস। তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনার রচনাগুলো আমাদের সুন্দর মানবিক জীবনের পথ দেখায়। বাঙালি হয়েও তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বনাগরিক। তাঁর সংগীত এতটাই সমৃদ্ধ যে আমাদের শুদ্ধ সংগীতচর্চায় অনুপ্রাণিত করে।’

এরপর সুপ্তিকা মণ্ডল ‘আকাশে ভোরের তারা মুখ পানে চেয়ে আছে’, মনীষ সরকার ‘ওগো অন্তর্যামী, ভক্তের তব শোন শোন নিবেদন’, মোহিত খান ‘তুমি যতই দহনা দুখের অনলে আছে এর শেষ আছে,’, ঐশ্বর্য সমাদ্দার ‘খেলে নন্দের-আঙিনায় আনন্দ দুলাল’, লায়েকা বশির ‘অন্তরে তুমি আছ চিরদিন’, তানভীর আহমেদ ‘কালেমা শাহাদাতে আছে খোদার জ্যোতি’, শ্রাবন্তী ধর ‘ভাইয়ের দোরে ভাই কেঁদে যায় টেনে নে না তারে কোলে’, বিটু কুমার শীল ‘স্বদেশ আমার! জানি না তোমার শুধিব মা কবে ঋণ’ গানগুলো গেয়ে শোনান। নজরুল রচনা থেকে পাঠ করেন সুমনা বিশ্বাস ও জয়ন্ত রায়। সবশেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

নজরুলসংগীত পরিবেশন করছেন ছায়ানটের এক শিল্পী। ছবি: প্রথম আলো
নজরুলসংগীত পরিবেশন করছেন ছায়ানটের এক শিল্পী। ছবি: প্রথম আলো

আজ ২৫ মে কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তী। সকালে কবির সমাধিতে ফুল দেওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় উদ্‌যাপন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সরকারিভাবে বাংলাদেশে নজরুলের স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। ত্রিশালে তিন দিনব্যাপী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে বেলা ৩টায়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ২৭ মে পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। জানা গেছে, এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ত্রিশালে বইছে উৎসবের আমেজ। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নজরুল জয়ন্তী উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন বলেন, ‘নজরুলের আদর্শ এবং বার্তাকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে এ অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।’

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে ১৮৯৯) কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। বাবা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। জীবিকার দায়ে লেটোদলের বাদক, রেল গার্ডের খানসামা, রুটির দোকানের শ্রমিকের কাজে পেরিয়ে গেছে তাঁর শৈশব-কৈশোর। ঘটনাবহুল ছিল তাঁর জীবন। কাজ করেছেন সৈনিক হিসেবে। করেছেন সাংবাদিকতা।

বাংলা সাহিত্যের ভুবনে নজরুল ছিলেন এক স্বতন্ত্র স্বরের স্রষ্টা। বাংলা গানের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান স্মরণযোগ্য। উত্তর ভারতীয় রাগসংগীতের দৃঢ় ভিত্তির ওপর রচনা করেছিলেন আধুনিক বাংলা গানের সৌধ। প্রবর্তন করেছিলেন বাংলা গজল।